। কিপটে।


তিনটে শার্ট, দুটো প্যান্ট, দুটো করে লুঙ্গী আর গেঞ্জি,
তার বেশি কিছু দেখিনি ভদ্রলোকের কোনোদিন,
ও হ্যাঁ হ্যাঁ, একটা স্যুট ছিলো, প্রথম মাইনেতে কেনা,
চল্লিশ বছর সব অনুষ্ঠান পেরিয়ে আজও অমলিন।
বাজার থেকে বেলার দিকে একটা বা দুটো সবজি,
সস্তার মাছ(  কিন্তু টাটকা), মাসে মাংস একবার,
মাইনেটা ভালোই পেতেন, সরকারি অফিসার যে,
তবুও টিপটিপ খরচে সস্তা জিনিস খুঁজে চালাতেন সংসার।
ছেলেদের বই আসতো কলেজস্ট্রিট থেকে, পুরোনো কিন্তু অটুট
অফিস থেকে ফিরে নিজেই পড়াতেন অংক ও বিজ্ঞান,
বাকিগুলো নিজে পড়তে হতো; তবে রেফারেন্সের অভাব নেই,
ভদ্রলোকের জীবনে ঈশ্বরের পরেই বোধহয় বইয়ের স্থান।
সেগুলোও কলেজস্ট্রিট থেকে বহু ঘামের সময় দিয়ে নির্বাচিত,
বস্তুত ওই একটাই ছিলো বিলাসিতা; বাকি সবই হিসেবের মাপে
পুজো ছাড়া , ছিঁড়ে না গেলে জামাপ্যান্ট জুটতো না কোনো,
পকেটমানির কথা অস্ফুট থেকে যেতো প্রবলপ্রতাপে।
সিনেমা দূরস্থান, রেডিওর বাইরে মনোরঞ্জক শুধু বই,
তবে সে অনেক বই। তারাশংকর মোঁপাসার বাস পাশাপাশি ,
পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে যা কিছু সব হেঁটে বা সাইকেলে,
তার বেশী যদি যেতে হয় তবে ভরসা সে পাবলিক বাসই।
এভাবেই বড় হওয়া, প্রতিটি খরচে ভাবা ‘জমানোও যেতো’
ঘাম ছাড়া রোজগার হয়না কখনো সেটা বারবার শুনে,
সেসময় মেধা আর শ্রম হলে পাথফাইন্ডার লাগতো না,
দুই ভাই ক্রমে নিয়েছি জীবন গড়ে সেরকম ভিত পত্তনে।
সময়প্রকোপে তিনি বৃদ্ধ হলেন তবু মোটে নন কারো নির্ভর,
কিপটেমি আজও আছে, ছেলেদের ব্যয়ে তার বকুনি হাজারো,
নানাবিধ অব্যয় উঠে আসে তাঁর ঠোটে প্রজন্মের অপচয় দেখে
কেউ কিছু বলবে পক্ষসমর্থনে, এখনো সাহস নেই কারো।


কিপটের গল্পটা এখানেই শেষ করা যেতো, যদি না আসতো তারা।
কোনো একদিন দেখি ভদ্রলোকের কাছে একরাশ মানুষ হাজির।
দুঃস্থ ছিলেন নাকি তাঁরা প্রত্যেকে, কিপটের পয়সাতে পড়াশোনা সারা,
কবে থেকে? আমাদের ছোটোবেলা থেকে, বছরে নিতেন ভার একটি দুটির।
তাঁরা সংবর্ধনা দিতে চায়। ভদ্রলোক  তাঁদের ধমকে বার করে দেন প্রায়,
তাঁরাও নাছোড়। অবশেষে শর্ত হয়, দেওয়া যেতে পারে যদি সেটা হয় অতি কম খরচায়।


আমাদের ওনাদের যুগপৎ হাসিতে ছাদ থেকে কাক উড়ে যায়..


আর্যতীর্থ