(Ode On A Grecian Urn )                                         কবি     ::   John keats                                                                                                                                            অনুবাদ :: সুবীর সিংহ রায়  
  
এখনো নববধূ ! তুমি আছো অনাস্বাদিতা কুমারী নীরবতার কাছে নৈঃশব্দ্য এবং ধীর সময়ের পালিতা সন্তান যেন তুমি, শিল্পির রচিত কাহিনি তুমি                                                                           নিবিড় অরণ্যপটে মুগ্ধমনোরমা, সে কাহিনি তো
ফুলেরই ভাষা এবং মধুতর ছন্দে অপ্রচলিত রীতিতে
লতাবিতানে বিন্যাস তোমার পূর্ণ অবয়ব ঘিরে আছে ,
মর্ত্যমানুষ মানুষী অথবা স্বর্গদেবতা অথবা দুইয়েরই  প্রতিরূপভাস তোমার অঙ্গে অঙ্গে,এ যেন উপকথায় বর্ণিত টেম্প কিংবা আর্কেডি উপত্যকার এক শান্ত নীরব গ্রাম্যজীবনের চিত্রালেক্ষ্য...   ...     .....
ঐ যে যুবাপুরুষ অথবা দেবপুরুষের দল মত্তকাম ছুটেছে অভীষ্টলাভে ত্রস্ত বালিকার প্রতি এবং কী কঠিন প্রয়াস নিস্পৃহ অনিচ্ছা অবলা সুন্দরীর   কামোন্মত্ত ধর্ষকের হাতের নিস্কৃতি চেয়ে ......  ..
এক বন্যসংগীতের সুর বাজে বাঁশিতে উন্মদ তাল বাদ্যযন্ত্রে,  নৃত্যগীত মুখরিত তুরীয় আনন্দ আবহ ;


শ্রুত সংগীতের সুর সতত মধুর, কিন্তু কল্পনায় যে সুর বাজে সেতো আরো বেশি মধুর,সে সুর শ্রবন কখনো শুনতে পায় না, সে সুর মোহজালে জড়ায় শুধু চেতনার জগৎ শুধু উৎসুক চিত্তের গভীর অনুভব
ঐ যে উন্নতদর্শন তরুণপ্রেমিক গাছের ছায়াতলে,
তুমি বদলে দিতে পারবে না তারে আর কখনো
তোমার  অখন্ডগীতধ্বনি , তোমার সবুজ বৃক্ষলতা
পত্রকুসুমসজ্জায় চির সজ্জিত, ওরা যে সময়কে বেঁধে রেখেছে।তোমার সাহসী বীর প্রেমিক যে
আসঙ্গলিপ্সায় কাতর সফল হবে না কখনো রতিচুম্বনে  যদিও সম্ভাবনা তার সম্মুখে মনোরথ-
পূরণে, প্রেয়সীর মুখচ্ছবি যাবেনা মিলিয়ে কখনো
স্থিরযৌবনা মনোহারিণী থাকবে সে যুগ যুগ ধরে...


আহা কতো সুখী  ওরা , তোমার অরণ্যশাখার দল..
পাতাঝরার বার্তা  আসে না কখনো ওদের কানে
ওরা বিদায় বসন্ত !বলেনা কোনদিন, চিরবসন্তের দেশে এবং সুখী তোমার বাঁশরিয়া,  অক্লান্ত বাজে তার বাঁশিতে অনন্ত অখন্ড নব নব সুর -- কখনো যাবে না থেমে, সেখানে সুখের প্রেম সুখের জীবন চিরউষ্ণ চিরভোগ্য সজীব মিলনউচ্ছ্বাস চির অক্ষয় যৌবন ওরা রয়েছেপৃথিবীর মানুষের থেকে বহুদূরে স্থিরভঙ্গিতে, এখানে মাটির পৃথিবীতে আবেগ দুঃখ অনুভূতি কেবল পোড়ায় আমাদের কপাল পিপাসায়                                                                       শুষ্ক করে আমাদের কন্ঠ !


তোমার শরীরের অন্য প্রান্তে যে চিত্রমালা, যেন শিল্পির আরো এক জীবনসত্যভাবনা
ঐ যে পুণ্যশোভাযাত্রা চলছে মানুষের পায়ে পায়ে, পুরোভাগে ধর্মপুরোহিত রহস্যময় এক সবলে টেনে নিয়ে চলেছে নিরীহ গোবৎসটিকে বলিদান দিতে অরণ্যবেদীতলে, আর্তচীৎকার শাবকের এবং পুষ্পমালায় সজ্জিত ওর রেশমকোমল ত্বক চার পায়ে, শুনতে পেয়েছে যেন মৃত্যুঘন্টার ধ্বণি....
ঐ যে শান্ত দুর্গনগরী পর্বতসানুদেশে , হয়তো বা নদী সমুদ্র উপকূল ছুঁয়ে ---
ছুটেছে জনস্রোত, শূন্যজনপদ পুণ্যপ্রভাতে, সুখের জীবন ছেড়ে আনন্দ উচ্ছ্বাস ফেলে....
নিঃস্পন্দন নীরব ক্ষুদ্র নগরী পথঘাট নিস্তব্ধ রবে  চিরদিন, থাকবে না  আর কেউ শোনাতে স্মৃতিকথা ,  তুমি নিঃসঙ্গ সব হারিয়ে,ফিরবে না আর কোনোদিন

প্রাচীন গ্রীকশৈলীতে পাথুরে বুনন তোমার শরীরে
মর্মরিত নারীপুরুষের যাপনচিত্র, আহা ! নিখুত অলংকৃত গুল্মলতা আগাছার আশ্রয় তোমার বনবৃক্ষশাখা সব--শিল্পির সৃজনে সমস্ত নিথর...
তুমি আমাদের নিয়ে যাও এক অচিন্ত্য অকল্পনার জগতে প্রতিস্পর্দ্ধায়সত্যবিরোধী এক সত্যের জগতে,স্থির হয়ে আছে সবকিছু তোমার, অন্তহীন সময়ের ব্যাপ্তি জুড়ে, তবুও মধুর মনোহর সে সৃষ্টিকথা অক্ষয় অমর...
সময় যখন নিয়ে যাবে আমাদের মরজগৎ জীর্ণজড়ার দেশে মৃত্যুর ওপারে, তখনো তুমি আছো স্থির, দুঃখব্যথা মৃত্যুর মাঝে --
যে স্থিরতা সময় আমাদের দেয়নি কখনো, তুমি বন্ধু হবে সেই মানুষের কাছে,যাকে তুমি বল --
' সৌন্দর্যই সত্য এবং সত্য সুন্দরম্ '--
শব্দহীন শব্দ মহাজগৎসৃষ্টি জুড়ে !