।গোলাপদিন।

এই যে শুনছো! রাই চেঁচালেন রান্নাঘরের থেকে,
এমন মধুর ডাকে গোটা জীবন গেছে সেঁকে।
শুনতে পেলেই কাংস্য সে ডাক দাঁড়াই অ্যাটেনশনে,
না শুনলে যে কপালে কি এ শর্মা তা জানে।
সকাল সকাল এমন মধুর ডাকেন কেন প্রিয়ে,
ন্যস্ত কোনো কাজ কি গেছি ভুলে মেরে দিয়ে?
বাজার থেকে যা বলেছেন এনেছি তো সবই,
( আর ভুলি না, সঙ্গী এখন হোয়াটসঅ্যাপের ছবি)
শ্বশুরবাড়ির আসছে কি কেউ সন্ধেবেলা নাকি?
( শালাশালি আসলে আমি আবছা হয়েই থাকি)
নাকি রাইয়ের হবে হুকুম ‘জলদি ফিরো আজ রাতে,
অমুক লোকের গৃহপ্রবেশ , কাজ যেন না বাধ সাধে’
নাকি মেয়েদের খবর কোনো বলা হবে চুপিচুপি,
( বাড়িতে এক বাইরে আরেক, প্রজন্ম তো বহুরূপী)
কিংবা কোনো ভুল করেছি ধার্য করা খরচাতে,
হাজার সওয়াল মাথায় দাঁড়াই রাইকিশোরীর দরজাতে।

চোখে এনে ঝিলিক হাসি, রাই জ্বালালেন কটাক্ষে,
( বাইফোকালে আগুন আজও জ্বালতে পারেন এ বক্ষে)
‘মেয়েদের কাছে শুনতে পেলাম আজকে নাকি গোলাপদিন
এই যে আমার কিপটে প্রেমিক, বউয়ের একটু খবর নিন।
এনো দেখি বিকেলবেলা যে ফুল আমার পছন্দ,
কলেজকালের স্মৃতিগুলোয় ফেরাও দেখি বসন্ত।

এই খেয়েছে, রাইকিশোরী ফেললো আমায় ঝঞ্ঝাটে,
সকালবিকেল এখন আমার নিরস কাজে দিন কাটে।
নবীনপ্রেমে পার্কে বসে  ফুলেলযাপন যদ্যপি,
এখন বাপু ফুলের চেয়ে বেশি চিনি ফুলকপি।
ওসব সময় ছিলো গোলাপ জুঁই চামেলী মল্লিকার,
অষ্টপ্রহর জাঁতায় পিষে এখন তো সব ফক্কিকার।
ফুল কেনাটা ধরতে পারো নেহাত নিয়মবদ্ধ যে
কলিগ কারো বার্ষিকী বা বসের বাপের শ্রাদ্ধতে।

তবু যখন রাই বলেছেন আনতে নিজের মুখে,
ফুলের দোকান ঢুকে গেলাম ধুকপুকানো বুকে।
গোলাপ ছাড়াও লিলি আছে , জারবেরা আর কারনেশন,
মওকা দেখে দোকানদারও আকাশছোঁয়া দর বসান।
কেন যেন মনে হলো , এসব রাইয়ের চলবে না,
এতই সহজলভ্য যে ফুল, তার কথা রাই বলবে না।

বেরোচ্ছিলাম নিরাশ হয়ে, ফুল না পেয়ে মন ভারী,
বাজারদোকান শেষের মুখে , ভাঙা বেড়ার নার্সারি।
যে মালি সেই বিক্রি করে, আসতে যেতে মুখ চেনা,
যাচ্ছে আসছে পাশ দিয়ে লোক, ওখানে কেউ ঢুকছে না।
গিয়ে বলি গোলাপ হবে? গলাতে বেশ সন্দেহ,
ফুলের দোকান যা পারেনি, তা দিতে কি পারবে ও?
‘ বসেন বাবু, ভিতর থেকে বের করে দিই যখের ধন,
নিন চারাগাছ, যত্ন করুন, ফুলবাহারে ভরবে মন।’
মনে মনে ভেবে দেখি, রাইয়ের তো খুব ফুলের সখ,
নিয়েই ফিরি আজকে ঘরে, নাহয় খাবো খুব ধমক।
দুখানা টব , ক্ষীণ চারাগাছ সঙ্গী হলো অগত্যা
রামচন্দর লঙ্কা জিতে ফেরেন যেন অযোধ্যা।

রাইয়ের সামনে যেই রেখেছি টব দুখানা সাবধানে,
রাইকিশোরীর দুচোখ বেয়ে জল যে কেন কে জানে!
টব দুখানা বারান্দাতে সাজিয়ে রাখেন স্বহস্তে,
আধচাঁদা রাত, মন্দ বাতাস, নেশা ধরে সমস্তে।
চেনা হাতের আলতো ছোঁয়ায় আবেগগুলো বাঁধনহীন
রাতের তারা সাক্ষী আছে, কেমন গেলো গোলাপদিন।

আর্যতীর্থ