।  চুড়ির শব্দ।


হলুদ বাড়ি অল্প বাগান রেলিং দেওয়া গেট
গেট পেরিয়ে ওই বাড়িটায় কখনো ঢুকিনি
পাশ দিয়ে যাই সকালবেলা রাত্রে ঘরে ফিরি
মাঝে মাঝেই হঠাৎ শুনি চুড়ির রিনিরিনি
কার সে চুড়ি ? এই বাড়িটায় যখন তখন বাজে ?
সত্যি শুনি নাকি সেটা নেহাত কানের ভ্রম ?
বাড়ির সামনে এলেই আমার পাগল পাগল লাগে
যখনই যাই , চুড়ির শব্দ , নিশ্চিত একদম।
পাশ দিয়ে যাই , দূর দিয়ে যাই , ওধার দিয়ে হাঁটি
রিনঝিনানো শব্দ আমায় তাড়া করে ফেরে
আজকাল তো ভয়ই লাগে ওদিক দিয়ে যেতে
চুড়ির শব্দ স্বপ্নে এসে রাতের ঘুমও ছেঁড়ে।
মাঝে মাঝে একটু আধটু মারি উঁকিঝুঁকি
ফুলগাছেরা ইতস্তত বাড়ছে নিজের মতো
দরজাজানলা বন্ধ সবই , বারান্দাতে ধুলো
চুড়ি তো দূর , মানুষ কারো দেখা পেলেও হতো।
অথচ সেই শব্দ আসে , রিন ঝিন ঝিন রিন
এ কোন  নারী  একলা বসে বাজায় কাঁকন তার ?
আমায় কেন শোনায় শুধু , শব্দ দিয়ে বাঁধে ,
যে ভাবে হোক হেস্তনেস্ত করাটা দরকার !
আজ সকালে , হঠাৎ দেখি রেলিং গেটটা খোলা
পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম  হলুদ বাড়ির পানে
কাউকে ঠিক পাবো এবার কথা বলার মতো
এমন একটা মানুষ যে ওই চুড়ির ব্যাপার জানে।
দরজা খোলা , ঘরের ভেতর ডাকছে যেন আমায়
ওই তো আবার শব্দ হলো , এবার অনেক কাছে
এতদিনের পাগল করা  পাগল নারী কোনো
নির্ঘাত এই ঘরের ভেতর বসে কোথাও আছে !
কোত্থাও নেই।  এঘর ওঘর , সবঘরেতেই ধুলো
হয়তো তবে হাওয়া এসে শব্দ বানায় কাঁচে ,
এবার ফিরি , তদন্ততে অনেক সময় গেলো
আরে একি ! দরজাটা কই ? খুঁজে পাচ্ছি না যে !
দিনের আলো , সবকিছু ঠিক , দেখতে পাচ্ছি সব
জানলা ফাঁকে চিলতে  আলোয়  দেখছি রাস্তাটাও
অথচ এই  গুমোট হাওয়ায় বন্ধ ঘরের মাঝে
চারদিকেতে দেওয়াল শুধু , দরজা  নেই কোথাও !
চেঁচিয়ে ডাকি জানলা ফাঁকে কে আছো কোনখানে
ফাটল দিয়ে দেখছি লোকে  যাচ্ছে আপনমনে
শুধু একজন , থমকে গিয়ে  তাকায় বাড়ির দিকে ,
কান পেতে ওই আরেকটা কেউ চুড়ির শব্দ শোনে ...


আর্যতীর্থ