আলোচনা  ১৫৮


প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে আমরা “ভার্চুয়াল” শব্দটির সাথে বেশ পরিচিত। যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে টেলিগ্রাম, টেলিফোন শত বছর আগে হলেও মাত্র কয়েক যুগ আগে থেকেই ইমেই যোগাযোগ প্রক্রিয়াকে আরো সহজতর করেছে। আমরা যারা ৪০-৫০ বয়সী মানুষ, এক জীবনেই আমরা অভাবনীয় পরিবর্তন দেখেছি। অতি সম্প্রতি, তাও প্রায় এক যুগ হবে, ফেসবুক, টুইটার, ইনস্ট্রাগ্রাম, ওয়াটসাআপ ইত্যাদি মাধ্যমগুলো যোগাযোগ মাধ্যমকে আরো সহজতর করে তুলেছে। একে অন্যের সাথে পরিচিত হতে আগ্রহী করে তুলেছে। ফলে তৈরি হয়েছে নুতন এক জগত যার নাম “ভার্চুয়াল জগত”।এখন, বয়স, শিক্ষা, ধর্ম, লিঙ্গ, শ্রেনী, পেশা, গ্রাম-নগর, দেশ-বিদেশ...ভেদে সবাই ভার্চুয়াল জগতের বাসিন্দা। অবাক করা কান্ড, চোখের নিমিষে পৃথিবীটা কেমন বদলে গেলো। ভার্চুয়াল জগতের ভালো-মন্দ, উপকারীতা-অপকারীতা ইত্যাদি নিয়ে নানা বিতর্ক আছে, আছে দ্বন্দ্ব এবং মতোবিরোধ কিন্তু তারপরও ভার্চুয়াল জগত এখন চূড়ান্ত বাস্তবতা। একে অস্বীকার করার যেমন উপায় নেই, এর থেকে বাইরে থাকারও উপায় নেই।


গেল দুবছর, কোভিড-১৯ এর কারনে পৃথিবীর মানুষ যখন গৃহবন্দী ছিল, সমস্ত যোগাযোগ মাধ্যম যখন অকার্যকর ছিল, পরিবহন ব্যবস্থা যখন স্থবির ছিল, মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগ তখনো সচল ছিল ভার্চুয়াল জগতে। ছেলেমেয়েদের শিক্ষা ব্যবস্থা সচল ছিল ভার্চুয়ালি, ফলে এখন ছোট ছোট শিশুরাও ভার্চুয়াল জগত সম্পর্কে অবগত এবং এ জগতে যখন তখন বিচরন তাদের নখদর্পনে। ভার্চুয়াল জগতেই এখন একে অপরের সাথে, আনন্দ-বেদন, সুখ-দুঃখ, উল্লাস, চাওয়া-পাওয়া, প্রেম-ভালবাসা, জ্বালা-যন্ত্রনা... শেয়ার করার প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে। কোন কিছুই এখন আর গোপন থাকছে না, উন্মক্ত হয়ে পড়েছে সব। ভার্চুয়াল জগতের প্রযুক্তি এখন মানুষের মনের ভেতর যেমন বিচরন করতে পারে তেমনি সব রকম বাঁধা অতিক্রম করে মানুষের বেড রুমেও প্রবেশ করতে পারে। কি অদ্ভত এক ব্যবস্থা !! এখন আর প্রাইভেসী বলে কিছু নেই, সবই উন্মুক্ত। ভার্চুয়াল জগতে, মানুষ তার ক্রোধ যেমন প্রকাশ করতে পারে, তেমন উজার করে দেয়া ভালোবাসাও জানাতে পারে আবার নিমিষেই উধাও হয়ে যেতে পারে।


কবি তানভীর আজীমি, তার “ভার্চুয়াল সংসার” কাব্যে বেশ চমৎকারভাবে ভার্চুয়াল জগতের নানাবিধ বিষয় তুলে ধরেছেন যেন বা একটি সংসার, ভার্চুয়াল সংসার। এই সংসারের সব আলাপ একে অপরের সাথে শেয়ার হয় অকপটে, সংসারের টানাপোড়ন, তেল পেঁয়াজ চাল ডাল আলু পটলের দামের উর্ধগতি থেকে শুরু করে কে কখন কোথায় যাচ্ছে, কোন রেস্টুরেন্টে বসে খাচ্ছে, খাবারের ম্যানু কি ইত্যাদি সবই।


ভার্চুয়াল সংসারের সকল আলাপ আলোচনা এখানে পাওয়া যায়- কপালের টিপ,পায়ের আলতা, চুলের বেণী, ভালোবাসি, ভালো লাগে, অগণিত চুম্বন, চুড়ির গুঞ্জন, রাতের মৌনতায় খিলখিল হাসি, শারীর ভাঁজ, অন্তর্বাসের রঙ, আগামী দিনের রঙিন স্বপ্ন, নীরব নিঝুম স্তব্ধ, রাতের বাতায়নে, মুঠোফোনের দর্পণের নিপুন আলোর সুখ, প্রণয় বাসর ইত্যাদি, কোন কিছুই বাদ যায় না।


শেষে এসে কবি একটি বাস্তবধর্মী প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন, ভার্চুয়াল সংসারে আমরা কি আসলেই সুখী নাকি সুখের ভান করি? এতো আলোচনা, এতো শেয়ারিং, এত ভিজুয়ালাইজেশন...এসব কি আমাদের সুখী করতে পারে নাকি অসুখী জীবনকে আড়াল করার একটা প্রচেষ্টা মাত্র? আমরা কি বাস্তব জীবনে অসুখী বলেই ভার্চুয়াল জগতকে আকড়ে থাকছি বেশী করে? সময়েই তার সথার্থ উত্তর মিলবে।


একটি সময়োপযোগী ইস্যু নিয়ে কাব্য উপহার দেয়ার জন্য কবির প্রতি রইলো অফুরান শুভেচ্ছা।