কবিতার বিভিন্ন আঙ্গিক - চার
শংকর ব্রহ্ম


'শের শায়রী' কি এবং কেন?


                    'শের শায়রী' হল কবিদের ছোট ছোট (উর্দূ) কবিতা যা দিয়ে অল্প কথায় মনের অনেক গভীর ভাব প্রকাশ করা হয়ে থাকে। মুসলিম কবিদের হাত ধরেই শায়রী জন্ম। শারীর জন্মদাতাদের অন্যতম হল ওমর খৈয়াম। “রুবায়াত” তার অন্যতম শ্রেষ্ট গ্রন্থ যা মূলত অনেক শায়রীর মিলিত সংকলন।
কেন অল্প কথায় মনের গভীর ভাব প্রকাশ করতে হতো?
                    যখন শায়রীর জন্ম কাল,তখন কবিতা লেখা, গান বাজনা, তসবির আঁকাকে 'না জায়েয' মনে করা হত, তবু কবিরা কবিতা লিখতেন, দার্শনিক, বিজ্ঞানীরা চর্চা করতেন। যখনই গোড়াপন্থীরা তা জানতে পারতেন,তারা সেগুলো নষ্ট করে দিতেন। তাই অতীব দ্রুততার সাথে স্রষ্টা তাদের সৃষ্টিকে লুকিয়ে ফেলতেন, এ কারণেই শায়রীর সৃষ্টি।
                  বাংলায় শায়রীর ভক্ত খুব কম। ষাটদশকের চলচিত্র সমালোচক শচীন ভৌমিকের শের শায়রী প্রতি খুব আকর্ষণ ছিল । তিনি তখন বাংলায় বহু শায়রী অনুবাদ করেছিলেন। সাহিত্যিকদের মধ্যে বুদ্বদেব গুহ একজন শায়রী সমজদার।
                 গজল অনেকেই পছন্দ করেন। কিন্তু অনেকেই হয়ত জানেন না যে গজল কিন্তু মূলত শায়রী ধারা থেকেই এসেছে।


                     পাঠদের সুবিধার্থে সংগৃহীত পঁচিশটি শায়রী এখানে দেওয়া হ'ল


* শের শায়রী (এক)


চমনমে ইখতালাতে রঙো বু সে বাত বনতি হ্যায়
হাম ই হাম হ্যায় তো কেয়া হাম হ্যায়
তুমহি তুম হো তো কেয়া তুম হো


--সারসার সালানী


[ বাগানে যে ফুল ফোটে রঙ আর সুরভীর মিলনেই তার সার্থকথা। তেমনি আমাদের দুজনের মিলনেই আমাদের চরম মূল্যায়ন, আমাদের জীবনের পূর্ণতা। একা আমি তো অসম্পূর্ণ একা তুমিও মূল্যহীনা। ]


* শের শায়রী (দুই)


ও ঔর হোঙ্গে যো পীতে হ্যায় বেখুদিকে লিয়ে
মুজেসে চাহিয়ে থোরিসে জ়িন্দেগীকে লিয়ে


জিগর মুরদাবাদী


[ ওরা আলাদা জাতের লোক যারা সুরা পান করে জীবন কে ভুলে যাবার জন্য, আমার তো সুরার প্রয়োজন হয় জীবনকে ফিরে পাবার জন্য। ]


* শের শায়রী (তিন)


ময়নে যো তুমকো চাহা, কায়া ইসমে খতা হ্যয়
এ তুম হো, আ আয়না, ইনসাফ জরা করনা
--- জলীল মানিকপুরী


[ আমি যে তোমাকে চাইছি এটা অপরাধ কি? এই তুমি এইবার তোমার সামনে এই আয়না রাখছি, দেখে বিচার কর, হে প্রিয়া তুমি এত সুন্দরী কার সাধ্য যে তোমাকে না ভালবাসে থাকতে পারে, নিজেকে আয়নায় দেখ, বুঝতে পারবে এত সুন্দরীকে সবাই চাইতে পারে এতে কারও কোন অন্যায় নেই। ]


