অলঙ্কার কি?
——————-
অলঙ্কার শব্দের আভিধানিক অর্থ আভরণ, ভূষণ অর্থাৎ যা দিয়ে শরীরকে সজ্জিত বা ভূষিত করা যায়।সুতরাং নিরাভরণ দেহকে যেমন হার, দুল, বলয়, কাঁকন ইত্যাদি আভরণে মনের মতো সাজানো যায়, তেমনি কাব্য শরীরকেও কবিগণ বিভিন্ন অলঙ্কার দিয়ে ভূষিত করেন।
হার, দুল, বলয় এসব অলঙ্কার নারীদেহে যেমন সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে তেমনি কাব্যক্ষেত্রে অলঙ্কার মানে সৌন্দর্য।
খ্রীঃ সপ্তম-অষ্টম শতাব্দীর দিকে ভামহ, বামন প্রমুখ সাহিত্যাচার্য মনে করতেন, অলঙ্কারের গুনেই শুধু কাব্য গ্রহনযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে।অবশ্য তারা পরে বলে গেছেন যে, সৌন্দর্যই অলঙ্কার।
আচার্য দন্ডী বলেছেন, কাব্যের শোভাকর তথা সৌন্দর্যবিধায়ক ধর্মকে বলা হয় অলঙ্কার।
সুধীরকুমার দাশগুপ্ত বলেছেন, “অলঙ্কারশাস্ত্র এর প্রকৃত অর্থ সৌন্দর্যশাস্ত্র বা কাব্য সৌন্দর্যবিজ্ঞান, ইংরেজিতে যাহাকে বলা যাইতে পারে Aesthetic of poetry”.
ইংরেজিতে Alexander bain বলেছেন, “A figure of speech is a deviation from the plain & ordinary mood of speaking, with a view to greater effect”
এখানেও শব্দের সাধারণ অর্থ-অতিক্রামক সেই বৈচিত্র এবং সৌন্দর্যের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।


অলঙ্কার(সৌন্দর্য)=অশ্লীলতাদি বর্জন+মাধুর্যাদি গুন যোগ+অনুপ্রাস উপমাদি যোগ।অন্যকথায় বলা যায় অলঙ্কার Beautifying Instrument.অর্থাৎ কাব্যের শোভাবর্ধন করা তথা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করাই অলঙ্কারের ধর্ম।


অলঙ্কারের প্রয়োজনীয়তা কি?
———————————–
*কাব্যের সঙ্গে অলঙ্কারের সম্পর্ক পার্বতী-পরমেশ্বরের মত নিত্য।বস্তুত বাক্যের উপাদান যে শব্দ, তাতে আছে ধ্বনিসমষ্টি ও অর্থ, অলঙ্কার এ দুটিকে অবলম্বন করে গড়ে ওঠে এবং তা অনেক সময় কবির সচেতন প্রয়াস ব্যতীত সৃষ্টি হয়।
*রবীন্দ্রনাথ তার সাহিত্যের তাৎপর্য নামক প্রবন্ধে বলেছেন, “হৃদয়ের ভাব উদ্রেক করিতে সাজ সরঞ্জাম লাগে……উপমা তুলনা রূপকের দ্বারা ভাবগুলো প্রত্যক্ষ হইয়া উঠে।“ তাই অলঙ্কারের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না।
*”গুরু গুরু মেঘ গুমরি গরজে গণনে গণনে” কথা শুনলে তার পিছনে একটা ধ্বনি ছন্দের ভাবময় রূপ ব্যঞ্জিত হয়ে ওঠে; মেঘগর্জনের আভাস ধ্বনিত হয়ে উঠে। তেমনি সুকান্তের “পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি” এইটুকু শব্দচিত্রের ব্যঞ্জনা আমাদের মনে অনেক না বলা কথাকেই স্মরণ করিয়ে দেয়।


