না- আমি আর কবিতা লিখবো না
এবার থেকে আমার মুখের কথাই কবিতা হবে
অখণ্ড অবসর শেষে আজ আমি ভবিষ্যৎ বুকে এসেছি
অথচ একদিন ফিরবো না বলে ফিরিয়েছি মুখ
যৌবন বিকে জীবন কিনেছি
প্রিয়ার দীর্ঘ দুঃখপথের ধীরতম গতির মত-
কৈশোর থেকে বিমূর্ত অসুখে পুড়ে পুড়ে
অতঃপর সুন্দরের অতল সাগরে নিজেকে ঢেকে রেখেছিলাম
তবু অসুন্দরের আগ্রাসন দেখে ফিরতেই হল আজ ।
আমি একজন প্রকাশিত জীবনানন্দ-
একজন প্রকাশিত রবীন্দ্রনাথের সমষ্টি হয়ে এসেছি
আমি মার্ক্স-নিউটন এরিস্টটল-সক্রেটিস এবং আমি তারও অধিক
আমি আজ বিমূর্ত শব্দের অপব্যাখ্যাকারীদের বিরুদ্ধে
                                   সময়ের মূর্ত কালাপাহাড় ।
একসময় হারাবার ব্যাথায় শব্দের গভীরতা শুধু দেখেছি
তবু যুক্তির আশ্রয়ে অনিচ্ছায় নিজেকে ভেঙে ভেঙে
কেবল ইচ্ছেকেই শুদ্ধ করেছি সুন্দরের স্বার্থে
আমি বিমূর্ত শব্দের বৃহৎ অভিধান হয়ে এসেছি আজ
বর্তমানে ফিরেছি বলেই শাস্ত্র আর অস্ত্র- দু’ই আমার হাতে
যারা পৃষ্ঠগ্রন্থিতে পদক পরে-
পুচ্ছে পাখনা লাগিয়ে পুঁজিবাদের অখাদ্য চাষ করছেন
আমি তাদের বিরুদ্ধে মরনাস্ত্রের-
যথাযোগ্য ব্যবহার করতে এসেছি মৃত্যুহীন মৃত্যুর আঘাতে;
পরকালের ভীতি জাগিয়ে-  অপব্যাখ্যার দাপটে
এতদিন স্বার্থের স্বর্গ উঠতে দেখেছি-;
আমি জানি উপযোগ ফুরালে দেবতাও অসুরে পরিণত হয়
আজ আমি সময়ের ঈশ্বর হয়ে-
তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ
দ্বিপদ প্রাণীর ভিড়ে মানুষের হাহাকারে বিদ্ধ আমি-
অসুন্দরের হত্যায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়েই এসেছি
অহংকার নয়- এ আমার অনিন্দ্য সুন্দরের প্রতি নিবিড় দায়বদ্ধতা
আমি আলাদা কেউ নই
সময়ের দীর্ঘ মিছিলে- সম্মুখে আমিও যে তার মুখরিত প্রাণ
সবার মত গোলাপের প্রতি সহজাত টান আমারও আছে
প্রিয়ার চোখে গুচ্ছ গোলাপের প্রতি মুগ্ধতা আমিওতো দেখেছি
তবু কৃষকের বুকে অঘ্রানের ধানের দোলা-
ফুলের চেয়েও বেশি উতলা করে,
ক্ষুধার্ত শিশুর কোমল হাতে-
শালুকের চেয়ে গোলাপকে কুৎসিতই মনে হয়
আমি জানি দৃষ্টির গভীরে একই ফুল ফুটে নি কোথাও কোনদিনই
তবু প্রেম-স্বপ্ন-ভালোবাসা সহ সমস্ত সুন্দরকে-
ভুল ভাবে মূর্ত করে প্রতিষ্ঠিত করেছে দুর্বৃত্তরা
কিংবদন্তীর সাথে দেহব্যবসায়ীকে একই মঞ্চে তুলে
সুন্দরকেই বঞ্চিত করা হয়েছে নির্ভুল কৌশলে
শ্রেণীবিভাজনের বিরুদ্ধে হাজারো মতবাদ দিয়ে-
শ্রেণীকরণকেই বিস্তৃত করা হয়েছে- যুগে যুগে
নর বলির আর্তনাদ- ঢেকে দেয়া হয়েছে ঢোলের আওয়াজে
পৃথিবীর নিজ অক্ষে ফিরে আসার মতই স্বার্থের পুনরাবৃত্তি সময়ের সর্বত্র,
শহুরে বাতাসে গ্রামের আকাশ নিচে নামলেই সভ্যতা নয়
তবু গরুকে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাইয়ে
গোয়াল ভেঙে দালান তুলে এযুগে তাকে সভ্যতা বলে ডাকা হয় !
যৌনতাকে ঘোমটা পড়িয়ে- তারসাথে নারীবাদের জয়গান জড়িয়ে-
পুরুষতন্ত্রের রাষ্ট্রীয় বেশ্যালয়ে সুন্দরকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে ।
অসভ্য সমাজের চূড়ান্ত উত্থান দেখে মনে হয় আজ-
সমস্ত ভালকিছুকে নিষিদ্ধ করা হলে
একটি আদর্শ রাষ্ট্রের জন্ম একদিনেই  সম্ভব হবে জানি
গাধার উপর বোঝা চাপিয়ে -
মাইকে মানবতার গান বাজানো এমন সভ্যতার সংস্কার চাই আমি
সকলের স্বার্থেই সমাজে আমার আজ এই বাধ্য প্রত্যাবর্তন
আজকে আমি- পৃথিবীর সব  মানুষের সম্মুখে-
‘আমার’ এবং ‘তোমার’ এই শদদ্বয়কে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করলাম
সমস্ত মতবাদ আজ থেকে  শুধুই ‘আমাদের’ অনুগত হবে
ঝড় হাওয়ার বিপরীতে প্রশ্বাসের মৃদু বায়ুই নিশ্চিত হবে এবার ।
সূর্যেরও ক্ষয় হয়-
রবির আলো ফুরিয়ে গেলে নব নক্ষত্রের প্রয়োজন পড়ে
আজ আমি মানুষের ভবিষ্যৎ বুকে সকলের মাঝে ফিরলাম
কবি হলে ঠিক এভাবেই ফিরতে হয় আবার ।