* শের শায়রী (চার)


বদল যায়ে আগর মালী
চমন হোতা নেহী খালি
বাহারে ফিরভি আতি হ্যায়
বাহারে ফিরভি আয়েঙ্গে
---দাগ


[ মালি বদলে গেলে বাগান খালি হয়ে যায় না, শূন্য হয়ে যায় না বাগানের ফুলভার। কেন না বসন্ত আবারও আসবে তার ফুল সাজি নিয়ে, মালী অনেক বদলাবে কিন্ত বসন্তের আগমন তাতে কোন দিন রুদ্ধ হবে না। ]


* শের শায়রী (পাঁচ)


ও কৌন হ্যায় জিনহে তওবা কি মিল গই ফুরসত
হামে গুনাহ ভি করনে কি জিন্দেগী কম হ্যায়


--- আনন্দনারায়ন মুল্লা


[ ওরা কারা যাদের পাপ করার পর প্রায়শ্চিত্ত করার জন্যও সময় জুটে যাছে? আমার তো জীবন এত স্বল্প লাগছে যে, এক আধ-টুকরো যে পাপ করবো, তার ও সময় জুটছে না! ]


* শের শায়রী (ছয়)


জিসনে দিল খোয়া ঊসী কো কুছ মিলা,
ফায়দা দেখো উসী লুকসান মে
---সারসার সালানী


[ যে হৃদয় হারিয়েছে সেই কিছু পেয়েছে। এটাই পৃথিবীর একমাত্র লোকসান যাতে আসলে লাভই ভাগ্যে জুটে যায়। ]


* শের শায়রী (সাত)


নিকল কে জাউ কহা তেরী আঞ্জুমন সে সিবা
চমন কী বু হুঁ বসুঁ ফির কাহাঁ চমন কে সিবা
---মোমিন


[ তোমার পৃথিবী, তোমার হৃদয় ছেড়ে কোথায় যাব বল? আমি হচ্ছি ফুলের সুগন্ধ। ফুল ছেড়ে কোথায় আর যেতে পারি আমি। তুমি আমার ফুল আর প্রেম আমার হল সেই ফুলের সুরভী। ফুল ছেড়ে সেই সুরভী কি চলে যেতে পারে? ]


* শের শায়রী (আট)


মৌৎ কিৎনিহি সংদিল হ্যায় মগর
জিন্দেগী সে তো মেহেরবাঁ হোগী
--- শাহীর লুধীয়ানবী


[ মৃত্যু যতই নিষ্ঠুর হোক না কেন
জীবনের চাইতে অনেক বেশী হৃদয়বান হবে। ]


* শের শায়রী (নয়)


কেয়া বুরী শয় হ্যায় মুহব্বত কি ইলাহী, তওবা
জুর্ম না কর ওহ খতাবার বনে বৈঠৈ হ্যায়।


--- জহীর


[ ভালোবাসা কী অভিশপ্ত বস্তু হে ঈশ্বর তুমি সৃস্টি করেছো। অন্যায় না করেও সর্বদা অপরাধী সেজে বসে থাকতে হয়। সত্যি ভাবলে আশ্চর্য লাগে। ]


* শের শায়রী (দশ)


না কোই গাম থা তেরে আষিকি ছে পেহেলে
না থা দুষমনি কিসি সে তেরে দোস্তি সে পেহেলে
নাম না জানা


[ তোমার প্রেমের আগে কোন বেদনা ছিলো না
তোমার বন্ধুত্বের আগে কোন শত্রু ছিলো না। ]


* শের শায়রী (এগারো)


