গালিব, অন্তত কবি গালিব, তাঁর ঈশ্বরের ভাবচ্ছবি রচনা করেছিলেন তওয়ায়েফ-প্রেম উপলব্ধ উপাদান দিয়ে। তওয়ায়েফ বলতে আজ আমাদের মনে অবজ্ঞা জাগে, গালিবের সময় জাগত না। রূপে তো এঁরা অনন্যা ছিলেনই, নৃত্য বাক-পটুতা ইত্যাদি গুণেও সেরা ছিলেন। এই গুনগুলিকে অবশ্য বলা যেতে পারে নান্দনিক গুণ(Aesthetic quality)। চারিত্র্যনৈতিক গুণ (Moral quality) তওয়ায়েফদের মধ্যে প্রত্যাশা করা যায় না। তাই গালিবের ঈশ্বরভাবনায় নান্দনিক গুণের প্রাচুর্য দেখি এবং চারিত্রনীতিক গুণের অপ্রতুলতা। সর্বজীবের প্রতি অন্তত সকল মানুয়ের প্রতি তাঁর করুণা ও প্রীতি অপার, পিতার মতন শাসন করলেও তিনি পিতার মতনই স্নেহশীল, তাঁর বিধান সর্বতো ভাবে মঙ্গলময় ও ন্যায়নিষ্ট, অমঙ্গল বা অন্যায় আমরা যা দেখি সেটা আমাদেরই আংশিক দৃষ্টি বিভ্রম -এমন ভাবধারা গালিবের মনে দানা বাঁধেনি, অন্তত কাব্যে তার প্রকাশ অত্যন্ত বিরল; ইশ্বরের রূপকে রূপের পরম বা পরাকাষ্ঠা বলেছেন। সেই পরমরূপের প্রকাশ রবীন্দ্রনাথ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে দেখেছেন যততটা মানুয়ের রূপে ততটা দেখেননি। প্রতিতুলনায় গালিব, রূপসীদের মধ্যেই পরমরূপের আভাস পেয়েছেন বেশি।সুর নয়. অতি অল্পই লাল ও গোলাপের মধ্যে রূপ নিয়েছে না জানি কী রূপসীই ছিলেন যাঁরা এই মাটির তলায় চাপা পড়ে আছেন।সুন্দরী নারীর রূপের তেমনি পরমরূপে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভগ্লাংশমাত্র আমরা দেখতে পাই রূপসী নারীর মনোহরণ রুপে। (অংশ)