বউ কথা-কও পাখি যখন ডাকত,
ভাবতাম কবে বউ হবো।
বউ এখন আমি হয়েই গেছি,
সংসারের সব দায় দায়িত্ব মাথা পেতে নিয়েছি।
যদিও, বউ শব্দটা মাত্র দুই অক্ষরের,
এখন বুঝি কথাটির তাৎপর্য, সংসারের মধ্যে থেকে।


বউ থেকে যখন মা হলাম,
ভাবলাম, এ কোন স্বর্গ আমি হাতে পেলাম।
মা হয়ে বুঝলাম মা কথাটার মানে।
এই ছোট্ট শব্দটার মধ্যে লুকিয়ে আছে,
ত্যাগ, ভালোবাসা , মায়া-মমতা।
কোনো এক মা-ই পারে তার সন্তানের জন্য
তার শখ-সৌখিনতা হাসি মুখে বিসর্জন দিতে।
জীবনে কিছু চাওয়া-পাওয়া থাকতে পারে,
একথা সে ভুলেই যায় ,সন্তানদের মানুষ করার তারনায়।
কিন্তু মা কি পায় সন্তান দের কাছ থেকে?


আবার যখন শাশুড়ি হলাম,ভাবলাম,
এবার আমার ছুটি।
সন্তান মানুষ করেছি, প্রতিষ্ঠিত করেছি , বিয়ে দিয়েছি।
এবার শুধু ওপারের ডাকের অপেক্ষায়।
কথায় বলে, আসল থেকে সুদ বড়।
নাতি-নাতনি দের মুখ চেয়ে মনে হয়
যেন, আরও কটা দিন সুস্থ থাকি,ভাল থাকি।
নাতি-নাতনির একজনের বয়স পাঁচ ,এক জনের সাত।
বউমার আবার চাকরি করতে হল সাধ।
দুটো বাচ্চা কে পাঠিয়ে দিল দূরে,
বাইরে নাম করা এক হোস্টেল এ,
এখন সমস্যা আমি আর আমার এই বাড়ি।
কারন অনেক দূরে তাদের চাকরি করতে যেতে হয়।
সারাদিনের এতো পরিশ্রম ধকল তারা নিতে পারে না।
তাই ঠিক করল, বাড়ি-টা তারা বেচে দিয়ে ফ্ল্যাট কিনবে।
বাড়ি বিক্রির কথা শুনে বুক-টা কেমন কেঁপে উঠল ।
দু চোখ ভরে জল এল।
ফেলে আসা দিনগুলোর কথা মনে পরতে লাগলো,
একটু একটু করে পয়সা জমিয়ে,
মোজাইক করা সখের বাড়ি করেছিলাম,
এক তলা মেয়ে জামাই এর জন্য ,
আরেক তলা ছেলে বউ এর জন্যে।
বাড়ির পাশে একটা সবেদা গাছ,
তার নিচে বসে বিকালের আড্ডা জমে যেত।
আমার জীবনের অনেক ইতিহাস বহন করে এই গাছ টা।
এদিকে বাড়ি বিক্রি-র কথা শুনে মেয়ে জামাই চলে আসলো সম্পত্তির ভাগ নিতে,
ওরা যখন পাশের ঘরে টাকা পয়সার ভাগ নিয়ে কথা বলে,
তার সঙ্গে আলোচনা হয় আমাকে নিয়ে।
              হ্যা,
মা-কে তারা ভাগ করবে।
মায়ের খাওয়া পরার খরচ , ওষুধ পত্রের খরচ, এমন কি অন্তিম যাত্রার খরচ ,প্রচুর ব্যয় বহুল।
সত্যি, এখন যা দিনকাল পড়েছে ,
তাতে মায়ের পেছনে এতো গুলো টাকা খরচ করা,
পুরো ফালতু ।


এখন আমি আশির দোর-গোরায়
আমার ঠিকানা কোন এক সেবাশ্রম ।
আমার সাথি, একটা পেন আর ডায়রি।
মনের যত জমানো কথা, একমাত্র তাকেই জানাই।
আমার ছেলে মেয়ে-রা আমার খোঁজ নেয়,
পুজোর ছুটিতে আসে , মাঝে মধ্যে ফোন করে,
আর তো কিছু চাওয়ার নেই আমার ...........