দেহসৌন্দর্য আর কাব্যসৌন্দর্যের মধ্যে পার্থক্য কি?
———————————————————
*দেহের অলঙ্কার আরোপিত কিন্তু কাব্যের অলঙ্কার সহজাত বিবেচ্য।
*প্রয়োজনে দেহস্থ যে কোন অলঙ্কার খুলে নেওয়া যায়, একটার জায়গায় আরেকটা দেওয়া যায় কিন্তু কাব্যে তা সম্ভব নয়।
*দেহ থেকে অলঙ্কার খুলে ফেললেও তেমন যায় আসে না কিন্তু কাব্যের দেহ থেকে অলঙ্কারকে বিচ্ছিন্ন করলে তার অপমৃত্যুর আশঙ্কা থেকে যায়।


অলঙ্কারের জন্যে এত নিয়ম কানুন জরুরী কেন?
—————————————————–
যে কোন সুন্দর পরিমিতি মানতে বাধ্য এবং অনিয়ম বা বিশৃঙ্খলা সবসময়ই সৌন্দর্য বিরোধী। অঙ্গদকে কেউ পায়ের মল হিসেবে ব্যবহার করতে রাজি হবে না কারন তা অনিয়ম। তেমনি কাব্যেও যথেচ্ছ অলঙ্কার চাপিয়ে দিলেই হয় না, বিচার করতে হবে সেটা নিয়মমাফিক কিনা, প্রয়োগসিদ্ধ কিনা।


শব্দ ধ্বনিকে শ্রুতিমধুর এবং অর্থকে মনোহর আর হৃদয়গ্রাহী করার জন্যে অলঙ্কারকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে- অ) শব্দালঙ্কার আ) অর্থালঙ্কার।


শব্দালঙ্কারঃ
অর্থবহ ধ্বনি সমষ্টিকে বলা হয় শব্দ। শব্দ বা ধ্বনিই শব্দালঙ্কারের নিয়ন্তা। অর্থাৎ যে অলঙ্কার ধ্বনির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং শ্রুতিসৌন্দর্য বিধায়ক তাকেই শব্দালঙ্কার বলা হয়।


শব্দালঙ্কারগুলো হচ্ছেঃ
১। অনুপ্রাস
২। যমক
৩। শ্লেষ
৪।বক্রোক্তি
৫।পুনরুক্তবদাভাস


১। অনুপ্রাসঃ
ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছ যদি যুক্ত বা বিযুক্তভাবে বাক্যমধ্যে একাধিকবার ধ্বনিত হয় তবে তাকে অনুপ্রাস বলে।
উদাহরন,
গুরু গুরু গর্জন- গুন গুন স্বর (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
এখানে “গ” পাঁচবার উচ্চারিত হয়েছে।


অনুপ্রাসের প্রকারভেদঃ
ক)অন্ত্যানুপ্রাস খ)বৃত্তানুপ্রাস গ)ছেকানুপ্রাস ঘ)শ্রুত্যনুপ্রাস ঙ)লাটানুপ্রাস


ক)অন্ত্যানুপ্রাসঃ
কবিতার পাদান্তের সাথে এবং চরণের শেষের শব্দটির সাথে পরবর্তী চরনের শেষ শব্দটির ধ্বনিসাম্য থাকলে তাকে অন্ত্যানুপ্রাস বলে।
ঊদাহরনঃ
১। সব পাখি ঘরে আসে-সব নদী-ফুরায় এ জীবনের লেন-দেন
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বলনতা সেন। (জীবনানন্দ দাশ)
এখানে প্রথম চরণের শেষের শব্দ লেনদেন এর সাথে পরবর্তী চরণের শেষ শব্দে সেন এর সাথে মিল আছে।
২।আমার অঙ্গন আঁধারে হল বন,
নিয়েছি বুক পেতে জলের দংশন। (শামসুর রহমান)
এখানে প্রথম চরণের শেষের শব্দ বন এর সাথে পরবর্তী চরণের শেষ শব্দে দংশন এর সাথে মিল আছে।
খ)বৃত্তানুপ্রাস
একটি ব্যঞ্জনধ্বনি একাধিকবার ধ্বনিত হলে, বর্ণগুচ্ছ স্বরূপ অথবা ক্রম অনুসারে যুক্ত বা বিযুক্তভাবে বহুবার ধ্বনিত হলে বৃত্তানুপ্রাস সৃষ্টি হয়।
এটি চারধরনের হতে পারে,
অ) একটি মাত্র ব্যঞ্জনের দুবার ধ্বনিত হওয়া-
ধ্বংস ও শান্তির মধ্যে মেরু-দূর প্রভেদ মানি না। (রফিক আজাদ)
এখানে শ, দ দুবার করে আবৃত্ত।
আ)একটিমাত্র ব্যঞ্জনবর্ণ বহুবার ধ্বনিত হলে
বাঙালি কৌমের কেলি কল্লোলিত কর কলাবতী (আল মাহমুদ)
এখানে ক ধ্বনি পাঁচবার ধ্বনিত হয়েছে।
ই)ব্যঞ্জনগুচ্ছ স্বরূপানুসারে মাত্র দুবার ধ্বনিত হলে
ফুটেছে যৌবন বনে আনন্দের ফুল
জেগেছে যৌবন নব বসুধার দেহে (শ্যামাপদ চক্রবর্তী)
বর্ণগুলোর (যৌবন বনে এবং যৌবন নব) ক্রম অক্ষুন্ন এবং ধ্বনিসাদৃশ্য বর্তমান।
ঈ) যুক্ত বা বিযুক্তভাবে ব্যঞ্জনগুচ্ছ ক্রমানুসারে বহুবার ধ্বনিত হলে
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথ- প্রান্তে ফেলে যেতে হয়। (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
এখানে যুক্ত “ন্ত” ক্রমানুসারে তিনবার ধ্বনিত হয়েছে।


