। ওরা আসছে।
স্রষ্টা ভীষণ মুশকিলে পড়েছেন।
অকাট্য , অদাহ্য, অক্ষয় ও অনাবেগী বলে একশো ভাগ গ্যারান্টি দিয়ে দ্বাপরে যে প্রচার করেছিলেন,
কলিযুগে এসে বুঝছেন আত্মা অতটা টেঁকসই নয়।
জীবনের পাক ঘুরে ইদানিং তাঁর কাছে যে সব আত্মা পৌঁছাচ্ছে,
তাদের অনেকেরই অবস্থা সঙ্গীন।
কদিন আগেই অল্প কদিন মর্ত্যে থাকা এক আত্মার অশরীরে বিঁধে থাকা সূঁচ তাকে চমকে দিয়েছিলো,
নিওলিথিক যুগ থেকে অত্যাচার কিছু কম দেখেননি তাঁর আত্মঘাতী সন্ততিদের দৌলতে,
তবু এর আগে সে আঘাত আত্মাকে আহত করেনি কখনো।
থরথর করে কাঁপা এক বালিকার আত্মা এসেছিলো,
অবয়বহীন অস্পষ্টতা আড়াল করতে পারেনি তার পার্থিব শরীরের অসংখ্য আঘাত,
যোনিপথ বিদীর্ণ হয়েছিলো তার যে অত্যাচারে, শিউরে উঠেছিলেন তা ধ্যানযোগে দেখে।
এরকম রোজ তাঁর কাছে স্তূপ হয়ে জমা হয় করুণ আত্মার ভিড়,
যাদের কারো মর্ত্যের আয়ু বারোর বেশি নয়।
এবং অবশ্যম্ভাবীভাবে , তারা সব নারী, অন্তত বড় হতে দিলে তাই হতো।
তাদের দিকে হাত বাড়ালেই তারা সভয়ে ছিটকিয়ে যায়,
এক শব্দবিহীন গোঙানিতে ছটফট করে তারা বিলীন হতে চায় কোনো অনন্ত আঁধারে,
যেখানে স্রষ্টাও তাদের স্পর্শ করতে পারবেন না।
এদের ফের মরলোকে পাঠানোর চিন্তা করাও অন্যায়, অথচ ক্রমাগত নারী কমে যাচ্ছে সেখানে।
নারী, তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। যাকে তিনি ফুলের পেলবতা দিয়েছেন, পাখীর মতো উড়ানের ক্ষমতা দিয়েছেন, ধরিত্রীর মতো সহিষ্ণু করেছেন, আকাশের মতো বজ্র বিদ্যুৎ মেঘের ধারক করেছেন।
সেই নারীদের কম্পিত খণ্ডিত রক্তাক্ত আত্মাগুলোর সামনে তাঁর তাবত ক্ষমতাকে অসহায় দেখাচ্ছে।
স্রষ্টা তাঁর তৃতীয় নয়ন খুললেন। আগ্নেয়গিরির লাভা থেকে সব ছাই করে দেওয়া উত্তাপ নিলেন। ভূমিকম্প থেকে নিলেন ভিত নড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা। হারিকেন থেকে নিলেন তছনছ করার শক্তি, সুনামির থেকে নিলেন সব ধ্বংস করার আক্রোশ, বন্যার থেকে নিলেন ভাসিয়ে নেওয়া স্রোত। তারপর আচম্বিতে পাগলের মতো ভরে দিতে লাগলেন তাদের প্রতি কন্যাভ্রুণের আত্মায়।
তারপর আকাশ বাতাস মথিত করে অপার্থিব গর্জনে দশদিক কাঁপিয়ে বলে উঠলেন,
‘ সাবধান হও আগামী! ওরা আসছে!’
আর্যতীর্থ