ঝিকঝিক চলে গাড়ী ধোঁয়া ছোটে পিছনে,
সময়টা বাঁধা তার যেতে শেষ ষ্টেশনে ।
সম্মুখে বাধা নেই হুসহুস ছুটছে -
এ দূরে ঐ ছেলে আড়চোখে দেখছে ।
লাইনের পাশে ফুটে লাল নীল কতো ফুল,
ঐ তো একটু দূরে গাছভরা পাকা কুল ।
নদীর পাড়েতে ঐ ধোপা শাড়ী কাচছে
ডিঙি নৌকায় জেলে মাছ ধরে তুলছে ।
লাঙ্গল ধরে চাষী মই দেয় জমিনে
গাঁয়ের লাজুক বধূ ন‍্যাতা দেয় উঠোনে ।
দোকানি দোকান খুলে ব‍্যস্ত আপন কাজে
ঠেস দিয়ে দাওয়ায় দাদু বিড়ি টানে মেজাজে ।
ঘড়ঘড় ক‍্যাঁচক‍্যাঁচ ট্রেন ব্রেক কষলো
বাঙ্কারে রাখা বোঝা ধপ করে পড়লো ।
থামলো হঠাৎ গাড়ি ধূ ধূ মাঠ ষ্টেশনে
নামলো কে উঠলো কে কতজন কেজানে ।
ভোঁভোঁ করে সাইরেন দিলো ইঞ্জিনে তে
আস্তে আস্তে গাড়ি ফেরে ফের গতিতে ।


পদ্ম ফুটেছে কতো পাশের ঐ বিলটায়
শনশন হাওয়া ঢোকে জানলাটা খোলা দায় ।
প‍্যাঁক প‍্যাঁক ডাকে হাঁস পুকুরের জলেতে
বারবার দেয় ডুব গুগলির লোভেতে ।
একদল দামাল ছেলে পুকুরেতে নাইছে
হাতে নিয়ে একতারা বৈরাগী গাইছে ।
শুনতে ইচ্ছে করে দেহতত্বের গান
চৌদল বাঁধা আছে বৃথা এই ধন মান ।
ঐ দূরে রিক্সায় বরবৌ যাচ্ছে
বরের পাশেতে বসে কনে বুঝি কাঁদছে ।
ঐ দেখি হাট বসে, বুঝি আজ হাটবার
কেনাকাটা করে সব যার যেটা দরকার ।
কলসী কাঁখেতে বধূ জল তুলে আনছে
লাল শাড়ী ঘোমটায় মুখখানি ঢাকছে ।
চাষকাজ শেষে চাষী ফেরে তার কুটিরে
ঢংঢং ঘন্টায় স্কুলে হোলো ছুটিরে ।
সূর্যটা ধীরধীরে পশ্চিমে ঢলছে
দিনশেষে রবি তার দিগন্তে ডুবছে ।
শাঁখ বাজে বাতি জ্বলে তুলসীর তলাতে
দিনশেষ ডাক দেয় আজানের ধ্বনিতে ।


চারিধার ঢেকে যায় ঘন কালো আঁধারে
এসে গেলো শেষ বেলা থাম গাড়ি এবারে ।
অবশেষে থামলো গাড়ি তার শেষ ষ্টেশনে
অতীতের কলতান রয়ে গেলো পিছনে ।
জীবনগাড়ীর গতি ধীরে ধীরে ফেলে শ্বাস
আবার নতুন চলা - বুকে নিয়ে বিশ্বাস।
এইভাবে বয়ে যায় জীবনের প্রতি পল
বৃত্ত পূর্ণ হয় সফরের দোলাচল ।।


###########################