এ তো নহি কি তুমসা জহামে হাসিন নহি
ইশ দিলকা কেয়া করু কি বহলতা কহি নেহি।
--- দাগ


[ এমন তো কথা নেই যে পৃথিবীতে তোমার চাইতে সুন্দরী আর কোথাও নেই। কিন্তু কি করব আমার এ হৃদয় অন্য কারো কাছে যাবে না। শুধু তোমার জন্যে এ হৃদয় পাগল হয়ে উঠেছে। বোঝালেও এ অবুঝ হৃদয় কিছুতেই বুঝবে না। ]


* শের শায়রী (বারো)


গই থি কহকে লায়েগী জুলফে ইয়ার কি বু
ফিরি তো বাদেসবা কা দিমাগ ভি না মিলা
--- জলাল


[ যাবার সময় হাওয়া বলে গিয়েছিল যে তোমার চুলের মদির গন্ধ সঙ্গে নিয়ে ফিরে আসবে। কিন্তু ফেরার সময় হাওয়ার সে কি গর্ব ভরা ভাব, সেকি মেজাজ হাওয়ার, আমার দিকে ফিরেও তাকাল না। ]


* শের শায়রী (তেরো)


খোদাসে হুস্নুনে একদিন এ সওয়াল কিয়া
জাহাঁমে তু মুজে কিউ না লাজওয়াল কিয়া
মিলা জবাব তসবীরখানা হ্যায় দুনিয়া
সবে দরাজে আদম কা ফসানা হ্যায় দুনিয়া
হুই হ্যায় রঙ তগায়ুরসে যব নমুদ উসকি
ওহি হাসিন হ্যায় জাঁহামে হ্যায়, হকিকৎ জিসকি।
কহি করিব থা এ গুফতুগ কমরনে শুনি
ফলগপে আম হুই আখতারে সহরনে শুনি
সহরনে তারোঁসে শুনাই তারোঁনে শবনমকো
ফলগকি বাৎ বাতাদি জমিকে মহরমকো
ভর আয়ে ফুলকে আঁসু পয়ামে শবনমকে,
কলিকা নান্নাসা দিল খুল হো গিয়া গমসে
--- কলীম


[ ঈশ্বরকে একদিন প্রশ্ন করল রূপ – হে ঈশ্বর, ধরাতে আমাকে তুমি অমর করোনি কেন? ঈশ্বর উত্তর দিলেন, - এ পৃথিবী হল পরিবর্তনশীল চলচিত্রের প্রেক্ষাগৃহ, অন্তহীন রাত্রির চলমান কাহিনী হচ্ছে পৃথিবী। স্বল্পস্থায়ী জীবনই হল রূপের আয়ু, এ সত্যই রুপকে এত আকর্ষণীয় করেছে, করেছে মুল্যবান। অনিত্যতাই সত্য, আর সত্যই সুন্দর। অমরত্ব কাউকে আমি দেইনি। জন্ম মানেই মৃত্যু। আদির পর অন্ত। যৌবনের পর জরা। ঈশ্বর ও রূপের কথোপকথন শুনে ফেলল চাঁদ। সে কাছেই ছিল। চাঁদ এসে সারা আকাশকে শুনিয়ে দিল সে কথা। সারা আকাশে রটে গেল রূপ ও জীবনের স্বল্পায়ুর কঠিন সত্য। ঊষার প্রথম তারা সে খবরটা শিশিরের কানে কানে বলে ছিল। শিশির সে খবর নিয়ে এল পৃথিবীর বুকে। শিশিরের কাছে সে দুঃসংবাদ শুনে ফুলের চোখ জলে ভরে গেল। কাছেই ছিল কলি। এ খবর শুনতেই দুঃখে হৃদয় ফেটে তার লাল হয়ে গেল। মানে ফুল হয়ে ফুটে উঠল সেই বিদীর্ন হৃদয় কলি। ]


* শের শায়রী (চোদ্দ)


কভি ব্যয়ঠে বৈঠয়ে দিলকি হালত এয়সি হোতি হ্যায়
তড়গকর চ্যয়নে মিলতা হ্যায়, খুশি রোনসে হোতি হ্যায়
--- সারসার সালানী


