আলোচনা  ১৩৯


যদিও কবি “কয়েকটি মজার কথা” শিরোনামে কবিতাটি লিখেছেন, কিন্তু বিষয়টি হতে পারে “মজার” কিন্তু মুলত “তিক্ততা”, বাস্তবতাকে ভিত্তি করে একটি দেশের নানা অনিয়ম, চলমান অভ্যাস এবং মানুষের ধুর্ত চিন্তাধারাকে নিয়েই লেখা। একটি দেশ কিভাবে অধঃপতনের দিকে যায় তার কিছু আলামত থাকে, কবি সে কথাই বলতে চেয়েছেন প্রত্যেক ছত্রে ছত্রে।


যে কোন রাষ্ট্রের কাজ জনগনের পক্ষ থেকে মনিটরিং করা এবং জনগনের মতামত প্রতিফলিত করা সংবাদ মাধ্যমের একটি প্রধান কাজ। ফলে জনগনের ম্তামতকে প্রাধান্য দিয়েই রাষ্ট্র পরিচালিত হয়, রাষ্ট্রের অগ্রগতি সাধন হয় কিন্ত যদি উলটো হয়, রাষ্ট্র ঠিকমত পরিচালিত হচ্ছে না, জনগনও সচেতন ভূমিকা রাখছে না আবার সংবাদ মাধ্যম নিজেদের নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয় তাহলে সেই রাষ্ট্রের অগ্রগতির কোন সম্ভাবনাই থাকে না। কবি সে কথাই বলেছেন প্রথম ছত্রে।


কবি, সত্যকথন গুলো বেশ মজা করে বলেছেন বলেই কবিতার শিরোনাম “কয়েকটি মজার কথা”, কিন্ত বিষয়গুলো চূড়ান্ত অর্থেই নেগেটিভ বাস্তবতা। কাকে আমরা ‘ভিখেরী বলবো”, কিভাবে মাপবো, আমাদের মাপুনি যন্ত্রটা কি হবে? নৈতিকতার মানদন্ডে মাপবো নাকি অর্থ বিত্তের মানদন্ড দিয়ে মাপবো? সেটাই বিবেচ্য বিষয়।


“রাজনীতি” শব্দটির অর্থ কি?  রাজনীতি একটি পেশা, এটি কি আয় উপার্জনের একটি মাধ্যমে?  রাজনীতির মাধ্যমে যদি আয় উপার্জনই প্রধান হয়ে থাকে তবে আর মানুষ কাজ করে, পরিশ্রম করে কেন আয় করতে চাইবে!! সহজ উপায়, রাজনীতের মাধ্যমেই মানুষ আয় উপার্জনের দিকে ঝুকে পরবে, সেটাই স্বাভাবিক।


ক্রমান্বয়ে কবি শিক্ষার গুরুত্ব, শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষার উদ্দেশ্য ইত্যাদি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। নানা পেশার মধ্যে যে ঘুষ বানিজ্য এখন প্রধান লক্ষ্য, সমাজ থেকে আস্থা এবং বিশ্বস্ততা যে আজকাল উঠে গেছে, বাবা মা এর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ইত্যাদি নিয়েও বাস্তবতার চিত্রায়ন করছেন। একটা সমাজের, একটা রাষ্টের মধ্যে কিছু মূল্যবোধেরে চর্চা থাকে, কিছু নৈতিকতার অভ্যাস থাকে কিন্তু যখন সমাজ থেকে এসব উধাও হয়ে তখন সে সমাজের বা রাষ্ট্রের মানুষ আর মানুষ থাকে না, মানুষ আর অন্য কোন পশুর থাকে কোন তফাৎ থাকে না।


কবি, বেশ তির্যকভাবেই, সমাজের, রাষ্ট্রের অসংগতিগুলো তুলে ধরেছেন মজা করে কিন্তু এগুলো আসলে মজার বিষয় না, এগুলো আমাদের ক্রমাগতই ব্যথিত করার কথা, আমাদের হতাশ করার কথা এবং এর মাধ্যমে আমাদের অন্তঃদৃষ্টি খুলে যাবার কথা।


সবশেষে কবির জন্য রইলো অফুরান শুভেচ্ছা। ভাল একটি কবিতা খুব সহজ ভাবে সমাজের নানা অসংগতি তুলে ধরার জন্য