কবিতার কথায় কিছু মনীষীর দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক...কথামৃত থেকে...এবারে ঠাকুর সম্পর্কে মাস্টারমশাই স্বগতোক্তি করছেন, "হাত একবার মাথার উপরে রাখলেন, তারপরে কপালে, তারপরে কন্ঠে, তারপরে হৃদয়ে, তারপরে নাভিদেশে।" কেন দিচ্ছেন, তা কিন্তু তিনি তখন কাউকে খুলে বলেন নি। মাস্টারমশাই ভাবছেন, "শ্রীরামকৃষ্ণ কি ষট্ চক্রে আদ্যাশক্তির ধ্যান করছেন? শিবসংহিতাদি শাস্ত্রে যে যোগের কথা আছে, এ কি তাই? " তন্ত্র শাস্ত্রে চক্রের স্থান এইগুলি। --- মুলাধার, স্বাধিষ্ঠান, মণিপুর, অনাহত, বিশুদ্ধ, আজ্ঞা। এই ছয়টি চক্রের উপরে সপ্তম হল সহস্রার। সেখানে
গেলে আদ্যাশক্তি পরম শিবের সাথে মিলিত হন, অর্থাৎ সেখানে ব্রহ্ম ও শক্তি দুইই এক হয়ে যান। এইটিই হচ্ছে চরম সমাধি স্থান। সেখানে শক্তির আর কোনো পৃথক কোনো প্রকাশ, কোনো ক্রিয়া নেই। ঠিক এখান থেকেই কবিতার সূচনা।
আমাদের মনে রাখতে হবে এই চক্র গুলি শারীরিক কোনো সংস্থান নয়। শরীরের অংশ কেটে কিন্তু এই চক্র গুলি কে দেখা যাবে না। এইগুলি যোগীর অনুভবগম্য। কবিতাও তাই। কবিতার মধ্যে দিয়ে যোগীদের মতো ঈড়া, পিঙ্গলা, সুষুম্না নাড়ি দেখতে হবে। তবে দেহ বিজ্ঞানীরা বলেন শাস্ত্রে যেভাবে চক্রের বর্ণনা আছে সেইভাবে দেখা না গেলেও ঐ সব জায়গায় স্নায়ুগুলি গিয়ে যেন জট পাকানো অবস্থায় আছে দেখা যায়। Spinal ganglia র সাথে চক্রগুলির একটু সাদৃশ্য আছে, এই মাত্র। আসল চক্র গুলি যোগী-র ধ্যান গম্য, স্থুল শরীরে এদের সত্তা নেই।। যাই হোক এই কুল কুন্ডলিনী ও ষট্ চক্র পেরিয়ে কবিতার দিকে এগিয়ে যেতে হবে। খারাপ চিন্তা মন থেকে সরিয়ে দিয়ে আমাদের চেষ্টা করতে হবে ভালো কবিতা লেখার। আচার শুদ্ধ রেখে সংসারের আকর্ষণের মোহ থেকে মুক্তি হয়ে কবিতা যাপন বড় প্রয়োজন। ব্যাবহারিক জীবনে সত্য নিষ্ঠা ইন্দ্রিয় সংযম, সন্তোষ প্রভৃতি সৎ ভাব গুলি কেমন করে আরও উন্নত করা যায় সেই দিকেই আমাদের দৃষ্টি দেওয়া উচিত সব থেকে বেশি।
তবেই কবিতা আসবে কবিতার মতো করে। সমস্ত দুর্বোধ্য কবিতা স্পষ্ট হবে। উপনিষদ, কোরান, বাইবেল জানতে হবে। তবেই তো কবিতার আলোক দর্শন বুঝব। না হলে তো রোজ মারপিট, অভিশাপ। কবিতা কিন্তু তা নয়। কবিতা তো উপলব্ধি। পাঠকরা বুঝুন ও লিখুন। আমিও তো কবিতা চাই।