১ জুলাই এলেই মনে পড়ে যায় বিভীষিকাময় এক
নির্ঘুম রাতের কথা ! মনে পড়ে দু:সাহসী
এক তরুণের কথা... ! ভয়াল সেই রাতে চাক্ষুস
মৃত্যু-আতঙ্ক যাকে এতটুকু টলাতে পারেনি
তার দীক্ষিত আদর্শ থেকে--কে সে ?
--সে ফারাজ আইয়াজ হোসেন।


একঝাঁক ধর্মান্ধ মূর্তিমান সশস্ত্র মৃত্যুদূতের
সামনে যে নির্ভয়ে বুক চিতিয়ে দেয়, যার
কাছে মানবতা ধর্মের চেয়ে বড় ! আপসহীন
সেই প্রতিবাদী যুবকের আরেক নাম কি? কী তাঁর
বীরত্বগাথা--প্রজন্ম কি তা জানে ? কে সে ?
--সে ফারাজ আইয়াজ হোসেন।


‘৯৬ থেকে ২০১৬, মাত্র একুশ বছর ! এইটুকুন বয়েসে
জীবন বাজি রেখে মৃত্যুকে দুমড়ে-মুচড়ে আলিঙ্গন
করবার মতো স্পর্ধা রাখে যে, নিজে মুসলিম বলে সহসা
পার পেয়ে গেলেও অসহায় অমুসলিম বিদেশী বন্ধুদের
হিংস্র জন্তুর থাবায় ফেলে রেখে চলে আসেনি যে, সে কে ?
--সে ফারাজ আইয়াজ হোসেন।


গোটা দেশবাসী যখন বিস্ময়ে বিমুঢ়, সশস্ত্র বাহিনী
ঘর্মাক্ত,স্বজনেরা দিশেহারা, তখনও সে শশব্যস্ত
বন্ধুদের বাঁচাতে !...সাক্ষাৎ মৃত্যুকূপ থেকে ফিরে আসা
জীবিতরা তো এমনই সাক্ষ্য দেয়। তাঁরা বলে, সেই
মৃত্যুঞ্জয়ী সাহসী বীর আর কেউ নয়, তবে কে সে ?
--সে ফারাজ আইয়াজ হোসেন।


আদতে--
সেদিন বিকেল থেকেই গা-ছমছম করা আবহ
বিরাজিত ছিল গুলশানে হোলি আর্টিজানের
আশপাশে ! অপেক্ষাকৃত অধিক সুনসান নীরব
পরিবেশ ! বাতাসে দোলানো গাছের পাতারা যেন
এমনটাই ঈঙ্গিত করছিল অফিসগামী কোনও
গোবেচারা রিক্সারোহীকে...!


তবে কি---
সেদিনের সেই বিকেলের বাতাসে দোল খাওয়া গাছের
পাতারা চুপিচুপি তাকে বলেছিল...ফারাজ
তুমি প্রতিবাদ করো, রুখে দাঁড়াও অন্যায়ের বিরুদ্ধে !
ঘাতকের মারণাস্ত্র আর চকচকে ধারালো তরবারির
সামনে বিসর্জন দিও না তোমার বন্ধুতার পবিত্রতা, আপস
কোরো না কাপুরুষের মতো ওইসব হায়েনার কাছে !


না,তুমি আপস করোনি !
তোমার ছিপছিপে নিথর দেহখানি সেদিন ভোরের হাওয়ায়
প্রতিবাদের বার্তা রেখে গেল আগামি প্রজন্মের কাছে !
তাতে শাদা হরফে লেখা, তুমি বিশ্বাসঘাতি নও।
মানবতা আর বন্ধুত্ব যে তোমার কাছে সমানে সমান। তাই,
চাইলেও তুমি সেদিন স্বার্থান্ধ হতে পারতে না ফারাজ !
তুমি যে বীর,বন্ধুতায় তোমার তুলনা শুধু তুমিই….।
##
(ফারাজের মর্মান্তিক শহিদী মরণের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া -জুলাই ২০১৬)


স্বত্ব-শমশের সৈয়দ
ঢাকা, জুলাই ২০১৬