পর্ব ১ঃ
তুমি আমার গঙ্গাফড়িং ভরা মাঠের ফুল
তুমিই আমার উড়নচন্ডী হাওয়ার কানে দূল।
তুমি আমার বসন্তরাগে বিরহের শীতকাল,
তুমিই আমার বর্ষাকালে খড়ের ছাওয়া চাল।
তুমি আমার ক্ষিপ্ত রোদে রোদ ঢাকানো ছাতা,
তুমিই আমার রান্নাঘরের ভাত মাখানো হাতা।
তুমি আমার ভোরবেলাকার শিশিরভেজা ঘাস,
তুমিই আমার বিকেলবেলার রোদেরই আভাস।
তুমি আমার স্কুলের পথে নিত্য দিনের সঙ্গী
তুমিই আমার ফেরার বেলায় মুক্ত বিহঙ্গী।
তুমি আমার কলেজসাথী, নিত্যদিনের সুখ
তুমিই আমার ইউনিভার্সিটির সকালবেলার মুখ।
তুমি আমার পুলকমাখা বিছানায় ছড়ানো ফুল
তুমিই আমার ভরা আকাশ বর্ষারাতের হুল।
তুমি আমার মনের ভিতর চলন্ত ঘড়িকাঁটা
তুমিই আমার ফুলের সৌরভ, শালুক ফুলের ডাঁটা।
তুমি আমার খড়ের ঘরের পূর্নালোকের সোভা
তুমিই আমার মুগ্ধ বাতাস প্রেমে মনোলোভা।


পর্ব ২ঃ
তুমি আমার ক্ষুদ্র ডোবায় অনন্ত সাগর
তুমিই আমার আগুনচেতা, আগুনের আকর।
তুমি আমার নিরস মেঘে বজ্রপাতের আশা
তুমিই আমার হাড়ের তৈরি শকুনির পাশা।
তুমি আমার দ্রোপদীর সেই খুলে ফেলা শাড়ী
তুমিই আমার দুশাসনের নিয়েছ জীবন কাড়ি।
তুমি আমার সন্ধ্যারাগে ভোর দুপুরের আলো
তুমিই আমার চোখের পাতায় কাজলের সেই কালো।


পর্ব ৩ঃ
তুমি আমার লকডাউনের চাষীর ভাঙা হাত,
তুমিই আমার রাজনেতারদের গবীর চেপা দাঁত।
তুমি আমার বুদ্ধিজীবী টাঁকের মাথায় তেল
তুমিই আমার বিপ্লবী সেই প্রতিবাদের জেল।
তুমি আমার খালি পেটে, লোকভোলানো রাম,
তুমিই আমার বীরের প্রদীপ বিপ্লবী ক্ষুদিরাম।
তুমি আমার ইমাম দাড়ি, পুরুত টিকির ভাতা
তুমিই আমার বেকারত্বের ফুটো করা ছাতা।
তুমি আমার মসজিদ সেই মাথায় টুপি চাপা
তুমিই আমার মন্দিরে সেই আতবচাল ভাপা।
তুমি আমার কৃষক বিলে গরীব পেটের ঘুন,
তুমিই আমার গোটা দেশেই বাসি ফ্যানে নুন।
তুমি আমার করোনা, সেই লক্ষ লোকের লাশ
তুমিই আমার ঔষধ টীকা, রাজনীতির পলাশ।
তুমি আমার রাজনেতাদের গোপনে করা চুরি
তুমিই আমার দেশের পেটে দিয়েছো যে ছুরি।
তুমি আমার মন্দির আর মসজিদের মাতামাতি
তুমিই আমার ভায়ে ভায়ে লাগিয়েছ হাতাহাতি।
তুমি আমার রক্তে থাকা কাজী নজরুল ইসলাম
তুমিই আমার লিখে দিয়েছ গাহি সাম্যের গান!
তুমি আমার ব্যাথার বনে আলতো গুয়ো পান
তুমিই আমার এক বৃন্তে হিন্দু-মুসলমান।