। আই ই ডি।


গ্লোবটা আরেকবার দেখলেন তিনি।
আলতো হাতে ঘোরালেন, থামলেন, আবার ঘোরালেন।
লাল দাগ দেওয়া বেশ কিছু জায়গায়।
সিরিয়া, ইরাক, নাইজেরিয়া, কঙ্গো, সারাজেভো, বসনিয়া...
যেখানে মানুষের মনে আই ই ডি বসানো গেছে,
ধর্ম ইত্যাদির পলতে ধরালেই .. বুম!!
তিনি ইবলিশ, শয়তান, ডেভিল। যে নামেই ডাকুক দুনিয়া,
ভগবানের সাথে তাঁর চিরশত্রুতা।
মগজে আই ই ডি তার অত্যাধুনিক আবিষ্কার,
আগে ছোটো ছোটো হতো।
লোকে আত্মহত্যা করতো, বড়জোর প্রেমিকা বা পড়শীকে খুন করতো,
কিংবা ধর্ম বা জাতির নামে পাগল হতো।
তাবত সৃষ্টির তাতে কিচ্ছু যায় আসতো না।খবর হয়তো হতো কোনো মহল্লায় এক দুটো দিন।
অবশ্য সুযোগ বুঝে বিশেষ কোনো মগজ খুঁজে গুঁজে দিয়েছেন তাঁর বিস্ফোরক
হোসেইনহন্তারক শিম্রে ইবনে জিলজুশান, বুদ্ধবিরোধী অজাতশত্রু থেকে রোম সম্রাট ডায়োক্লেশিয়ান,
সকলের মগজে বিষ ভরে হত্যা করিয়েছেন চিরশত্রু ঈশ্বরের অজস্র উপাসককে।
কিন্তু ঠ্যাঁটা সভ্যতা খোঁড়াতে খোঁড়াতে ঠিক উঠে দাঁড়িয়েছে।
দুর্দান্ত সুযোগ এসেছিলো কয়েকবার , ঈশ্বরের এই অসহ্য সৃষ্টি শেষ করার।
ইবলিস পেয়েছিলেন চেঙ্গিসকে, তৈমুরলংকে, এমনকি কিছুদিনের জন্য রাজচক্রবর্তী অশোককেও।
মিনিটে পাঁচশো গুলির মহাবন্দুক আবিষ্কার করিয়ে পুতুলের মতো নাচিয়েছেন হিটলার থেকে পোল পট, গণহত্যাকারী তাবত নেতাদের।
কিন্তু কোথাও ফল্গুধারার মতো মানবতা ঠিক বয়ে চলেছে,
কোথাও কেউ বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে, মানুষ অমৃতের সন্তান,
অন্ধকার নয়, আলোই তার চিরস্থায়ী গন্তব্য।


অবশেষে , এই একবিংশ শতকে এসে( উফ, এই তারিখটাও সেই ঈশ্বরের পুত্রকেই মনে করায়, অসহ্য!)
শয়তানের আই ই ডি পূর্ণরূপ পেয়েছে।
এখন মানুষের মগজে বসালে সে দিব্যি উড়িয়ে দেয় স্কুলের বাচ্চাদের আলটপকা মেশিনগানে,
ধর্মের নামে করতে পারে অজস্র গণধর্ষণ, উজার করে দিতে পারে গ্রাম কে গ্রাম জাতিশুদ্ধির নামে,
এবং কি আনন্দের কথা, এরা সব সাধারণ লোক, ঘাতক হওয়ার আগে কেউ চাষী, কেউ শ্রমজীবী,
ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ড্রাইভার ধোপা বা ট্রাকের খালাসী,
স্বভাবত, এহেন অভূতপূর্ব সাফল্যে ইবলিস খুশী।


শয়তান থামলেন।দেখলেন।ভারতের পূর্বদিকে এক প্রদেশ রঙিন আবিরে মেতে উঠেছে উৎসবে,
গাছেরা সেজেছে সূর্যোদয়ের আকাশের মতো টকটকে লাল রঙে,
রাস্তার ধারে রাধাচূড়া আর পলাশ বিছিয়েছে লালহলুদের মখমলি চাদর।
নাহ! এ সহ্য করা যায়না, এই সামূহিক ধ্বংসের মধ্যেও লোকের এই বসন্ত আগমনীর আদিখ্যেতা।
কিছু একটা করতেই হবে! শয়তান ঘোরালেন তার যন্ত্র, ঝাঁকে ঝাঁকে আই ই ডি ছুটলো অজস্র মগজের দিকে।
কিন্তু এ কি! আজ তার বিষকল কাজই করলো না , এদিকে ওদিকে তাকিয়ে কারণ খুঁজে পেলেন ইবলিস,
তাঁর মুখ থেকে বেরোলো এক ভীষণ অপার্থিব আর্তনাদ....
‘ তোমার সর্বনাশ হোক ঈশ্বর, সর্বনাশ হোক তোমারও, রবীন্দ্রনাথ!’


আর্যতীর্থ