[ কখনও কখনও মনের অবস্থা এমনও হয় যে কৃচ্ছতায়ই শান্তিলাভ হয়, অঝোর অশ্রুপাতেই শান্ত হয় চিত্ত। ]


* শের শায়রী (পনেরো)


আপকে বিসরী তো হাম খোয়াবোঁমে মিলে
যিসতারা শুখি হুই ফুল কিতাবোঁমে মিলে
--- ফৈজ


[ বিচ্ছেদের পর আমাদের দু’জনের মিলন কোথায় হবে? কোথায় তোমায় পাব? জানি পাব শুধু স্মৃতিস্বপ্নের আকাশে। যেমন পুজোর পবিত্র শুকনো ফুল অনেকদিন পরে মানুষ হঠাৎ খুঁজে পায় বইয়ের পাতার ভাঁজে। তোমার পবিত্র সুখস্মৃতির ফুল তেমনি হঠাৎ খুঁজে পাব আমার স্বপ্নায়নের পাতার ভাঁজে। কালগ্রাসে বিবর্ণ শুষ্ক। কিন্ত পবিত্র, সংরক্ষিত। ]


* শের শায়রী (ষোল)


তেরা মিলনা, তেরা নেহি মিলনা
ঔর জিন্নাত হ্যায় কেয়া, জাহান্নাম কেয়া
--- গালিব


[ স্বর্গ আর নরক কি আমি জানতাম না।
হে প্রেয়সী তোমার সাথে আমার মিলনই হল স্বর্গ আর তোমার সাথে বিরহই হল নরক। এখন আমি জেনেছি স্বর্গ আর নরক এর সংজ্ঞা কি। ]


* শের শায়রী (সতেরো)


মেরে তসবিকে দানে হ্যায় এ সারে হাসিন চেহরে,
নিগাহ ফিরতে যাতি হ্যায়, এবাদত হোতি যাতি হ্যায়
--- সারসার সালানী


[ এই যে এত সুন্দরীদের মুখ এরা হল আমার জপার মালার এক একটি পুঁতি। একটার পর একটা মুখ দেখি আর আমার দৃষ্টির আঙ্গুলি দিয়ে নীরবে পুজো সেরে চলি। ]


* শের শায়রী (আঠারো)


আচ্ছা হ্যায় দিল কে পাস রহে পাসবানে-অকল
লেকিন কভি কভি ইসে তনহা ভী ছোড়িয়ে
--- ইকবাল


[ হৃদয়ের কাছে বুদ্ধির বাস ভাল কথা। কিন্তু মাঝে মঝে হৃদয়ের ওপর থেকে বুদ্ধির শাসন তুলে দিতে হয়, হৃদয়কে স্বাধীন করে দিতে হয়, মুক্ত করে দিতে হয়। স্বাধীন মুক্ত হৃদয়ের ধর্মকে সব সময় বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে নেই। ]


* শের শায়রী (উনিশ)


ঊমরেদরাজ মাংকে লায়ে থে চারদিন
দো আরজুমে কট গয়ে দো ইন্তেজারমে
--- বাহাদূর শাহ জাফর


[ ঈশ্বরের কাছে চার দিন ভিক্ষা নিয়ে এখানে এসেছিলাম, তার দু'দিন কেটে গেল আকাঙ্খায় আর দুদিন কেটে গেল অপেক্ষায়। জীবন তো তাই দু'দিনের স্বপ্ন বুনবার জন্য আর দু'দিন স্বপ্ন ভঙ্গের। ]


* শের শায়রী (কুড়ি)


দুশমনি জমকর করো, এ গুঞ্জাইশ রহে
যব কভি হাম দোস্ত হো যায়েঁ তো শরমিন্দা না হো।
--- জগ্ননাথ আজাদ


