দেহ খোঁজে সুখ, মন চায় শান্তি
শান্তিহীন সুখ, বড় যে অশান্তি ।


দেহ বিনা মন নেই
মন ছাড়া দেহ যে বিকল
সুখ বিনা শান্তি নেই
শান্তি ছাড়া সুখেরই আকাল ।


কেউ চায় সুস্থিত সুখ
সে সুখ হবে লৌকিক
কেউবা সুখী ভোগ করে
হোক তা সে ব্যষ্টিক ।


দায়িত্বহীন কর্মে কেউবা
করে চলে সুখের পূজা
হিতকর কর্মে কেবলই
কারো কারো সুখ খোঁজা ।


সুখের উদ্যমী বাসনায়
সম্পদে ঝলকিত নিরন্তর
স্বল্প বাসনায় কারো সুখ
রয়ে যায় অনুন্নততর ।


সুখী বিশ্ব গড়ে ওঠে
‘নিয়ন্ত্রিত বাসনায়’
সঙ্ঘাত যুদ্ধ লাগে
অতি সম্পদ লিপ্সায় ।


কল্যাণ হারিয়ে গেলে লোভে
ভোগে যেথা সুখের তালাশ
সর্বনাশী অক্টোপাসে আটক
শান্তি সেথা হয় যে বিনাশ ।


(টিকাঃ জেরেমি বেন্থাম, ১৭৪৮-১৮৩২, ছিলেন যুক্তরাজ্যের হিতবাদী দার্শনিক। তার মতে মানুষ চায় ব্যথার অনুভূতিকে কমাতে, আর সুখের অনুভূতিকে বাড়াতে। তিনি বলেন, যা কিছু সুখের অনুভূতিকে বাড়ায় তাকে দুটি শর্তে ‘মঙ্গল বা good’ হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। শর্ত ‍দুটি হলোঃ ১. সুখের অনুভূতি ক্ষণিকের হবে না, তা হতে হবে আজীবন বা স্থায়ী, ২. সুখ কেবল একক বা গুটিকয়েক মানুষের জন্য হবে না, তা হতে হবে সর্বাধিকজনের, অর্থাৎ, সুখ হতে হবে সামাজিক, ব্যষ্টিক নয়।


অপরদিকে, এ উপমহাদেশে ‘চারবাক’ একজন সুখবাদী দার্শনিক হিসাবে পরিচিত। তিনি বলেনঃ
যাবৎ জীবেৎ সুখং জীবেৎ
ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ
অর্থাৎ, যতদিন বাঁচবে সুখেই বাঁচ, এজন্য ধার করে ঘি খেতে হয় খাবে, কারণ, মরে গেলে ধার শোধ করতে হবে না।


যে সমাজ বেন্থামের হিতবাদ গ্রহণ করেছে, সে সমাজে সামাজিক ন্যায়বিচার, শান্তি, শৃঙ্খলা বা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অপরদিকে যে সমাজ চারবাকের সুখতত্ত্বে বিভোর, সে সমাজ ভোগবাদী দায়িত্বজ্ঞানহীন সমাজ। সেখানে অরাজক, বিশৃঙ্খল, অনাচার, অবিচার, অশান্তি আর স্বৈরতান্ত্রিক পরিস্থিতি বিরাজমান।


১৯৫৪ সালে মার্কিন অর্থনীতিবিদ ই ষ্টালে The Future of Under Developed Countries নামক বইয়ে সুখ বা happiness-এর সমীকরণ প্রদান করেন, সেখানে সুখ = অধিকৃত সম্পদ/বাসনা, অর্থাৎ, অধিকৃত সম্পদ বাড়িয়ে সুখী হওয়া। এ ইচ্ছা মানুষকে অধিক উদ্যমী করে, ফলে তারা অর্থনৈতিক উন্নয়নের শিখরে পৌছে যায়। অনুন্নত বিশ্বে মানুষ বাসনা কমিয়ে সুখী হতে চায়, ফলে তারা কম উদ্যমী হয় এবং অনুন্নত থেকে যায়।


কিন্তু, বর্তমানে অতিরিক্ত বস্তুগত সম্পদ বাড়াতে গিয়ে যুদ্ধ-সঙ্ঘাত লেগে যাচ্ছে। ফলে সময়ের দাবী সুখী বিশ্ব গড়তে হলে বাসনার মাত্রা নিয়ন্ত্রিত হতে হবে।)


ফিরোজ, দিলকুশা, ২৭/১০/২০১৬, সন্ধ্যা ৬.১৫