তার কৃষ্ণ কালো চোখ ,
তার রাধাচূড়া মন ।
তার আলুথালু বেশভূষা
তার নাকেতে নোলক দোলে,
মেয়েটির নাম রুপালি ।
আঠার বছর ধরে
প্রাইমারী স্কুল ঘোরে।
সেই চেনা পথে আঠার বছর,
সেই চেনা পথে একমুঠো ফুল ,
আর আমসোটা ,টককুল ।
বইয়ের বিদ্যা মন লাগে না
তার চেয়ে ভাল ডাং-গুলি খেলা,
অথবা গ্রামের রাসমেলা ।
আরও ভালোলাগে গাছে ওঠা থেকে
জাল কাঁধে মাছ ধরা ।
এক হাতে তার পদ্ম-শালুক,
অন্য হাতে কাস্তে ,
মাথায় তার ঝুড়ি ভরা ঘাসের মুকুট,
সঙ্গে চলে পোষ্য ছাগল ছানা।
বড় বড় চোখে সে যেন দেবী দুর্গা ।
রুপালির মনে নেই
সে যে আর ছোট নেই ।
হল না তার ক্লাস ফোরে ওঠা
বিয়ে হয়ে গেল একদিন ।
রুপালির বর জোয়ান ছেলে
চাষের লাঙল সহজে ওঠায় কাঁধে,
মুদির দোকানে সন্ধ্যায় থাকে
সারাদিন থাকে মাঠে ঘাটে ।
তবে রুপালিকে বড় ভালোবাসে ।
বউ যে তার ইস্কুলে পড়া
হোক না গায়ের রঙটা চাপা ।
এমন বউ ভাগ্যেতে মেলে
নইলে কি এমন আছে তার ।
মাটির দেওয়ালে খড়ের ছাউনি
নামে মাত্র ঘর,
বৃষ্টির দিনে টুপটাপ ঝরে জল ।
পূর্ণিমার চাঁদ উঁকি মেরে যায়
ভাঙা চালের ফাঁকে ।
একটা পুকুর যদি বা আছে
ষোলো ঘরে টানাটানি,
রান্নার কড়ায় যদি ওঠে মাছ
তেল নেই তাতে মোটে ।
তবে রুপালির কোন আভিযোগ নেই –
যেন স্বর্গসুখ রয়েছে তার ঘরে।
ছেঁড়া শাড়ী খানা বারমাস পরে,
স্নান থেকে ফিরে
ভাঙা আয়নায় দেখে নেয় মুখ
এঁকে নেয় টিপ কপাল জুড়ে ,
বেঁধে নিয়ে চুল খুব তাড়াতাড়ি
্গরম গরম এক থালা ভাত
বেড়ে দেয় রোজদিন।
তবে আধ থালা খেয়ে উঠে পড়ে
তার জোয়ান স্বামী –
রুপালি যে এখনো খায়নি সকাল থেকে ।