ঝড়ের কবলে পড়েছিলাম বলে তুমি আমাকে ঠাঁই দিয়েছিলে সে রাতটুকু
দেখে মনে হয়েছিল তুমি অন্তঃসত্বা ছিলে
তোমায় আমি অল্প অল্প চিনতাম
নরেশ বাবুর ইংরেজী ক্লাশে তোমার আমার আড় চোখাচোখি হয়েছে কয়েকবার।
তারপর কতকাল কেটে গেলো মনে রাখনি বলে
সত্যি সত্যি মনের মধ্যের যন্ত্রনার ঝড় থামিয়েছিলাম।
তবে কেন যেন তুমি একটি পত্র দিয়েছিলে
লোক মারফত আমার বরাবরে
জানতে চেয়েছিলে তোমার দেহে জন্মনেয়া শিশুটির কী নাম দেবে অন্তত।


পুরাণ ঢাকার অলিগলিতে তখন দুর্গা পূজোর আয়োজন চলছিল খুব
ব্যস্ত নগরীর অলিগলি কখনোই ঘুমোয়না নিশ্চুপে আমার মতো মনের শ্মশানে পুড়িয়ে চলে বুড়িগঙ্গা, শাঁখারী বাজার বকশীবাজার ,মাহুতটুলী, কায়েৎটুলি কিংবা আধখানা চাঁদ দেখতে যাওয়া মাঝরাতে পুরাণ ঢাকার মেঘমুক্ত আকাশ।


অনেকটা অবজ্ঞার স্বরে পত্রখানার উত্তর একটি শব্দে দিয়েছিলাম মাত্র। পত্রবাহকের হাতগলে তোমার হাতে পৌঁছাবে কিনা আদৌ সে চিন্তা করিনি কখনো


ব্যস্ত নগরীর ব্যস্ততায় সে ঝড়ের রাত্রির মতো নিত্য ঝড়ে বিদীর্ণ হই প্রত্যহ প্রতিদিন,
বাস্তবতার নির্মম যাঁতাকলে পিষ্ট হতে হতে আমিও কখন যে ধাতব হয়ে গেছি সে হিসেব কেইবা জানে! পত্রখানার উত্তর তাই স্বযত্নে করতে পারিনি বলে আফসোস হয় বার বার।


মাঠের পারের দূরের দেশটা দেখতে যাওয়া অপু-দুর্গার মতো সুখের তেপান্তর খুঁজতে খুঁজতে একসময়
আবার আমাদের দেখা হয়, কথা হয় চোখের প্লাবনে
জানিনা সরসিত চোখের জলে কী কল্পরেখা আঁকা ছিল সেইদিন,
শুধু সঙ্গে থাকা তোমার জেরক্স কপিকে শুধোলুম," কী নাম তোমার? "
ও' আমাকে আমার একটিমাত্র শব্দে লেখা পত্রখানার উত্তরটা বলল মাত্র।
বলছিল ওর জন্মের আগেই তার মায়ের পরিচিত কোন এক কবি তাহার নামটি রেখে দিয়েছিল, "দুর্গা।"


সেই থেকে আমার বুকের ব্যথাটা বেড়েই চলেছে


মনে হচ্ছে তোমার বুকের মধ্যিখানে স্রোতের মতো বইয়ে যাওয়া লালন করা ব্যথাটা আমাকে ও' খানিকটা পাঠিয়ে দিয়েছ যন্ত্রনার ভাগাভাগি করবার জন্যে।


আমি গ্রামে গঞ্জে শহরে বন্দরে হাঁটা এক পোড় খাওয়া
যন্ত্রনার যান্ত্রিক মানুষ,  মিথ্যে জীবনের বোঝা বয়ে নিয়ে যাচ্ছি অসুখের হাটে, আমাকে কেন আবার কষ্ট দাও, নিজের কষ্টকে বাড়াবে বলে ?  


আমি তো কবি নই! তোমার কাছেই তো শিখলাম কবি কারে কয়,  কবিতাই বা কী! কীভাবে রোপিত হয় এক একটি কবিতার বীজ।