1. ফুল
সহজ ফুলের মত এক একটা ফুল
আল্পনা আঁকে হৃদয়  উঠোনে
শিশির ভেজা ফুলের কাছে জেনে নেয়
মিলনের শ্বাশত প্রণালী
কুয়াশার গভীরে যৌবনের অবারিত ভুল
ফুলের মাটিতে শিকড়ের কান্নার ম্লান ছবি
ভোরের হাওয়ায় ফুলের জলশায়
লাভ ক্ষতি ভুল পথে
কাঁটা কীট বিষন্নতা ঘাসের জলে কাটে
সময়ের অবিশ্বাস্য সবুজ সাঁতার
অবাক অঙ্কুস্থলে.....


2. পাখি
চোখ আর চায় না ঘুমাতে
শরীরে এসেছে রূপালী স্বাদ
নিঃশ্বাসে পুড়ে
পাখিরা কথা কয় পরস্পর
তাদের ডানার ঘ্রাণ অপেক্ষায় থাকে
নক্ষত্রের আলো মৃত্যুর অজ্ঞানে
নেমে পড়ে জলের বাতাসে
পাখিদের ভাষাটা যদি জানতাম
জেনে নিতাম আমার ভেতরের আমি
জেনে নিতাম আরেকবার
পাতাদের আড়ালে
পাখিদের মন অচেনা কেমন
অভিশপ্ত মানুষের মন
কেন হয় পাখির মতন

  
3. বৃক্ষ
কোথায় আর যাবে তুমি, বৃক্ষ!
বরং থেকে যাও প্রাণজ জীবনের অগ্নি স্রোতে
চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়
এ জীবন আমার নয়
ভীষণ পুড়ে যাই আমি
শহর জুড়ে, রাস্তার মোড়ে, বৃক্ষ তলে
জ্বলছে মাতাল প্রদীপ
উর্বর আর যৌবনবতী কি এক কথা
ঝড়ের রাতে  মিথুনরত পায়রা হয়ে যায় পড়শি বৃক্ষলতা
সুবজশাখার সান্ধ্যসঙ্গীতে মেতে ওঠে অবিনাশী ক্ষুধা ...


4. নদী
বালিকার জল ছোঁব বলে
বার বার ডুবে যাই ভুল জলে
জলের অতলে জল নদী নয় নারী নয়
শুধুই জলের আকাশ
অশান্ত অশ্রুধারায় উদ্বেল শ্বাস
নভশ্চারী ভ্রমরের পাখায়
নদী ভাঙ্গে নদীর শপথ
পার্থিব শব্দের সৈকতে
বিস্ময় সত্য, পিপাসা সত্য
আর সত্য পাখিসত্তার গূঢ় প্রহর
ছায়শীতল জলে নিত্য বসবাস
যুথবদ্ধ মানুষ ও ঈশ্বর
নদীকে বোঝেনি বলে
মানুষ চেনেনি নিজেকে...


5. নারী
অকিঞ্চন অনুভব
একমুঠো বুনো আবেগ
নারীকে দ্বি-রুপ দিয়েছে
অযাচিত বীর্যের উষ্ণতা
নারীত্বের বিস্তর পথে
নীতি হীন কামুক সভ্যতা।


6. প্রেম
কী এমন হয় ছুঁলে তোমার হাতখানি
নিজের বাড়ি,নিজের মেঘ, নিজের আকাশ
দুচোখের শিশির জল তোমার জন্য ভাসাই
সন্ধ্যার প্রদীপ,পূর্ণিমা, প্লাবনে-রক্তে অনাগত কাল
খুঁজবে আমায়
মাঝরাতে এসো ভিজে যাই
চুম্বনের বৃষ্টিধারায়
প্রেমহীন স্বপ্নেরা খোঁজে শরীর মথন
আলাপের ইতিহাস নিয়ে  রক্তিম ক্রন্দন
দেহমন্দিরে যোগ্য পুরোহিত স্মৃতির আলস্য ঘুম ভেঙেচূরে
দেবে  অঞ্জলি আমার পরাজয়ে
যে-তুমি থাকো ভেতর-সত্তায় এবং একাকি
বুনো আবেগের অন্তরাল থেকে
একটি নিজস্ব ভুবন কি আমারে দেবে?


