লালন দেহের চেতনার সাথে বিশ্বচেতনার মিলনের কথা বারংবার বলেছেন। বলেছেন সে সব কবিতায়, দোয়ায়। আমি সে সব পড়েছি। রামকৃষ্ণ পরমহংস, স্বামীজি সকলকেই বলেছেন যত মত...ততগুলোই পথ। কিন্তু আসলে সমস্তটাই এক। একেশ্বরবাদ। সর্ব ধর্ম চেতনার মিলন। এই মিলনের স্থানটাই তো কবিতা।
কবিতার নিজস্ব গলিপথ রয়েছে। কবিতার নিজস্ব কুঠুরি রয়েছে। পৃথিবী থেকে বিশ্বে পাঁচটা এলিমেন্ট আমাদের চালনা করে...সাথে মানবতার অহং, বুদ্ধি, মন মিশে যায়। নব চেতনা। রেনেসাস।
এই নব চেতনার জন্যই প্রাণশক্তির প্রয়োজন। কবিতার হাত ধরেই সাধারণ মানুষজন এই চেতনায় পৌঁছাতে পারেন। সাধারণের দল নিজের সাংসারিক কাজ করেন। বৌ, বাচ্চা, চাকরি, উপার্জনের পথগুলো স্পষ্ট। তবে এই সবের মধ্যে তো তেমন কবিতা নেই। কবিতা তো শুরু হয় মানুষ যখন এসবের ঊর্দ্ধে কিছু অনুভূতি দিয়ে ভাবতে শুরু করে। ঠিক সেখানেই কবিতারা প্রাণশক্তিকে খুঁজে পায়। সেখানেই বিশ্ব চেতনার সাথে কবিতার যোগ। রবি ঠাকুর সেই চেতনায় উন্নীত হতে পেরেছিলেন। সকলে সেই লেখনিতে পৌঁছান না। আসলে সাধারণের মধ্যে অনেক রাগ, বিদ্বেষ আর হিংসে। নিজে না বুঝলেই ঝগড়া শুরু করে দেয়। আর নিজে দোষ করলে নিজের গায়ে অন্যের কথাদের বসিয়ে দেয়। এটাই তো মজা কবিতা। কবিতার প্রাণশক্তি আলাদা একটি বিষয়।
সেই প্রাণশক্তিকে ছোয়া, স্পর্শ কিছুই করা যায় না। সে তার নিজের গতিপথ ধরে এগিয়ে চলে। ধরা যাক রাস্তায় জ্যাম। অনেকটা পথ যেতে হবে। আপনার খুব জলদি। নেমে হেঁটে সেই স্থানে গেলেন। আর কেউ গাড়ি করেই সেখানে পৌঁছালেন। এই দুটো পথের মাঝে মাধ্যম তো পা। কেউ পা ব্যবহার করলেন, কেউ নয়। মানে কেউ সাধারণ প্রকৃতি নিয়ে লিখলেন কবিতা, কেউ শুধু সমাজ। কেউ আবার দুই মিলিয়ে বিমূর্ত। সমাজের আসল নগ্ন চিত্র ফুঁটিয়ে তুলতে গেলেই আপনাকে গালি খেতে হবে। যারা কবি হয়, নরম থাকতে চায়, তারা ঐ নগ্নতা দেখতে চায় না। কিন্তু ঐ নগ্ন সমাজ দেখলে তবেই তো কবি হিসেবে আপনি প্রাণশক্তির কাছে পৌঁছাবেন।
ভাবতে ভাবতে পৌঁছানো যায় না সমাজের কাছে। প্রাণশক্তির কাছে যাওয়ার পথে যোগক্রিয়া প্রয়োজন। সেই প্রয়োজনে কবিতা বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে। আর সেই ভূমিকার পথগুলো অন্যরকম। অনেকটা ঘুম, অনেকটা চিন্তা, অনেকটা শান্তি। কবিতা যা দিতে পারে। কবিতাই সে পথে অনন্তের সাথে মিলনের পথ চিনিয়ে নিতে পারে। এখন ভাবুন কী করবেন। প্রাণশক্তির কাছে ফিরবেন...নাকি সাধারণ পথে চলবেন। এ পথে ছটি কুন্ডলীনীর পথ পেরিয়ে শূন্যতায় পৌঁছাতে হবে। কবিতার পথ সত্যই বড় কঠিন। সকলে সে আলো, সেই আলোকবর্তিকা, আলোলিকার কাছে পৌঁছাতে পারে না। কবি তো সকলে নন, কেউ কেউ... নিন্দুকরা খারাপ মানে করবেন না। আমি শান্তির আলোকে দেখানোর জন্য উদাহরণ দিলাম। তাই কবিতায় থাকুন, সকলে কবিতায় ফিরুন। ওঁ শান্তি, ওঁ শান্তি, ওঁ শান্তি।