[ শত্রুতা করার সময় হে বন্ধু , একটু ভেবেচিন্তে কর। দেখো এত নিষ্ঠুর ভয়ংকর শত্রুতা কর না যে পরে যদি বন্ধু হয়ে যাই তখন লজ্জিত হতে হয়। তোমার শত্রুতার মধ্যে একটু ছেদ রেখ, সুযোগ রেখ বন্ধু। যতির পর পুরানো বন্ধুত্ব ফিরে পেলে লজ্জা নেই, কিন্তু চরম শত্রুতায় আজ যদি বন্ধুত্ব ছিন্ন করে ফেল, পুনরায় মিলনের সময় লজ্জায় তবে মুখ তোলা যাবে কি করে? সুতরাং হে বন্ধু, শত্রুতা করবার সময় ছেদ রেখ সম্পর্কে , সম্পূর্ণ ছিন্ন করে ফেল না। ]


* শের শায়রী (একুশ)


বড় শওকশে শুন রাহা যা জমানা
হামই শো গয়ে দাস্তাঁ কহতে কহতে
---নাকব লাখনবী


[ সময় বড় মনযোগ দিয়ে আমার জীবন কাহিনী শুনে যাচ্ছিল। আমিই কাহিনী বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়েছি। জীবন তো তাই, অসমাপ্ত কাহিনী। সময় চলছে চলবে। আর অসমাপ্ত কাহিনী নিয়ে এক একটি জীবন ঘুমিয়ে পড়ছে, শেষ হয়ে যাচ্ছে। সময় শুনছে এরকম কতো অসমাপ্ত কাহিনী, শুনবে আরো কত। ]


* শের শায়রী (বাইশ)


ইস এতিয়াত কি ক্যা বরখ দাও দেতা হুঁ
কে তিনতা তিনতা বাচাঁ মেরে আশিয়াঁকা সিবা
--- সারসার সালানী


[ হে ঈশ্বর, তোমার নিপুণ সতর্কতার জন্য বাহবা দিতে হয়। তুমি এমন বিদ্যুৎবহ্নি বজ্রবান নিক্ষেপ করেছো আমার ঘর লক্ষ্য করে যে শুধু আমারই ঘরটা জ্বলে খাক হয়ে গেল, বাকি কুটোটির এতটুকু ও ক্ষতি হল না। ]


* শের শায়রী (তেইশ)


ময়নে পুছা চাদসে ফলগ ইয়া হো জমি
মেরে ইয়ারসা হাসিন
চাঁদ হ্যায় কাহি?
চাদনে কহা চাঁদনী কি কসম, নেহি, নেহি, নেহি।


খুবসুরৎ তুনে যো পাই
লু্ট গই খুদাকি সব খুদাই
মীর কি গজল কহুঁ ইয়া তুমে
কহু ম্যায় খৈয়াম কি রুবাই
ম্যায়নে পুছা শায়েরোঁসে এইসি দিলকসি
শের হ্যায় কাঁহি ?
শায়েরোঁনে কহা শায়েরেকি
কসম নেহি নেহি নেহি।


চাল হ্যায় কি মৌজ কি রওয়ানি
আঁখ হ্যায় কি ময়কাদোঁকি রানী
হোঁট হ্যায় কি পাখড়ি গুলাবকি
জুলফ হ্যায় কি রাত কি কাহানি
ম্যায়নে পুছা বাগসে কি এইকি দিলখুশি
ফুল হ্যায় কি কাঁহি


