। রাধার চিঠি।


তোমার চিঠি কাল পেয়েছি, দ্বারকাধিপতি,
খুব গোপনে পৌঁছে দিলো তোমার অনুচর,
স্মৃতির দোরে টোকা দিলো আবার বিন্দেদূতী
পা টিপ টিপ বুক ঢিপ ঢিপ আয়ান ঘোষের ঘর
তখন তুমি মুরলীধর ,  ব্রজের রাখালরাজ
সেই গাঁয়েরই বধূ আমি, তোমার প্রেমে মজে
হোরিখেলা, রাস উৎসব মনে আসে আজ,
তোমার আমার প্রেমের কথা রাষ্ট্র গোটা ব্রজে।
ভাগ্য তোমায় নিলো কানাই, সুদূর মথুরাতে,
হে নন্দলাল,  জানলো সবাই তুমি বাসুদেবও,
রাজত্ব আর রাজকন্যা এলো তোমার হাতে,
আমার তখন কি যে দশা, সময় করে ভেবো।
এতদিন তো  নীরব ছিলো লোকে তোমার ভয়ে
পরকিয়া কে আর কবে সহ্য করে বলো,
একজনও কেউ লোক ছিলোনা বলবে আমার হয়ে
শ্যাম তো গেলোই, বাঁকা কথায় কুলও টলোমলো।
আমিও এমন পাগল,  সেসব প্রেমের ভূষণ ভাবি
বৃষ্টি এলে বাইরে ছুটি, কৃষ্ণ এলো বুঝি,
রুক্মিণীকে করলে বিয়ে ফিরিয়ে প্রেমের দাবী
আমি তবু কালোমেঘে কালোসোনা খুঁজি।
তাই বলে আর কদিন বলো, সামান্য এক মেয়ে,
তোমার মতো রাজার কাছে কি আর মূল্য আছে,
বছর গেলো বনমালী,  তোমারই পথ চেয়ে,
এক পৃথিবী চোখের জলের নদী আমার কাছে।
তারপরে ঠিক সামলে নিলাম,  মেয়েরা যেমন যায়,
কোথায় গেলাম কি করলাম নাহয় উহ্য থাক
হারিয়ে গেলাম সবার থেকে নিজেরই ইচ্ছায়,
হাঁফ ছাড়লো বোধহয় সবাই, যেখানে যায় যাক।
আজকে আমায় খুঁজে নিলো তোমার অনুচর,
পত্রালি প্রেম পৌঁছে দিলো রাজা তোমার থেকে,
আর আমি নই সেই রাধিকা, শ্যামকুলনির্ভর,
এখন কেমন হাসি এলো প্রেমের চিঠি দেখে।
রাজা আমার প্রণাম নিও, মস্ত তুমি লোক,
আমি তো ছার ব্রজবালা, সামান্যা এক নারী,
তোমার থেকে দেশের ভালো, দশের ভালো হোক,
আমি এখন তোমায় কেবল প্রণাম দিতে পারি।


আর্যতীর্থ