কাঁদলেই প্রেমিক তুমি ?
ঝরিত সুখের টুকরো কুড়িয়ে স্মৃতির রুমালে বেঁধে পান্জাবীর পকেটে রেখে
আড্ডায় বসে আনমনে পকেট ছুঁয়ে আক্ষেপে সিগারেট ফুঁকলেই
প্রেমিক তুমি ?


হাত কেটে রক্তের ছোপে
নীল কাগজে গোটা গোটা অক্ষরে লেখো ধার করা দুঃখবাণী,
চুরি করা দু-চার লাইনের কবিতা, লিরিকস ...
অথবা ব্যর্থ প্রেমের আর্কাইভে রাখা মাঝারী মানের ভাব,
ব্যস ! হয়ে গেলো প্রেম ?


স্বল্পবসনা বার্বীডল অবয়বের কুমারী, বা
আসমান প্রান্তরের মিলনদৃশ্য,
অথবা কখনও আদম-হাওয়ার রোমান্টিক লদকালদকির রয়ালটিহীন ছবি
খুঁজে খুঁজে জমিয়ে রোজকার কাজকর্ম সরিয়ে ভাবো ....
আপলোড দেবো, স্ট্যাটাস লিখবো,
ক্ষণে ক্ষণে পড়বে কমেন্ট, লাইক, ইমো ...
হয়ে গেলো প্রেম ?
বুঝে গেলো তোমার তীব্র হাহাকার কিছু লাইকার ফলোয়ার ?


টেক্সট ভাইবার মেসেন্জারে পাঠানো কথার বহরে
সহস্রবার লেখা “ভালোবাসি, ভালোবাসি তোমাকেই ...
কেমন আছো সোনা গো, মনা গো তোমার জন্য প্রাণ কাঁদে গো” ...
ব্যস ! এই-ই ফর্মুলা ?  হলো ?


ফর্মুলাতেই যদি প্রেম হতো
রাধা হতো ঘরকুণো ... ধান ভানতো, পা টিপতো, পোড়ামুখি গাল শুনতো,
জুলিয়েট চাকরী নিতো পুলিশে, নীলা বসতো আয়কর অফিসে, আর
খোঁপাভর্তি বেলীফুল নিয়ে
মায়ের ঢলঢলে ব্লাউজ আর গরদ শাড়ি পরে বৈশাখের বাষ্পে ঘেমে নেয়ে
অবিদিত কোনো সপ্তাদশী কারও জন্য অপেক্ষা করতো না ফুটপাথে ...


আধপেটা খেয়ে হারিকেন জ্বালিয়ে
সংশয়িত ক্লান্তি, দারিদ্রের নিরেট দেয়াল আর অদৃষ্টের অপমান ভুলে
বেকার, অবহেলিত, নিঃস্ব, প্রত্যাখাত কোনো কবি
এতো শত প্রেমের কবিতা লিখতো না ...
মাসের একুশ তারিখে শূন্য ব্যাংক ব্যালান্স নিয়ে
ঈদের সকালে হাসিমুখে পারিবারিক নাস্তার স্বপ্ন দেখতো না কোনো পিতা ...


ফর্মুলাতে প্রেম হলে  
লজ্জা পেতো না কোনো নারী,
হাত ধরলে চোখ বন্ধ হতো না কারও ...
প্রথম সঙ্গমে ঝরতো না চোখের জল ...
মাতৃত্বের স্বপ্নে বিভোর হতো না কেউ ...
অথবা কখনও একাকী আবেশে বিবসনা হয়ে
নবধারা জলে ভিজে খুঁজতো না কেউ অভিষবণ  ...


অন্য কারও সুখে কারও মনে মেলা বসতো না ...
ডানাভাঙা পাখি দেখে পিঠে ব্যথাবোধ হতো না কারও ...
জেলখানার গেটে কেউ কারও অপেক্ষায় থাকতো না টিফিন ক্যারিয়ার হাতে  ...
অমোঘ মৃত্যুশয্যায় অচেনা কেউ হাত ধরে আশ্বাসের দৃষ্টি মেলে বলতো না,
“আর একটু ... এই তো ... আর একটু ... সব ঠিক হয়ে যাবে।”


ফর্মুলাতে প্রেম হলে
ফর্মুলারাই কথা বলতো, কবিতা লিখতো, স্বপ্ন আঁকতো, সুখ বুনতো,
আর এরপর সব ছেড়েছুড়ে চলে যেতো
স্বেচ্ছা নির্বাসনে ...  অকারণেই।


আমরা এসব কিছুই করতাম না।