গ)ছেকানুপ্রাসঃ
দুই বা ততোধিক ব্যঞ্জনধ্বনি যুক্ত বা বিযুক্ত অবস্থায় ক্রমানুসারে যদি মাত্র দুবার ধ্বনিত হয় তবে তাকে ছেকানুপ্রাস বলে।
উদাহরনঃ
অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে? (সুধীন্দ্রনাথ দত্ত)
এখানে অন্ধ ও বন্ধ দুটি শব্দের “ন্ধ” দুবার করে ধ্বনিত হয়েছে।


ঘ)শ্রুত্যনুপ্রাসঃ
বাগযন্ত্রের একই স্থান থেকে যে সকল ধ্বনি উচ্চারিত হয়, সেগুলো একই ধ্বনি হলেও সদৃশ ধ্বনি; সেই সদৃশ ধ্বনির সাম্যে জাত অনুপ্রাসকে শ্রুত্যনুপ্রাস বলে।
উদাহরনঃ
১।ক-খঃ
বলে দাও মোর সারথিরে ডেকে
ঘোড়া বেছে নেয় ভালো ভালো দেখে (রবীন্দ্রনাথা ঠাকুর)
এখানে লক্ষ্য করুন প্রথম চরনের শেষে “ক” ধ্বনি আছে আবার দ্বিতীয় চরনের শেষে “খ” ধ্বনি আছে। এটাই শ্রুত্যনুপ্রাস।
২।গ-ঘ
উল্লাসে হাঁকিয়া বলি, তালি দিয়া মেঘে
উন্মাদ উন্মাদ ঘোর তুফানিয়া বেগে।(কাজী নজরুল ইসলাম)
এখানে লক্ষ্য করুন প্রথম চরনের শেষে “ঘ” ধ্বনি আছে আবার দ্বিতীয় চরনের শেষে “গ” ধ্বনি আছে। তাই গ-ঘ যেমন হতে পারে তেমনি ঘ-গ হতে পারে।
এরকম আরো হতে পারে যেমন, চ-ছ, ট-ঠ, ত-থ, দ-ধ, র-ড় ইত্যাদি।


আরো কিছু অনুপ্রাস আছে বলে মনে করা হয়। সেগুলো দেওয়া হল।


ঙ)আদ্যানুপ্রাসঃ
কবিতার আদান্তের সাথে এবং চরণের প্রথম শব্দটির সাথে পরবর্তী চরনের প্রথম শব্দটির ধ্বনিসাম্য থাকলে তাকে আদ্যানুপ্রাস বলে।
উদাহরনঃ
যতবার লেখা শুরু করি
ততবার ধরা পড়ে, এ খবর সহজ তো নয়। (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
এখানে প্রথম চরণের প্রথম শব্দ যতবার এর সাথে পরবর্তী চরণের প্রথম শব্দ ততবার এর সাথে মিল আছে।