7. বিরহ
আমি বিরহের, কবিতাও তাই বিরহের
আমি কষ্টের, আমি দুঃখের
কবিতাও তাই কষ্টের এবং দুঃখের
ঘুনে খাওয়া হৃদয়ের ক্যানভাসে
অনবদ্য নারীর নাম আজও পাইনি
নিরবধি কবিতা খুঁজি,আকাশে খুঁজি,বাতাসে খুঁজি
নদীতে খুঁজি,শব্দে খুঁজি,খুঁজি কষ্টের বুকে
আমার কবিতার উনিশ বসন্তের স্পর্শিত যৌবন
তোমার দ্বিখণ্ডিত জিহ্বার  অদৃশ্য অস্ফুরন
আমাকেই ছুঁয়ে যায় বিবর্ণ স্বপ্নের শীষ!
ঠোঁটের স্পর্শে ঢেলে ছিলে গোখরার বিষ!



8. গোলাপি
  রঙ নেবে রঙ?
গোধূলী বিদগ্ধ গোলাপী রঙ
আমার বিবাগী আর অস্থির মন
তুলিতে তুলিতে আঁচড়ে আঁচড়ে
আমার রং বেরং
ধুসর গোধূলিতে তোমার গোলাপী ঠোঁট
সিঁদুর রাঙ্গা মেঘেতে গোলাপি ভোর
সন্ধ্যাটিও হলদে গোলাপি
এমন ধূসর বিকেল
আমার একাকিত্বের বিলাস
গোলাপি স্বপ্ন ধরার
আমার অনেকদিনের আশ


9. বেগুনী
আসমানী  ঝরনায় স্বপ্নমাখা চোখে
অভিমানী কষ্টরা রঙ বদলায় বেগুনীতে
জং ধরা আঙুলের বেগুনী উৎসে
সুন্দরের তৃষ্ণা আঠালো বায়নায় হেরে
নতুন মলাটে বন্দী
অধিকার যেন চুম্বক
আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ঘোর অমানিশায়
ছুঁড়ে ফেলে  স্নিগ্ধ কিশলয়
এরপর থেকে
বিষণ্ণ বিকেলে অদ্ভুত বেগুনী রং
ভেসে উঠে আমার চোখে
অনন্তকাল ধরে......


10. কমলা
কমলা রঙেই হোক নতুন বন্ধন
হাতে গুঁজে সদ্যফোটা কমলা গোলাপ
বাদামী পাতার ভিড়ে
ভিজে হয়ে আসে মেঘের কমলা রঙের পাখা
অঘ্রাণের অন্ধকারে
সবুজ ফলায়ে যায় মানুষের ব্যথা
পরনে ঘাসের শাড়ি
কমলা রঙের খেতের ভিতর
নীলাভ নোনার কামনা নিয়ে
কুয়াশা ছিঁড়ে  শাড়ির স্পন্দন


11. কালো
কালো যাপনে
মশগুল অন্ধকারে নেমে আসে
দ্বিধাগ্রস্থ শুন্যতা
বিষণ্ণ বরফের তলে
তুমি কখনো নিঃস্ব মানুষ দেখনি
আঁধার বিলাসে রাত্রি নামলে
তুমি অন্ধকার বলো
অথচ জানতে চাওনি
অন্ধকার কতটুকু কালো
আমার চোখে পরাজিত বিপ্লবগুলো খুঁজি ব্যর্থ শহরে
তোমার স্নায়ুর ভেতরে ঢুকে
চুম্বন ছেড়েছি জন্মের দোষে
আমি জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখি
বেড়িয়ে পড়ে নির্বোধ রাতের পাঁজর
কালো মেঘ থেকে
আজন্ম লালন করি উদ্‌ভ্রান্ত মৃত্যু
জীবনের দায় নিয়ে .....
আকাশে ওড়ে রুগ্ন অন্ধকার
চুম্বন বিলাপে
সবুজ বিপ্লবে শূন্য দৃশ্যপট চোখ হতে চোখে
লজ্জিত সূর্যের কালো আলোগুলো কি ভীষণ আশ্চর্য
সমস্ত আলো অবধি কালো শব্দের আড়ালেই সৌন্দর্য!!!
                                                     -স্বপ্নময় স্বপন©