আলোচনা ১২৭


প্রতিদিন বাংলা কবিতা আসরের পাতায় অসংখ্য প্রেম এবং বিরহের কবিতা প্রকাশিত হয়। বাংলা সাহিত্যে বিশেষ করে কবিতায়, নানা অনুষঙ্গ (যেমন-প্রকৃতি, মৃত্যু, বাবা-মা এর প্রতি ভালোবাসা, দেশপ্রেম, বিদ্রোহ, মানবতা ইত্যাদি) ঘুরে ফিরে দেখা যায়। আমার ধারনা তার মধ্যে প্রেম এবং বিরহ অনুষঙ্গ দুটি অনেক বেশী মাত্রায় জায়গা দখল করে আছে। অনেকেরই কবিতা বা গল্প লেখার হাতে খড়ি হয় প্রেম কিংবা বিরহের উপাখ্যান দিয়ে। সে অর্থে, এক কবিতাটি বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষন করার কোন অর্থ অনেকের কাছে নাও থাকতে পারে। কিন্তু আমি আলোচনা করছি মুলত কয়েকটি কারনে-


এখানে আবেগ এবং বিরহের সংমিশনে কবিতাটি ভিন্ন এক মাত্রা ধারন করেছে। আবেগের প্রকাশ হয়েছে নানা ফর্মে, মনে হচ্ছে “আবেগ” ঝরে ঝরে পড়ছিল। অতীতের প্রেমকে মনে রাখার এক চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করা হয়েছে ১১ সংখ্যা দিয়ে যেন কখনো প্রেমকে, প্রেমিকাকে ভুলে না থাকা যায়, ফলে ১১ এর সাথে পেছনের কিছু গল্প, কিছু স্মৃতিকে জড়িয়ে কবিতার বিন্যাস করা হয়েছে। এখানে প্রেমকে খুব জীবন্ত করে তোলা হয়েছে, আমার মনে হচ্ছিল ঘটনাটা এখনই ঘটছে।


কোন যুবক যখন প্রেমিক হয়, তখন কত ধরনের কৌশল অবলম্বন করে, কত রকম বালখিল্য আচরন করে, কত রকম শিশুসুলভ আচরন করে...... সে রকম কিছু চিত্রায়ন কবিতাটিতে দেখা যায়, যেমন-


• ইচ্ছে করে ভুল করতাম, তোমার হাসি দেখার জন্য।
• ১১ সংখ্যা সঠিকভাবে গুনতে না পারার ব্যর্থতা তাকে চিন্তিত করে না বরং এর মধ্যেই সে আবেগ খুজে পায়, এর মধ্যে সে তার প্রেমিকাকে “সুন্দর” হিসেবে দেখে
• এগারো সংখ্যাটা কিছুতেই বলতে পারতাম না। বারবার তোমার সাহায্য নিতাম। তুমি খিলখিলিয়ে হেসে  গড়িয়ে পড়তে


শিশুসুলভ আচরনের মধ্যেই প্রেম এগিয়ে যাচ্ছিল, সেখানে কোন ম্যাচিউরড ভাবনা ছিল না, ভবিষ্যত বুননের কোন পরিকল্পনাও ছিল না, কেবলই প্রেম আর প্রেম, নানা ছন্দে, নানা কৌশলে। কিন্তু হঠাৎ করে, দুজনেই খুব ম্যাচুউরড হয়ে গেলো একটি মাত্র বাক্যের কারনে, “তুই কি সব সময় তোর সমস্যয়, আমাকে সাথে রাখবি”


এই একটি মাত্র বাক্য, সমস্ত চিন্তা, চেতনা, মননে ঝংকার দিয়ে উঠলো, ভাবনার গতি প্রকৃতি পাল্টে গেলো, মুহূর্তেই অনেক বেশী গভীর ভাবনায় আক্রান্ত হয়ে গেলো, অনেক বেশী ম্যাচিউরড হয়ে গেলো, অনেক বেশী বয়স বেড়ে গেলো তাদের, আর তক্ষনি সেই শিশু সুলভ প্রেম হারিয়ে গেলো। কবিতায় একটা নাটকীয় মোড় দেখা গেলো।


তারপর আর সেই হেয়ালীপনা, সেই শিশ সুলভ আচরনের পরিবর্তন হয়ে এবার পরিনত বয়স্ক মানুষের মতো ভাবনা মোচড় নিলো। উভয় পক্ষ, তাদের প্রেমকে ভিন্ন এক ভাষায় ভাবতে শুরু করলো, রূপক ভাষা। প্রেমকে (ভালো লাগা কে) এবার আর সরাসরি প্রকাশ করার কোন অবকাশ নেই। প্রেমিক প্রেমিকার “হাত ধরে রাখা’র” সাথে সারা জীবনের যে সম্পর্ক আছে, যে দায়িত্ববোধ আছে, যে পরস্পর নির্ভরশীলতা আছে, সে রকম ভাবনা দ্বারা বিরহরের আকুলতা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে “আর পারিনি, তোমার হাতটাও ধরতে সারা জীবনের জন্য”। এখানে এসেই ‘তুই” হয়ে গেলো “তুমি”।


প্রেম এবং বিরহের গতি প্রকৃতি, শুরু এবং শেষ, মাঝে কিছু শিশুসুলভ আবেগীয় ভঙ্গি এবং একটি বিশেষ সংখ্যা দিয়ে প্রেমকে চিরস্থায়ী রূপদান-এগুলোই আমাকে এই আলোচনা (কবিতা পড়ার পর আমার অনুভুতি) লেখার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে।


কবির জন্য রইলো শুভেচ্ছা, ভালো থাকবেন সব সময়।