আলোচনা  ১৬২


যে কোন ধর্মীয় নির্দেশনাতেই, হালাল রোজগারের প্রতি জোর দেয়া হয়েছে, অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কে খুব ভালো ধারনা না থাকাতে বলতে পারছি না কিন্তু ইসলাম ধর্ম হালাল রোজগারের প্রতি অধিক মোনযোগী হবার প্রতি বারবার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। হারাম রোজগার থেকে বিরত থাকার জন্য চরম নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। হারাম এবং হালাল উপার্জনের বা রোজগারের বৈশিষ্ট্যগুলোও পরিস্কার ভাবে বলা হয়েছে। এমনকি এটাও বলা হয়েছে যে, হারাম উপার্জনকারী ব্যক্তির কোন ইবাদত কবুল হবে না (সঠিকভাবে না বলতে পারলে, হাদীস বর্ননা না করার প্রতিও নির্দেশনা আছে, তাই আর বেশী কিছু লিখলাম না)


কিন্তু আমরা অনেকেই প্র্যাক্টিস করি ভিন্ন উল্টো পথে, হারাম উপার্জন দিয়ে হালাল খাবার খুঁজি প্রতিনিয়ত। একবার এক চায়নিজ লোক বলছিলো, বাংলাদেশ থেকে প্রচুর ব্যবসায়ী আসে চীনের গোয়াংজো শহরে, এখানে নানা ধরনের প্রডাক্ট কেনে এবং বিখ্যাত সব কোম্পানীর লেভেল লাগায় , নামী দামী সব ব্রান্ডের খাজ তৈরি করে। কিন্তু কাজ শেষে যখন লাঞ্চের জন্য অফার করি তখন জিজ্ঞেস করে, হালাল খাবারের রেস্টুরেন্ট আছে কি না, মুরগী হালাল উপায়ে জবেহ হয়েছে কি না ইত্যাদি।


বর্তমান জমানায়, হালাল উপার্জন করা খুবই কঠিন একটি কাজ। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় বলে, বাংলাদেশে অন্তত ১০% মানুষ হলেও পাওয়া যাবে যারা কখনোই ঘুষ খাননি কিন্তু জীবনে কখনো ঘুষ দেননি এমন মানুষ ১% পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। তাছাড়া, আমরা কেবল মাত্র হালাল আয় বা উপার্জন বিবেচনা করি মাত্র দুটি সূচক দিয়ে যেমন-ঘুষ, সুদ কিন্তু  এছাড়া আরো অনেক সূচক আছে যা দ্বারা উপার্জন হারাম হয়ে যেতে পারে যা আমাদের বিবেচনায় সচরাচর আসেই না।


আলোচ্য কবিতায়, কবি মোঃ আব্দুস সোবহান রুসাফী, ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রধান একটি ইস্যু ‘হালাল উপার্জন বা পবিত্র ধন” নিয়েই কাব্য রচনা করেছেন “পোড়া-রুটি”। খুব অল্প কথায়, ধর্মীয় মূল্যবোধের একেবারে মুল একটি বিষয়কে উপস্থাপন করেছেন। মহাবিশ্বের নিয়ন্ত্রনকর্তা, মালিক, সৃষ্টিকর্তার কাছে একটি প্রার্থনা-


কোন “অপবিত্র ধন” যেন আমাকে স্পর্শ করতে না পারে, কোনভাবেই আমার চাওয়া পাওয়াগুলো যেন কূলষিত না হয়, আমি অনেক বেশী চাই না, আমার প্রয়োজন নেই বিরিয়ানী, তেহারী কিংবা দামী এবং লোভনীয় সব খাবারের। অনেক ভালো হয় যদি আমি নিজের হালাল উপার্জন দিয়ে এক টুকরো পোড়া রুটি খেতে পারি, তাতেই যেন আমার আত্মা শান্তি পায়, তাতেই যেন আমি সন্তুষ্ট থাকতে পারি। পোড়া রুটি খেয়েই যেন আমি শান্তিতে ঘুমাতে পারি।


এখানে ‘পোরা রুটি একটু রূপক মাত্র, মূল বিষয় হলো, অল্পতেই সন্তুষ্ট হবার বাসনা। অনেক বেশী চাইতে গিয়ে, অনেক ভালো ভালো খাবার বা জীবন মান উন্নত করতে গিয়ে যেন, নিজেকে বিক্রি করে না দিই, নিজেকে শুদ্ধ রেখে, অল্পতেই নিজেকে স্থির রাখতে পারার আকূল আকূতি জানিয়ে একটি প্রার্থনা কাব্য রচিত হয়েছে।


প্রার্থনা কাব্যের বিষয়টি খুবই সাধারন, আমরা সবাই জানি, বুঝি কিন্তু বাস্তবায়নে অনেকেই ব্যর্থ হই। তাই, সব সময় প্রার্থনা করতে হয় যেনো এই ইস্যুতে আমরা সফল হতে পারি।


কবির জন্য রইলো শুভেচ্ছা।