আজ যখন অ্যাগনেস গোনাস্কা বোজাস্কিন হয়ে উঠলেন সেন্ট টেরেসা, তখন কবিতার জীবনবোধে নতুন সময় খুঁজে পেলাম। মনে পড়ে যায় বারংবার অনেক ছোটবেলার কথা। আমার স্কুল ছিল সেন্ট লরেন্স। প্রাইমারিতে ফাদার ছিলেন ফাদার বুসে। আমি তখন ক্লাস টু। মনে পড়ে একদিন দেখলাম এক মহিলা প্রিফেক্ট রুমে। বুঝিনি। দেখলাম মুখটি। তার কিছু দিন আগেই আমার স্বর্গীয় বাবা ছবি এঁকে দেখিয়েছিলেন মাদার টেরেসার ছবি। সেই উনি বসে আছেন প্রিফেক্ট রুমে। তখনও স্কুল শুরু হয়নি। বাস থেকে নেমে ঢুকছি। আর আমি বরাবর খুব শান্ত কিন্তু স্পষ্টভাষী। ফাদার বুশে ভালোবাসতেন। গেলাম বুশের কাছে। আমায় মারল বেত দিয়ে। আদর করল। আমি শুধু বললাম “মাদার।” উনি অবাক হলেন। এগুলোই তো জীবনের কবিতা। স্মৃতিরাই কবিতা। কেন! কারণ এই স্মৃতিরা লিখতে শেখায়। প্রাণশক্তি নিয়ে নতুন করে বাঁচতে শেখায়।
সময়টা ১৯৯৪ এর এক দুপুর। মাদার তখনও ফাদার বুশের সাথে কথা বলছেন। খুব গম্ভীর কোনও বিষয়। আমি তো তখন সেবা, শান্তি এসব বুঝি না। খেলা, পড়া...সব শুরু। আরেকটা মজার কথা। তখন আমাদের স্কুলে আবৃত্তির আলাদা নম্বরের বিষয় ছিল। আমি পারতাম না কবিতা মুখস্থ করতে। আজও পারি না। আবৃত্তি তাই তখনও ছিল না। কবিতা আমার সাথে না থাকলেও সেদিন মাদারের কাছে দুপুর ১২টায় টিফিনে টিফিন বাক্স হাতে গেলাম।
মজা হল আমি তো বুঝি না, মাদারকে বললাম গুড আফটার নুন। উনি বাংলায় বললেন “কাছে এসো।” ফাদার বললেন “এখন যাও।” আমি শুনলাম না। হাসতে হাসতে ঢুকে গেলাম ঘরে। ভয় ছিল না। এটা ভেবে অবাক লাগে। কবিতার জন্য বোধহয় ভয় থাকতে নেই। সেই বীজ সে সময় থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মাদার আমায় আদর করলেন। আমার গাল দুটো ধরে নাড়লেন। লাল হয়ে গেল। বললাম “তুমি খাবে না!” আমি তো কবিতা এতো বুঝতাম না, কাকে কি বলতে হয় সরল মনে কিছু ছিল না। বললেন “কি এনেছো?” আমি টিফিন বাক্স খুললাম। মা বাড়ি থেকে আলু সেদ্ধ কেটে তাতে লেবু, নুন দিয়ে মাখানো। উনি একটা আলু খেলেন। ফাদার বুশে ডাকলেন বেত হাতে...। আমি গিয়ে বুশের হাত ধরে ঝুলে পড়লাম...মাদার ও বুশে হেঁটে চলে গেলেন প্রিফেক্ট বিল্ডিং-এ...আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম কবিতায়। আজও কবিতায় দাঁড়িয়ে আছি। সেন্ট টেরেসা...হেঁটে চলেছে স্কুলের সেই পিচের রাস্তা ধরে। ভালোবাসার শান্তি ও অশ্রু আমার সম্বল।
এই কবিতা মনে আমাদের স্কুল মাঠের উল্টো দিকে চলে যেতাম। বসে দেখতাম স্কুল বিল্ডিংটা। লেখা ছিল উপরে চার তলায় সেন্ট লরেন্স...প্রশ্নটা কিছুদিন পড়েই মাথায় এসেছিল...মাদার করে সেন্ট হবেন? তখন বুঝিনি...তার কিছু বছর পর উনি সমাধিস্থ হন... তবে আমার সেই দিন, সেই ভালবাসা, সেই চোখ, সেই শান্তি আমায় অনেক কবিতা দিয়েছে। আমি হয়তো শান্তি প্রচার করতে পারিনি, ত্যাগ করতে পারিনি...তবে আশা রইল সেন্ট টেরেসা একদিন আমি কবিতার শান্তিতে তোমার সেদিনটিকে স্মরণ করবই। আমার কবিতায় তুমি দিয়েছিলে....আগুনের পরশমণি...মঙ্গলালোকে সে আলো প্রজ্জ্বলিত হবেই। তা আমি যতই অপদার্থ হই না কেন...