নমুনা ১। কোজাগর নামে একটি কবিতা। নামটি দেওয়া হয়েছিল 'কে জাগে রয়'  এই অর্থে। সেটি ছিল একটি রাজনীতি ও সমাজ বিষয়ক কবিতা। কিন্তু সে অর্থের ধারে কাছে না গিয়ে একজন মন্তব্য করলেন কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা নিয়ে। প্রায় পুরো পাতা জোড়া লেখা, লক্ষ্মীপুজার কথা। বোঝা যাচ্ছিল নিজের বিদ্যাতে  কুলায় নি, কোন বই বা নেট থেকে টুকে দিয়েছেন।


নমুনা ২। বিরহের কবিতা লিখলাম। বরহে যেমন থাকে -  প্রেমের মানুষটি চলে গেছে, তার জন্য অন্তহীন দুঃখ যন্ত্রণার কথা। বেশ কয়েকটি মন্তব্য পেলাম সান্তনা দিয়ে। তারা আমাকে কষ্ট না পেতে লিখেছেন, একজন গেছে তাই বলে কষ্ট পেলে চলবে  না, জীবনে অনেক এমন হয়...  ইত্যাদি ইত্যাদি ।


নমুনা ৩। সুরা/সাকী  নিয়ে অনেক রুবাইয়ৎ আমরা জানি, তার অনুসরণে সুরা নিয়ে লিখলাম । মন্তব্য এল সুরা পানের কুফল,  সুরা পান থেকে দুরে থাকার সাবধান বানী সমেত। একজন বলেই ফেললেন-  মরার রাস্তা দেখাচ্ছেন।  হায়রে ওমর খৈয়াম !!


নমুনা ৪। হৃদয় যন্ত্রণার কবিতা। তার  মন্তব্যে উদ্ভিগ্ন জিজ্ঞাসা- কবির  হার্ট সুস্থ  আছে কিনা।


এরকম আরও কিছু নমুনা দেওয়া যায় । এগুলি আমার ব্যক্তিগত কবিতা থেকে অভিজ্ঞতা । অন্যদের ও নিশ্চয় এরকম অভিজ্ঞতা আছে। মাঝে মাঝে মনে হয় হাসব না কাঁদব। আমি কইলাম কি, তুমি বুঝলা কি।  এই আসরে যারা কবিতা লেখেন তারাই  মুলত পাঠক, মানে কবি-পাঠক। একজন কবির কাছে থেকে এমন উত্তর পেলে মনে সন্দেহ জাগে বৈকি। এই আসরে কবিতা লেখা শুরু করে অনেকেই উন্নতি করেছেন , অনেকেই ভালো , উৎকৃষ্ট মানের কবিতা লিখছেন। তার মানে  এই আসর  যেভাবে কবি তৈরি করতে সাহায্য করছে, সে তুলনায় যথার্থ পাঠক তৈরি করতে পারেনি। আমরা ভালো কবিতা লিখছি, কিন্তু  ভালো করে পড়তে সিখছি না।
যে কোন লেখা বা কবিতা পরিশীলিত হয়, ঋদ্ধ সমালোচনার দ্বারা। এই আসরে অবশ্য সমালোচনার অনেক বিপদ আছে, অনেক উলটো গুঁতোর উধাহরণ আছে। গঠন মূলক সমালোচনার কথা অনেকে বলেন। সেটি একটি ধোঁয়াশা পূর্ণ কথা। বলতে গেলে মহাভারত হবে , সে কথা থাক। এটুকু বলা যায়, কবিতা টি ভালো লেগেছে, বা ভালো লাগেনি। এবং এর কারন  দুএক কথায় বলা যেতেই পারে। অনেক সময় ভালো লাগলে কেন ভালো বা মন্দ লাগলে কেন মন্দ তা পরিষ্কার করে বলা অনেকের পক্ষে সহজ হয় না। কবিতা যেহেতু হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করতে হয় তাই কবিতার ভালো মন্দ ব্যাখ্যা করা সহজ নয় বলে আমার ব্যক্তিগত অভিমত। কিন্তু মুস্কিল হয় এর বাইরে গিয়ে যারা ধান ভানতে শিবের গীত গাইতে থাকেন।
লিখেছিলাম-' আমার বৃষ্টির দেশে  পাহাড় নেই, নদী নেই /নেই আকাশ ঝাঁপান মাঠ, / দিন আরম্ভের সূর্য এসে নাড়ে না কপাট ......। বর্ষার সঙ্গে জীবনের   সংপৃক্ততার কথা ছিলে  তাতে। মন্তব্যে , একজন সে সবের ধার দিয়ে না গিয়ে লিখেলেন এবছরের আবহাওয়ার কথা, বর্ষা একদম হচ্ছে না । এইসব দেখে ঘোরতর সন্ধেহ হয় - কবিতা  আদৌ  না পড়ে বা পুরো কবিতা না পড়ে অনেকে মন্তব্য করেন। এখনতো নিয়মিত মন্তব্যকারীর কোন লিস্ট নেই , তবু কেন এমন হবে তার কোন সদুত্তর আমার জানা নেই। শুধুই নাম জানানো নাকি অন্য কিছু ? - কে জানে ।
সবচেয়ে মজা হয় নিবিড় প্রেমের কবিতায়, অনেকে কবিতার কথা কে কবির জীবনের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলেন। যেন কবি তার ব্যক্তিগত  গোপন কথা বলছেন । যে কোন  কবিতা কবির উপলব্ধি থেকে উঠে আসে সত্য, তবে সব কবিতাই আর ব্যক্তিগত জীবনের কথা নয় এটা বোঝা দরকার।  বেশ কয়েক বার আমাকে প্রতিমন্তব্যে "  কবিতার কথা আর কবির জীবনের কথা এক নয়"- বলে মনে করিয়ে দিতে হয়েছে।


সবিনয়ে বলি -  কবিতায়  যদি মন্তব্য করতে হয় তবে  আমাদের সেটা  পুরোটা পড়া দরকার , বোঝার চেষ্টা করা দরকার এর প্রতিপাদ্য বা অন্তর্নিহিত অর্থ কি। পণ্ডিতি করে উলটোপালটা না বলে  শুধু 'ভালো লেগেছে' বা ভালো লাগেনি বা বুঝলাম না'  লেখাই যুক্তিযুক্ত বলে আমার মনে হয়।
পরিশেষে ব্যক্তিগত জীবন আর কবিতা নিয়ে একটু মজা করা যাক।  
নাটকের প্রয়োজনে কবিগুরু লিখেছিলেন -
         অভয় দাও তো বলি আমার wish কী
      একটি ছটাক সোডার জলে পাকি তিন পোয়া হুইস্কি
আমাদের অসীম সৌভাগ্য (এবং তাঁরও ) যে  তাঁর এই আসরে কবিতা পোস্ট করতে হয় নি। হলে মন্তব্যের ঠ্যালায়.........।


                      ---শ্রীতরুণ (১৩/৭/১৫)