সত্যসাধন বাবু অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক
মাটির মানুষ
নিরামিষ আহারী
পঁচাত্তর বছরের অহিংস মানুষটি
মনে প্রাণে এখনো যুবক;
সনাতন আদর্শ
তাঁর জীবন চর্যা,
দেশের স্বাধীনতা লাভের আগে তাঁর জন্ম
দেশের স্বাধীনতা রক্ষার সাধনা তাঁর কর্ম ।
তিনি ঠোঁট কাটা মানুষ
সহজ কথা সরল করে বলেন,
সদাচারে তিনি অভ্যস্ত,
তিনি বলেন - অর্থ নয় হৃদয় গড়ো,
গোষ্ঠী নয় বিশ্বাস গড়ো,
হিন্দু মুসলিম খ্রীস্টান ভেদ তিনি মানেন না।
উঁচুজাত নিচুজাত ভেদ তিনি মানেন না।
মানুষই তাঁর কাছে বিবেচ্য।
সত্যি সত্যি
যাকে বলে ধার্মিক মানুষ তিনি তাই
কিন্তু সমাজের চোখে তিনি অব্রাহ্মন,
নিচুজাতের মানুষ।
হাজার ভাল গুণ থাকলেও তিনি
নাকি গুণহীন।
তিনি গ্রামের মানুষ।
গ্রামই তাঁর কাছে স্বর্গ
তাই চাকরী পেয়েও তিনি শহরে যাননি।
কিন্তু গ্রামের-ই কিছু
মিথ্যাবাদী অহংকারী মানুষদের সাজানো কাণ্ডে
তিনি নাকি অপরাধী,
কিন্তু তিনি সোজাসুজি কথা বলেন
মিথ্যাকে মিথ্যা বলেই চিহ্নিত করেন
তোষামোদ কারো করেন না -
যাকিনা এযুগের পক্ষে ঠিক নয়,
এযুগে মিথ্যা কথাকেও চকলেটের মত মোড়কে সাজাতে হয়।
এযুগে টাকার লোভে চরিত্রকে বিক্রি করতে হয়।
এযুগে ক্ষমতার লোভে রাজনৈতিক দলে নাম লেখাতে হয়।
তার পর মিথ্যা কথা বলতে বলতে
মিথ্যা কথা বলতে বলতে
চারপাশের মানুষজনকে পা দিয়ে ডলতে ডলতে
তুলে ধরতে হয় রক্তমাখা দলের পতাকা।
সত্যসাধন বাবুর এরকম কোনো গুণ নেই
তাই তিনি কি এই সমাজের বাতিল মানুষ ?
প্রতিবেশীরা বললেন পঞ্চায়েত মেম্বারকে
মেম্বার বললেন গ্রামের প্রধানকে
প্রধান বললেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে
সভাপতি বললেন মন্ত্রীকে
মন্ত্রী বললেন জেলার নেতাকে।
জেলার নেতা বলে পাঠালেন- শুনেছি মানুষটি সুবিধার নয়।
অমনি সত্যসাধন বাবু একঘরে হলেন
তার মুনিষ বন্ধ হল
তবু তিনি এখনো বলেন - চাকরি নয় চরিত্র গড়ো
তার সুযোগ সুবিধা বন্ধ হল
আর হিংস্র প্রতিবেশীদের দাঁত নখ আরো ছুঁচালো হল
আগে তারা হলুদ পতাকা তুলত
এখন তারা বেগুনী পতাকা তোলে
আর হুমকি দেয় – গ্রাম ছাড়ো
আমাদের সমাজ ছাড়ো।