কবি সেই ব্যক্তি যিনি কবিত্ব শক্তির অধিকারী এবং কবিতা রচনা করেন।
তবে বাংলা ভাষার প্রধানতম আধুনিক কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছেন, “সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি”। অর্থাৎ কবিতা লিখলেই বা কবি অভিধা প্রাপ্ত হলেই কেউ কবি হয়ে যান না। একজন প্রকৃত কবির লক্ষণ কী তা তিনি তাঁর কবিতার কথা নামীয় প্রবন্থ গ্রন্থের বিভিন্ন প্রবন্ধের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।প্রেক্ষাপট উৎপত্তি রহস্যসংজ্ঞা নির্ধারণকবির বেদনা-বিদ্ধ হৃদয়ই কবিতার জন্ম-ভূমি। অর্থাৎ, সময়-বিশেষে কোন একটি বিশেষ সূত্রকে অবলম্বন করে কবির আনন্দ-বেদনা যখন প্রকাশের পথ পায়, তখনই কবিতার জন্ম। কবি বেদনাকে আস্বাদ্যমান রস-মূর্তি দান করেন। ব্যক্তিগত বেদনার বিষপুষ্প থেকে কবি যখন কল্পনার সাহায্যে আনন্দমধু আস্বাদন করতে পারেন, তখন বেদনা পর্যন্ত রূপান্তরিত ও সুন্দর হয়ে উঠে। বেদনার যিনি ভোক্তা, তাঁকে এটি দ্রষ্টা না হতে পারলে তাঁর দ্বারা কাব্য-সৃষ্টি সম্ভব নয়।
একজন কবি তাঁর রচিত ও সৃষ্ট মৌলিক কবিতাকে লিখিত বা অলিখিত উভয়ভাবেই প্রকাশ করতে পারেন। একটি নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপট, ঘটনাকে রূপকধর্মী ও নান্দনিকতা সহযোগে কবিতা রচিত হয়। কবিতায় সাধারণতঃ বহুবিধ অর্থ বা ভাবপ্রকাশ ঘটানোর পাশাপাশি বিভিন্ন ধারায় বিভাজন ঘটানো হয়। কার্যত যিনি কবিতা লিখেন, তিনিই কবি।বাইরের জগতের রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শ-শব্দ বা আপন মনের ভাবনা-বেদনা কল্পনাকে যে-লেখক অনুভূতি-স্নিগ্ধ ছন্দোবদ্ধ তনু-শ্রী দান করতে পারেন, তাকেই আমরা কবি নামে বিশেষিত করি।অনেকে বলেন যে, যিনি জগতের একখানি যথাযথ স্বাভাবিক চিত্রপট এঁকে দিতে পারেন, তিনিই যথার্থ কবি । অর্থাৎ, কবি জগতের ভালো-মন্দের যথাযথ চিত্র অঙ্কন করবেন।


কবি হয়ে উঠতে হলে সাধনা প্রয়োজন।সাধনা হলো শব্দের সাধনা ,রূপকল্পের সাধনা , ছন্দের সাধনা।কেউ কেউ হয়ত প্রতিভা নিয়েই জন্ম নেয়।তারপরও সাধনার বিকল্প নাই।পড়ার বিকল্প নাই।আর অনুকরণ না করে অনুসরণ করতে হবে।ভাল লেখকের কাছ থেকে শব্দ ধার করা অপরাধ বলে আমি মনে করি না।যেমন পটল চেরা চোখ , কালো হরিণ চোখ ,চপল ফড়িং ,চঞ্চল হরিণ ।এ রকম অনেক শব্দ বা উপমা বার বার ব্যবহার হয়।নানা কবি নানা কবিতায় এমন সব শব্দ বা উপমার ব্যবহার করে করেছেন ।এটাকে চুরি বা অনুকরণ বলতে চাই না।সয়ং রবি ঠাকুর এর লেখায় শেক্সপিয়ার ও লালন ফকিরের অনেক ছাপ পাওয়া যায়।বরং শব্দকে ভিন্নভাবে ব্যবহার করে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে নতুনত্ব দেয়াও একটি যোগ্যতা । তাই আসুন নিজেকে কবি অথবা নিজের লেখাকে কবিতা না মনে করে আপন মনে লিখে যায় আর শব্দের সন্ধান করি।