বাগ কি কহা হর কলি কি
কসম নেহি নেহি নেহি।
---আনন্দ বক্সী


[ আমি চাঁদ কে প্রশ্ন করলাম, বলো তো আকাশে বা পৃথিবীতে আমার প্রিয়ার মত চাঁদ আছে কি? চাঁদ জবাব দিল চাঁদনির দিব্যি খেয়ে বলতে পারি নেই নেই নেই। রূপ তুমি যে পেয়েছো মনে হচ্ছে ঈশ্বরের সব রূপ লাবন্যের ঝোলা চুরি হয়ে গেছে। মীর এর রচিত গজল বলব কি তোমায়? নাকি বলব ওমর খৈয়াম এর কোন রুবাই? কবিদের আমি প্রশ্ন করলাম আমার প্রিয়ার মত কবিতা আছে কোথাও? কবিদের জবাব এল- যেন ঢেউয়ের ঊচ্ছলতা, তোমার চোখ যেন সুরাবিপনীর রানীর মদির নেত্র, তোমার ঠোঁট যেন গোলাপের পাপড়ি আর তোমার চুল দেখে যেন মনে হয় এ যেন চুল নয়, এ যেন শত শত রহস্যঘন রাত্রির কাহিনী। বাগান কে প্রশ্ন করলাম, আমার প্রিয়ার মত হৃদয় মনোহরণ কারক ফুল আছে কি কোথাও? বাগান বলল প্রতিটি কলির দিব্যি খেয়ে বলতে পারি, নেই নেই নেই। ]


* শের শায়রী (চব্বিশ)


আদম কা জিসম যব কি আনাসর সে মিল বনা
কুছ আগ বাচ রহী থী সো আশিককা দিল বনা
--- সৌদা


[ মানুষের শরীর ঈশ্বর তৈরী করেছেন পঞ্চভূত দিয়ে। কিন্ত খানিকটা আগুন তখনও বেঁচে গিয়েছিল। সে আগুনটা কোথায় গেল? সেই আগুন দিয়েই তৈরী হয়েছে প্রেমিকের হৃদয়। সেজন্যই প্রেমিকের হৃদয়ে সব সময় ধিকি ধিকি করে আগুন জ্বলে। ]


* শের শায়রী (পঁচিশ)


ইৎনা বদনসীব হ্যায় জফর দফন কা লিয়ে
দো গজ জমীন ভি না মিলি কুয়েঁইয়ারমে
--- বাহাদূর শাহ জাফর


[ আমার থেকে ভাগ্যহীনা আর কেঊ হবে না। মরবার পরে আপন দেশের মাত্র দু'গজ জমিও পেলাম না আমার কবরের জন্যে। ]


❐ সংগৃহীত আরও কিছু বাংলা শায়েরী ❐


১).
কুয়াশার চাদরে ঢাকা শীতের ভোরে,
মুক্ত দানার মত ছড়িয়ে থাকা
শিউলি ফুলের হাসির পসরা তোমার জন্য।
মিটিমিটি তারায় ভরা আকাশ আর
জোনাক জ্বলা রাতের মৃদুমন্দ বাতাসে ভাসা
হাসনুহেনার সুবাস তোমার জন্য।


২).
ঝুমাঝম বৃষ্টিতে গ্রাম্য বধূ বেশে ভিজতে
থাকা হিজল গাছের কানের দুল হয়ে
ঝুলতে থাকা হিজল ফুল তোমার জন্য।
বৈশাখে খোঁপায় পরাবো বলে কোঁচড়
ভরে জমা করা ম ম গন্ধে ভরা সফেদ
একরাশ বেলি ফুলের মালা তোমার জন্য।


৩).
বর্ষার জলে সদ্য স্নাত হয়ে কদম
গাছের দু'হাত বাড়িয়ে দেওয়া উপহার
একগুচ্ছ ভেজা কদমফুল তোমার জন্য।
ঘুম চোখে ভোরে উঠে কুড়িয়ে পাওয়া
তারপর আলতো হাতের ছোঁয়ায়
যত্নে গাঁথা বকুল ফুলের মালা তোমার জন্য।


৪).
শীতের চাঁদর জড়িযে,
কুয়াশার মাঝে দাঁড়িয়ে,
হাত দুটো দাও বাড়িয়ে,
শিশিরের শীতল স্পর্শে যদি, শিহরিত হয় মন
বুঝে নিও আমি আছি তোমার পাশে সারাক্ষণ।