চ)মধ্যানুপ্রাসঃ
সাধারণত কবিতার চরণের মধ্যে ধ্বনিসাম্য থাকলে তাকে মধ্যানুপ্রাস বলা হয়।
উদাহরনঃ
চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা। (জীবনানন্দ দাশ)
এখানে “র” ধ্বনি কয়েকবার উচ্চারিত হয়েছে।
২।যমকঃ


একাধিক ব্যঞ্জনধ্বনি স্বরধ্বনিসহ নির্দিষ্টক্রমে সার্থক কিংবা নিরর্থকভাবে যদি একাধিকবার উচ্চারিত হয় তাকে যমক অলঙ্কার বলে।


উদাহরনঃ
১।ভারত ভারতখ্যাত আপনার গুণে। -ভারতচন্দ্র
এখানে ভারত শব্দটি দুইবার উচ্চারিত।
২।কীর্তিবাস কীর্তিবাস কবি
এ বঙ্গের আলঙ্কার। -মধুসূদন
এখানে কীর্তিবাস শব্দটি দুইবার উচ্চারিত।


প্রচলিত অলঙ্কারসমূহে চার রমক যমক আছে। আদ্য, মধ্য, অন্ত্য, এবং সর্বযমক


আদ্যযমকঃ চরণের আদিতে এ যমক ঘটে।
উদাহরনঃ
মৌ-লোভী যত মৌলভী আর মোল্লারা ক’ন হাত নেড়ে। -কাজী নজরুল ইসলাম।


মধ্যযমকঃ চরণের মধ্যভাগে এ যমক ঘটে।
উদাহরনঃ
তোমার এ বিধি, বিধি, কে পারে বুঝিতে। -মধুসূদন


অন্ত্যযমকঃ চরণের শেষে এ যমক ঘটে।
উদাহরনঃ
তখন একটি কবিতা তো নয়,
যখন রক্তে আকুল বিনয় -সৈয়দ আলী আহসান


সর্বযমকঃ অনেক সময় বহুর্থক শব্দযোগে বহুবিধ অর্থেও যমক অলঙ্কারে প্রয়োগ দেখা যায়।
উদাহরনঃ
কুসুমের বাস ছাড়ে কুসুমের বাস,
বায়ু ভরে করে এসে নাসিকায় বাস।
(বাস-আশ্রয়, গন্ধ, বসতি)


৩।শ্লেষঃ
একটি শব্দ বাক্যে একবার ব্যবহৃত হলেও যদি তার একাধিক অর্থ বর্তমান থাকে এবং শ্রোতা বা পাঠক উভয় অর্থই গ্রহণ করেন তখন শ্লেষ অলঙ্কার হয়।


শ্লেষ দু প্রকারঃ সভঙ্গ ও অভঙ্গ শ্লেষ।


সভঙ্গ শ্লেষঃ
শব্দটি অটুট থাকলে এক অর্থ এবং শব্দটি ভাঙ্গলে যদি ভিন্ন অর্থ দ্যোতিত হয় তবে তাকে সভঙ্গ শ্লেষ বলে।


উদাহরনঃ
অর্ধেক বয়স রাজা, এক পাটারাণী।
পাঁচপুত্র নৃপতির, সবে যুব জানি।।


যুবজানি- এক অর্থে, সকলকেই যুবক বলে জানি। অপর অর্থে- সকলেরই যুবতী স্ত্রী। যুবজানি শব্দের বিশ্লেষণে-যুবতী জায়া যার।


অভঙ্গ শ্লেষঃ
এখানে শব্দকে না ভেঙ্গেই একাধিক অর্থ পরিস্ফুট হয়।


উদাহরনঃ
মধুহীন কর না গো তব মন কোকনদে


একঅর্থে মনরূপ পদ্মকে মধুহীন করো না, অপর অর্থে মধুসূদন দত্তকে মন থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ো না।


৪। বক্রোক্তিঃ
বক্তা বা প্রশ্নকারী যদি কোনো কথাকে বিশেষ অর্থে ব্যবহার করেন অথচ শ্রোতা বা উত্তরদাতা সে অর্থ গ্রহন না করে কথাটিকে ভিন্ন অর্থে গ্রহণ করেন কিংবা সে অনু্সারে উত্তর দেন, তবে সেখানে বক্রোক্তি অলঙ্কার হয়।


