প্রতিদিন ভোর হয়
সূর্যের সাথেই উঠে পড়ে রাহুল।
রাতের বেঁচে থাকা ভাত-
জলে ভেজানো থাকে-পান্তা।
দু’মুঠো কোন রকম গলাধঃকরন করে,
এক টুকরো পেয়াজ আর লঙ্কা দিয়ে।
আঁচাতে আঁচাতে বলে ‘বাবা তোমার কি হলো’?
ট্রেনের হুইসেল বেজে ওঠে।
ছুট লাগায় রাহুল-
ঘরে অসুস্থ বাবা তৈরী করে রাখে
অঙ্কুরিত ও তেলে ভাজা ছোলার ঝুড়ি।
ঝুড়িটি গলায় ঝুলিয়েই দৌড়-
চলন্ত ট্রেনে উঠে পড়ে রাহুল।
নামবে ঠিক আটটা পয়তাল্লিশে
রোজকার নাম-
রাহুল- বারো বছরের রাহুল।


অসুস্থ বাবার চিকিৎসা,
দুই বছরের বোনের দুধ,
তার দেহের রক্তকে সাদা করে দিয়েছে।
এক বছরেই বারোর রাহুল
বিয়াল্লিশে পৌছে গেছে।


আজ ট্রেনে ভীড় নেই,
তাছাড়া সকালে ছোলা কম খায়
কম্পাটমেন্টের ডিভাইডারে হেলান দিয়ে রাহুল
তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে এক দম্পতিকে।
কোলের বাচ্চাকে নিয়ে কী নাজেহাল অবস্থা!
কান্না কিছুতেই থামে না-
রাহুলের মনে পড়ে দু’বছর আগের কথা,
যখন তার ছোট্ট বোনটি মা’এর কোলে এলো।
ছোট্ট ভাঙাচোরা ঘরে,
ছেঁড়া ত্রিপলের ফুটো দিয়ে ঘরে এলো
আলোর রশ্মি- সোনা বোন।
বাবা মা আর বোনকে নিয়ে
আনন্দেই চলছিল রাহুলের।


তারপর হটাৎই সূর্যের কীরণ
যেন ফুরিয়ে গেল।
বাবার কারখানায় এক্সিডেন্ট-
দুটো পা-ই বাদ-
সর্ষের ফুল হয়ে এলো রাহুলের চোখে।
তবুও ভেঙে পড়েনি রাহুল-


কিন্তু যে ভার মাথায় নেয়,
যে প্রবল সহ্যের আধার হয়-
বিধাতা তার আরো পরীক্ষা নেয়।
ঠিক এক মাসের মাথায় তার মা-
তার গর্ভধারিনী মা-
নয় মাসের কোলের বোনকে,
তার অক্ষম বাবাকে ফেলে,
তাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল-


না, পৃ্থিবী থেকে নয়,
পরপুরুষের হাত ধরে।


কী নির্মম!
নিষ্ঠুর বিধাতা।