৫).
মনে পড়ে তোমাকে যখন থাকি নীরবে
ভাবি শুধু তোমাকে সব সময় অনুভবে
স্বপ্ন দেখি তোমাকে চোখের প্রতি পলকে
আপন ভাবি তোমাকে আমার প্রতি নিশ্বাসে
ও বিশ্বাসে ।


৬).
যদি বৃষ্টি হোতাম…… তোমার দৃষ্টি ছুঁয়ে দিতাম ।চোখে জমা বিষাদটুকু এক নিমিষেই ধুয়ে দিতাম ।
মেঘলাবরণ অঙ্গ জুড়ে তুমি আমায় জড়িয়ে নিতে,
কষ্ট আর পারত না তোমায় অকারণে কষ্ট দিতে।


৭).
আজকালকার মেয়েরা নাকি বড়ই চালাক চতুর
আজকালকার মেয়েরা নাকি বড়ই চালাক চতুর
আরে আজকালকার মেয়েরা নাকি বড়ই চালাক চতুর
তোমায় ভালো বাসতে গিয়ে হয়ে গেলাম ফতুর।


৮).
আমি তোমায় ভালোবেসেছিলাম
তোমায় অবলা ভেবে
আমি তোমায় ভালোবেসেছিলাম  
তোমায় অবলা ভেবে
আর তোমার বাবা আমাকে পিটিয়েছিল
যেন ভেবেছিল একটা তবলা।


৯).
আমি তোমাকে ভালোবেসেছিলাম
ধনীর দুলালী ভেবে।
আমি তোকে ভালোবেসেছিলাম
ধনীর দুলালী ভেবে
আর তোমার বাবা আমায়
জ্বালিয়ে দিলো ধূপকাঠি ভেবে।


১০).
আমি তোমায় দেখছিলাম একটু অ্যাঙ্গেলে
আমি তোমায় দেখছিলাম একটু অ্যাঙ্গেলে
আর তোমার দিদিমনি আমায় তাড়ালো  
ভয় দেখিয়ে স্যান্ডেলের।


১১).
যখন কোথাও আগুন লাগে ,
লোকে জল নিয়ে ছোটে
যখন কোথাও আগুন লাগে ,
লোকে জল নিয়ে ছোটে
যখন কোথাও আগুন লাগে ,
লোকে জল নিয়ে ছোটে তাতে কি ?
বেটা বুদ্ধু কেবল ফায়ার সার্ভিসে
মিসকল দিতে থাকে।


১২).
যখন দূর থেকে দেখলাম, ওটা পাথর ছিল
যখন দূর থেকে দেখলাম, ওটা পাথর ছিল
যখন দূর থেকে দেখলাম, ওটা পাথর ছিল
আরে তারপর যখন কাছে গিয়ে দেখলাম,
তখনও ওটা পাথর ই ছিল।


১৩).
ঝাল খেয়েছি , মুখ পুড়েছে, ঠোঁট জ্বলছে ঝালের বিষে
ঝাল খেয়েছি , মুখ পুড়েছে, ঠোঁট জ্বলছে ঝালের বিষে
ঝাল খেয়েছি , মুখ পুড়েছে, ঠোঁট জ্বলছে ঝালের বিষে
এখন উপায় ?
ঝালের জ্বালা মিটিয়ে দাও , গোলাপ ঠোঁটের kiss এ।


১৪).
মেলে পাখা যায় রে উড়ে পাখি.
মেলে পাখা যায় রে উড়ে পাখি.
মেলে পাখা যায় রে উড়ে পাখি.
আর আমি সুখের ঘরে ধরনা দিয়ে
একা একাই থাকি।


১৫).
আরে জানো না কি পাখি ছাড়া আর কে কে দেয় তা?
আরে জানো না কি পাখি ছাড়া আর কে কে দেয় তা?
আরে জানো না কি পাখি ছাড়া আর কে কে দেয় তা?
জানো না বুঝি, জেনে নাও তবে
কবিসব দেয় বসে তা,
আর তাতে তো হয় কবি-তা।