বক্রোক্তি দুপ্রকার- শ্লেষ ও কাকু বক্রোক্তি।


শ্লেষ বক্রোক্তিঃ একটি শব্দ একাধিক অর্থে ব্যবহৃত হয় বলে একে বলা হয় শ্লেষ বক্রোক্তি।


উদাহরনঃ
আপনার ভাগ্যে রাজানুগ্রহ আছে
-তিন মাস জেল খেটেছি; আর কতদিন খাটব?
-রাজানুগ্রহ যে অর্থে বক্তা প্রয়োগ করেছেন-উত্তরদাতা সে অর্থে না ধরে জেলখাটা অর্থ ধরে উত্তর দিলেন।


কাকু বক্রোক্তিঃ এখানে বক্তার কণ্ঠস্বরের ভঙ্গিতে অর্থের পরিবর্তন ঘটে যায়; সাধারণতঃ বিধি নিষেধে এবং নিষেধ বিধিরূপে গৃহীত হয়।


উদাহরনঃ
কে ছেঁড়ে পদ্মের পর্ণ?
-অর্থাৎ কেউ পদ্মের পর্ণ ছেঁড়ে না।


৫। পুনরুক্তবদাভাসঃ
আপাতদৃষ্টিতে কোনো বাক্যে যদি মনে হয় একই অর্থে একাধিক শব্দ প্রয়োগ করা হয়েছে অথচ একটু মনোযোগ সহকারে বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায়, তারা ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত তাহলে পুনরুক্তবদাভাস হয়।


উদাহরনঃ
তনু দেহে রক্তাম্বর নীবীবন্ধে বাঁধা
চরণে নূপুরখানি বাজে আধা আধা।
তনু ও দেহ দুয়ের অর্থই এক, কিন্তু এখানে তনু ছিপছিপে অর্থে ব্যবহৃত।


অর্থালঙ্কারঃ
অর্থের উপর একান্তভাবে নির্ভরশীল অলঙ্কার মাত্রই অর্থালঙ্কার। শব্দলঙ্কার শব্দের পরিবর্তন সহ্য করতে পারে না কিন্তু অর্থালঙ্কার শব্দ পরিবর্তন ব্যাপারে সহনশীল, তবে অর্থটি অপরিবর্তিত থাকা চাই।


অর্থালঙ্কার পাঁচ প্রকারঃ


১। সাদৃশ্যমূলক অলঙ্কারঃ উপমা, উৎপ্রেক্ষা, রূপক, অপহ্নুতি, সন্দেহ, নিশ্চয়, ভ্রান্তিমান, ব্যতিরেক, প্রতীপ, সমাসোক্তি, অতিশয়োক্তি, দীপক, উল্লেখ, তুল্যযোগিতা, প্রতিবস্তুপমা, দৃষ্টান্ত, নির্দশনা, স্মরণ, সামান্য, সহোক্তি ও অর্থশ্লেষ।


২।বিরোধমূলক অলঙ্কারঃ বিরোধাভাস, বিভাবনা, বিশেষোক্তি, বিষম, ব্যাঘাত, অসঙ্গতি, অধিক, অনুকূল, অন্যোন্য।


৩।শৃঙ্খ্লামূলক অলঙ্কারঃ কারণমালা, মালাদীপক, একাবলী ও সার।


৪।ন্যায়মূলক অলঙ্কারঃ অর্থাপত্তি, অনুমান, উত্তর, কাব্যলিঙ্গ, তদগুণ, পর্যায়, পরিবৃত্তি, পরিসংখ্যা, সমুচ্চয়, সমাধি ও সামান্য।


৫।গূঢ়ার্থ-প্রতীতিমূলক অলঙ্কারঃ অর্থান্তরন্যাস, অপ্রস্তুত প্রশংসা, আক্ষেপ, উদাত্ত, ব্যাজস্তুতি, ব্যাজোক্তি, পর্যায়োক্ত, পরিকর, ভাবিক, স্বভাবোক্তি ও সূক্ষ্ন।


উৎস্বর্গীকৃত:
তাহমিদুর রহমান