হে আমার স্বাধীনতা!
কিইবা দেবার ছিল তোমাকে আমার!
ছিল দুরন্ত কৈশোর, উদ্দীপ্ত তারুণ্য
অথবা প্রেমের আগুনে পোড়া ফাগুনের যৌবন;
আর একটা জীবন ছিল গভীর ভালবাসার!
আমি ধন্য, আমি অনন্য
দিয়েছি সে প্রাণ তোমারই জন্য।


হে আমার স্বাধীনতা!
তখনও আসোনি তুমি বাঙালীর আঙিনায়,
বিমর্ষ বর্ণমালা তখন মুমূর্ষ ছিল ;
সে ছিল বন্দী,
বিপন্ন ছিল অবজ্ঞা, অবহেলা আর উপেক্ষায়!
অথচ তারও স্বপ্ন ছিল,
ছিল মুক্তির আকুতি আর
বিশ্ব জয়ের চুড়ান্ত আশাবাদ!
তার প্রত্যাশার পরিধি ছিল বিস্তৃত সীমানায়!


তবে মৃত্যু করেনি তারে গ্রাস।
আমাদেরই অগ্রজ;
ওরা প্রেমিক ছিল বর্ণমালার,
বুকের রক্ত দিয়ে ভালবেসে অকাতরে
ফাগুনে লিখে গেল অমর প্রেমের কথা
এই বাংলার আঙিনায়!
স্মৃতির মিনারে চেয়ে দেখ ওই
রক্তাক্ষরে লেখা আছে সেথা,
'একুশ আমার গৌরবের, একুশ আমার অহংকার!


হে আমার স্বাধীনতা!
হে আমার প্রেম, অনুজের ভালবাসা,
তোমার ঐশ্বর্যে সুখী হবো বলে
তোমার ভালবাসার প্রেমী হবো বলে
তোমার ছায়া ঘেরা প্রশান্ত বুকে
নিরাপদে নির্ভাবনায় ঘুমিয়ে রইবো বলে;
আমি তো জেগেছিলাম প্রত্যুষে সূর্যোদয়ের আগে,
আমি তো লিখেছিলাম নতুন কাব্য হৃদয়ের টানে!
তুমি তখনও নিমজ্জিত ছিলে কুয়াশার অন্ধকারে
অতলান্ত সাগরের গভীর তলদেশে!
তুমি হাঁপিয়ে উঠেছিলে জগদ্দল পাথরের ভারে;
তুমি অঝোরে কেঁদেছিলে রক্ত বন্যা দেখে
আহত পাখির মত নুইয়েছিলে শির!
ঝড়ের তান্ডবে তুমি খুইয়েছিলে নীড়!


হে আমার স্বাধীনতা!
তখনও আমার পাঁজরে লাগেনি গুলি!
আমি হেঁটেছিলাম দুর্গম পথে নির্ভয়ে;
তখনও ছিলাম আমি পাল ছেঁড়া নায়ে!
আমি এক হাতে ধরেছিলাম গুলি ভরা বন্দুক
অন্য হাতে ধরেছিলাম ভাঙ্গা হাল শক্ত করে!
আমি কী করিনি তোমাকে আনবো বলে?
আমি খড়ের গাদাতে নির্ঘুম কাটিয়েছি রাত,
ইটের উপাধানে ঘুমিয়েছি মাথা রেখে
আবার সুযোগ পেলেই করেছি প্রত্যাঘাত
জীবনটা বাজি রেখে!


হে আমার স্বাধীনতা!
তোমাকে আনবো বলেই তো
মাথা উঁচু করে পড়েছিলাম মৃত্যুসাজ!
শুধু শহীদের তালিকায নয়
হৃদয়ে দিও গো ঠাঁই, এইটুকু চাই আজ।