। রিপোর্ট।


অতিমারী শেষ হওয়ার পরে,
  ধনীতম ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞেস করলেন জনৈক রিপোর্টার,
‘স্যার, এপিডেমিক নিয়ে আপনার বক্তব্য কী?
ব্যবসায়ী তুমুল হাততালি দিয়ে বললেন,’ চমৎকার, চমৎকার!
ওই সময়ে সস্তা শ্রমিক,
জলের দরে কারখানা,
নজরদারিহীন লাভের দৌলতে
বেশ কয়েক হাজার কোটি আমদানি ঘটেছে
আহা, আবার যে কবে দেবেন ভগবান এমন ছপ্পর ফুঁড়ে ,
কে জানে!’


রিপোর্টার বললেন,
‘তবে যে শুনেছি এত লোকের কাজ চলে গেছে,
এতগুলো ঘরে নিভে গেছে চুল্লি,
এত কোটি ঘরে আজ খিদের অন্ধকার অমাবস্যার মতো থিতু?’


ব্যবসায়ী হেসে উঠলেন আবার ।
‘ ওই খিদেটাই তো মূলধন !
সেনসেক্সের ওস্তাদ টিম জিডিপির ওঁচা দলটাকে গো-হারান হারিয়ে দিয়েছে,
সব লক্ষ্মীর ভাঁড় ভেঙে ব্যাঙের আধুলিগুলো
কাচিয়ে কুচিয়ে এসে গেছে আমার হাতে।
এর থেকে ভালো ব্যবসা আর হয় না,
খিদে কিনে নিলে মানুষকে দিয়ে যা খুশি করানো যায়।
এই তুমি চা কফি নেবে , না ঠাণ্ডা?’


রিপোর্টার বললেন , জল।


রিপোর্টারটি এরপর গেলেন দেশের ক্ষমতাসীন মুখ্যের কাছে।
প্রশ্ন রাখতেই তিনি ভুরু কুঁচকে বললেন,
‘বিরোধী দলের থেকে টাকা খেয়েছো নাকি?
এপিডেমিক আবার কোথায় পেলে,
ছোট্টমতন একটা জ্বর,
তাকে তো কবেই তাড়িয়ে দিয়েছি।
আমরা টিকায় একনম্বর,
রোগনির্ণয়ে এক নম্বর,
রোগসারাইয়ে এক নম্বর,
অর্থনীতিতে এক..না না ওটা বোধহয় দুই কিংবা তিন।’


রিপোর্টার বললেন, ‘ ওই যে সার সার চিতা,
একটু বাতাসের জন্য হাসপাতালের বাইরে হাহাকার,
নদী বয়ে ভেসে যাওয়া জ্বরোরোগীর লাশ, ওগুলো তবে কী?’
প্রমুখ বললেন ‘চক্রান্ত।
রোজ কত মরে এই দেশে কোনো ধারণা আছে?
তাদেরই কটা’কে সাজিয়ে কোমর্বিডিটিগুলোকে জ্বর বানিয়েছিলো ওরা,
সব ধরা পড়ে গেছে।
কটা দিন যেতে দাও,
এসব বিকৃতি ঠিক করে সত্যি ইতিহাস সামনে  আনছি।’
রিপোর্টার কি একটা বলতে গেলেন।
প্রধান হেসে বললেন,
‘অমুক নথির সাথে তমুকটা লিংক করিয়েছো?
না করলে নাগরিক সুবিধার থেকে বঞ্চিত হবে।
যাও যাও.. তবে যাওয়ার আগে নতুন প্রাসাদটা ঘুরেফিরে দেখে যেও।’


রিপোর্টার বললেন, আচ্ছা।


রিপোর্টার বেরোলেন।
আজকের মধ্যে অ্যাসাইনমেন্টটা জমা দিতে পারলে তবে তাঁর মাইনে ঢুকবে।
বাবা কোভিডে গেছেন হাসপাতালের বাইরে হাঁপাতে হাঁপাতে,
বোনের  চাকরিটা গেছে মারীর আবশ্যিক ছাঁটাইয়ে।
তবে পেটের চাগাড় দেওয়া খিদের কথা ভেবে,
এইসব তিনি লিখতে যাবেননা বোকার মতো।


তাঁকে যে বেঁচে থাকতে হবে।
তাঁর স্বদেশ যেমনভাবে আছে।


আর্যতীর্থ