। কবি ও রাষ্ট্র।


রাষ্ট্রের নির্মাণ হবে, রাজা তাই ব্যস্ত ভীষণ,
কাকে কোন কাজ দিতে হবে, তাঁর ওপরে সব দায়ভার
মন্ত্রী কোটাল পাত্র মিত্র সেনাপতি,
বিচারক, স্থপতি ও বৈদ্য কে হবে,  সারাদিন ধরে চলে সেই কারবার।


সে সময়ে এলো লোকটা। যে কোনো ভিড়ে মিশে যেতে পারে,
এমন চেহারা,
মানে কোনো বৈশিষ্ট্য নেই, শুধু চোখদুটো ছাড়া।
দৃষ্টি যেন শুষে নিতে চাইছে প্রতিটা মুহূর্ত যা সাজিয়ে রেখেছে,
বাকিরা যা দেখে, এ লোকটা মনে হয় সমকাল তার থেকে বেশি  দেখেছে।


অভিবাদন নেই, আদবকায়দা নেই , সটান লোকটা যায় রাজার সমীপে।
রাজা ধুরন্ধর লোক, তাবত রাজ্য তাঁর সুকঠিন গ্রিপে,
বিরোধী বা বিদ্রোহী দূর থেকে স্রেফ শুঁকে নির্ণয় করা তাঁর বামহাতের খেলা,
তিনি স্থির করে  দেন কোথায় শ্মশান হবে কোনখানে মেলা।
লোকটা বেমক্কা হেঁটে চলে গিয়ে সেই রাজামশাইয়ের কাছে,
কথায়  উদাসীনতা মেখে মৃদু স্বরে বলে, ‘ আমার জন্য কি কোনো কাজ রাখা আছে?’


‘কি কাজ জানো হে তুমি? বিশদে বলতে পারো কিসে ওস্তাদি?’
লোকটা ঈষৎ হেসে সলজ্জ মুখে বলে, ‘শব্দকে ছন্দতে বাঁধি।’


‘সে আবার কি? খায় না মাথায় দেয়? দাম কত পাওয়া যায় তাতে?’
‘মূল্যহীনের থেকে অমূল্য হতে পারে, ভাষা খুঁজি যাপনের যন্ত্রণাতে।’


‘যন্ত্রণা? তার মানে কষ্টকে খোঁজো? সুখের ফ্লেক্সে বুঝি ঘুণপোকা গোনো?
এইসব বেয়াদপি চলে না এ রাষ্ট্রে, দুই কান খুলে সেটা ভালো করে শোনো।
চাটুগান পারো? চারদিকে সব ভালো, সকলই কুশল, সে মর্মে আছে কিছু লেখা?’


‘পাওয়া না পাওয়ার কথা লিখি বটে, তবে মনগড়া নয়, সত্যের কাছে দেওয়া আছে মুচলেকা।’


‘সত্যটা কি শুনি? আমার রাষ্ট্র এটা, সবদিকে আমারই কানুন,
বিজ্ঞপ্তি দেখো নি কি? ‘ সব কিছু ভুলে শুধু রাজাকে জানুন’।
আমি যেটা বলে দেবো, জেনে রাখো সেই কথা সত্য ও সার,
তাই নিয়ে শব্দকে গেঁথে, পারবে কি গড়ে দিতে কোনো স্তুতিহার?’


‘অমন শিখিনি যে! সব আছে আপনার , সভাসদে বিশারদ রয়েছে অনেক,
একটা জিনিস নেই। সে কাজ আমায় দিন, কবিতায় জেগে থাক দেশের বিবেক।’


‘ধুত্তেরি! রাষ্ট্রের বিবেক লাগে না , বস্তুত ওটা এক আপদবিশেষ।
তুমি থাকলেই যত গোলমাল হবে, আদেশ দিচ্ছি আজই ছেড়ে যাও দেশ।
কে আছিস, শব্দচাকর এই উদ্ভট লোকটাকে সীমান্ত পার কর খুব তাড়াতাড়ি!’


সেই থেকে কবি আর রাষ্ট্রের আড়ি।


আর্যতীর্থ