। সত্যি ঘটনা।


ঝনঝন করে কোথাও কাঁচ ভাঙলো। চারদিকে চিৎকার,
মার, মার, শালাদের মাআআর....
ব্যাপারটা কি? জায়গাটার দাহ্যতা নিয়ে কুখ্যাতি আছে,
ফোস্কা পড়ে মাঝে মাঝেই সাম্প্রদায়িক আঁচে,
তবে আগ্নেয়গিরি হয়ে ফাটেনি সাম্প্রতিককালে...
দুম দুম! বোমা এসে ফাটলো হাসপাতালের দেওয়ালে।
হাসপাতাল...মানে কয়েকটি ঘরের আউটডোর ও বালখিল্য চিকিৎসা,
তবু, এ অঞ্চলের বিস্তীর্ণ হিন্দু মুসলমানের এটাই প্রাথমিক ভরসা,
সবেধন অ্যাম্বুলেন্স আছে কাছের শহরে হাসপাতালে নিতে,
( এই গাড়িটিই কুশীলবদের মঞ্চ আজকের গল্পটিতে)।
গল্প মানে, ঠিক গল্প না, আপাদমস্তক সত্যি ঘটনা,
অতি সম্প্রতি ঘটা, এক্কেবারে ঘোড়ার মুখে শোনা।


(দিনকাল ভালো নয়, নাম তাই কল্পনা, ওরা ওই অঞ্চলবাসী
সবটা প্রকাশ পেলে ওই বেচারীরা বিনাদোষে হয়ে যাবে দোষী)


টিমটিমে হাসপাতালে তখন ডাক্তার ছাড়া দুই দম্পতি,
জুবেদা বিবি আর করিমুদ্দিন, শংকর আর আরতি
জুবেদা আর শংকর, দুজনেই শহরের হাসপাতালে যাবে,
কিন্তু , বাইরে দাঙ্গায় সব বন্ধ, সেটা সম্ভব হবে কিভাবে?
ডাক্তারবাবুকেও সেইদিনই ফিরে যেতে হবে শহরে,
গাড়ি তো দূরের কথা, ঠেলাগাড়ি চলবেনা এই ভাঙচুরে।
একটু বাদে, চেঁচামেচি যেন একটু স্তিমিত মনে হলো
কিছুটা শান্ত পরিস্থিতি, মোবাইলও খবর ওগড়ালো।
হয়তো যাওয়া যাবে এই গোলমালে অ্যাম্বুলেন্সে গেলে,
ড্রাইভারও রাজী হলো, সৌভাগ্যবশত সে ওই শহরেরই ছেলে।
সতর্কতা হিসেবে ঝুটমুট স্যালাইন দিলেন ডাক্তার জুবেদাকে
মানে বিনা সুঁইয়েই নলসহ ঝুলিয়ে দিলেন বোতলটাকে।

ইনসাল্লাহ আর দুগগা দুগগা বলে রওনা হলো গাড়ি,
রাস্তা শুনশান, ঝড় আসবে, বোধহয় আভাস তারই।
একটু এগোতেই জনতা পথ আটকালো অ্যাম্বুলেন্সের,
ডাক্তার নজরে বুঝলেন এই জটলা উত্তেজিত মুসলিমের।
ইশারায় চাদরের তলায় ঢুকে গেলো আরতির শাঁখা
জনতার নজরে তখন স্যালাইন আর জুবেদার বোরখা
কাজেই হিংস্র জনতা জমায়েত গেলো রাস্তা থেকে সরে,
এগোতেই লাঠিসোঁটা নিয়ে আরেকটা ভিড় সামনের মোড়ে।
এরা হিন্দু, ডাক্তার বুঝলেন দূরের থেকেই আওয়াজে
আরতির শাঁখাপলা পরা হাত এইবার লেগে গেলো কাজে।
হাত জানলার থেকে বের করে নাড়াতে লাগলো আরতি,
রাস্তার বাধা সরতেই গাড়ি জটলা পেরোলো দ্রুতগতি,
শায়িত জুবেদাকে কেউ আবার না ফেলে যেন দেখে,
কিন্তু, পরের বার আর এড়ানো গেলোনা সেই দুর্ভাগ্যকে।


এক তেড়িয়া হিন্দু জনতা কিভাবে বোরখা করলো নজর,
অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে ধমক, হুমকি , গালাগালি অতঃপর।
ভেতরে ঠকঠক কাঁপছে জুবেদা, আরতি হাত ধরে আছে তার,
অদ্ভুত শান্ত গলায় রক্তলোভী জনতাকে আবেদন জানালেন ডাক্তার,
' ইনি রোগী, হাসপাতাল পৌঁছানো তাড়াতাড়ি দরকার খুব,
আপনারা কি বাধা দেবেন?' হঠাৎই চারদিক একেবারে চুপ,
এক নেতা গোছের লোক বললেন, ' অ্যাই, গাড়ি ছেড়ে দে '
জনতা দুভাগ হলো, দুই নারী ভেতরে সশব্দে চলেছে কেঁদে,
করিমুদ্দিন আর শংকর  ঠাণ্ডা হাতে হাত রেখে বসে আছে
অ্যাম্বুলেন্স ফের চালু হতে সক্কলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।
এর কিছুক্ষণ পরেই সবাই নিরাপদে শহর পৌঁছে যায়,
আরেকটা ভাড়াগাড়ি চারজনকে নিয়ে রওনা হয় কলকাতায়।


পাঠক , এ ঘটনা ঘটে গেছে সপ্তাহ হয় নি এখনো,
সত্যি ঘটনা এটা, সেকুলার ইত্যাদি কল্পনা নয় এটা কোনো।
এ ঘটনা ঘটে গেছে, ঘটছেও অবিরত আমাদের দেশে,
জানিনা হে, কত মুখে চুনকালি লাগবে এ জাতিবিদ্বেষে।
কোনটা বলো তো তুমি, জুবেদা ,আরতি, করিম না শংকর?
নাকি তুমি জনতা, ধর্মের ভূত চাপা তোমার ওপর?
এখনো হয় নি শেষ সব, তাই বেঁচে ওরা ফিরে গেছে নিরাপদে বাড়ি,
আরেকটা কার্তিক কিংবা জুনেইদকে চাইলে এখনো বাঁচাতে আমরা পারি।


আর্যতীর্থ