সফল কবিরা সাধারণত চিন্তা, মননে, সৃৃষ্টিশীলতায় তার নিজের সময় থেকে এগিয়ে থাকে ৷ তাই হয়তো সময়ের সাথে সমঝোতা করতে পারেনা কোন কোন কবি ৷ আজ এখানে কবিতায় উত্তরাধুনিকতা নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করার চেষ্টা করব ৷


আধুনিকতা স্থায়ী কোন বিষয় নয় ৷ এটি সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তনশীল ৷ কবিতা বা সাহিত্যের ক্ষেত্রেও এ বিষয়টি প্রজোয্য ৷ প্রতি যুগে, প্রতি কালে সাহিত্য বা কবিতার ক্ষেত্রে দুটি ধারা প্রচলিত ৷ একটি আধুনিক, অন্যটি উত্তরাধুনিক বা পোষ্ট-মডার্ন ৷ অনেকে বলেন উত্তরাধুনিক কবিতার মূল বিষয় হলো দুর্বোধ্যতা ৷ তবে এখানে বলে রাখা ভাল যে দুর্বোধ্যতা মানে কোনভাবেই অন্তসারশূন্যতা নয় ৷ আবার কেউ কেউ বলেন আধুনিকতার যেখানে শেষ উত্তরাধুনিকতার সেখানে শুরু ৷ তবে এ বিষয়টিও ততোটা পরিস্কার নয় ৷


একদল মনে করেন উত্তরাধুনিক কবিতায় শুধু শূন্যতা, তাতে কোন অর্থময়তা থাকা চলবে না ৷ কবিতা হবে শব্দের ব্যঞ্জনায় ভরপুর এক রূপকল্প ৷ কতগুলো স্তবকে বা একটি লাইনে কবিতা শেষ হতে পারে ৷ এখানে দুর্বোধ্যতার বিষয়টি কি ? কবিতার উদ্যেশ্যইবা কি ? উত্তর হলো শব্দের ধুম্রজালে আটকে ঘুরপাক খেতে থাকা উত্তরাধুনিক কবিতার সার্থকতা ৷


আরেক দলের মতে কবিতা হলো যুগের বার্তাবাহী ৷ তাই কবিতায় বার্তা বা মেসেজ থাকতে হবে, কবিতার মাধ্যমে সে বার্তা যুগ থেকে যুগান্তরে  প্রবেশ করবে, বাংলা কবিতায় চর্যাপদ বা খনার বচন এর প্রকৃৃষ্ট উদহারণ ৷ পাঠকের জন্য সে বার্তা বোধগম্য হতে হবে, পাঠক আবিষ্ট বা আপ্লুত হবে ৷


বর্তমানে প্রথম দলের সংখ্যা ভারি হলেও সেটা যে সঠিক হবে এমন কোন কথা নেই৷ কবিতার একটা নিজস্ব ঠিকানা আছে, সময়ই সে ঠিকানা নির্ধারণ করবে ৷


উত্তরাধুনিকতা কবিতার গদ্য ছন্দকে সর্বাধুনিক হিসাবে স্বীকৃৃতি দেয়, তবে ছন্দকে পুরোপুরি পরিত্যাগ করেনা ৷ গদ্য কবিতারও একটা ছন্দ আছে, ধরণ আছে ৷ উত্তরাধুনিক কবিরা সে ছন্দ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চলেছেন ৷ ফলে, কবিতার বিকাশ ও বিবর্তন হচ্ছে দ্রুত গতিতে ৷ সময়ই বলে দিবে এ বিবর্তন কবিতাকে কোন পর্যায়ে নিয়ে যাবে ৷ এ প্রসঙ্গে বলতে হয় অনেক কবি তার সমসাময়িক কালে যথাযথভাবে মূল্যায়িত হয়নি, কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি কাব্যাকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসাবে স্থান করে নিয়েছেন ৷


তবে এখন উদ্বেগের বিষয় হলো বাংলা ভাষায় উত্তরাধুনিক কবিরা নিজেদের স্বাতন্ত্র রক্ষা করতে পারছেন না ৷ কবির নাম উল্লেখ না করে বিভিন্ন কবির গোটাকয়েক কবিতা পাঠকের সামনে উপস্থাপন করা হলে পাঠক কোনক্রমেই আলাদা করতে পারবে না যে কবিতাটি কার ৷


অতঃপর অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই, সময় কোথায় নিয়ে দাড় করায় বাংলা কবিতাকে ৷