জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠিত হয় ১৮ জানুয়ারী, ১৯৯২ সালে। পরের দিন ১৯শে জানুয়ারী, ১৯৯২ তারিখে দৈনিক পত্রিকায় প্রেসবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে প্রথম ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিকে সমর্থন দেয় অনুপ্রাস জাতীয় কবি সংগঠন। সব দৈনিকেই এই নিউজ ছাপা হয়। কিন্তু দৈনিক ইনকিলাব বড় করে শিরোনাম দেয় ‘জাহানারা ইমাম ও অনুপ্রাস গোলাম আজমের বিচার করিবে’। অনুপ্রাস জাতীয় কবি সংগঠনের প্রতিদিনের কার্যক্রমের খবর সে সময়ের দৈনিক আজকের কাগজ সহ সবকটি দৈনিক পত্রিকায় ছাপা হতো। আন্দোলনে মিছিল মিটিং অব্যাহত ভাবে চলছিল। আমি (শেখ সামসুল হক) ঘাতক দালার নির্মূল কমিটির অনুপ্রাস ইউনিটের আহবায়ক ছিলাম। ফেব্রুয়ারীর ১ তারিখ থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিদিন বিকাল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলায় শ্লোগান হতো এবং বাংলা একাডেমীর পূর্ব পাশে রমনা পার্কে শ্লোগান এবং সেই সাথে নিয়মিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে কবিতা পাঠ হতো। কবিতার পাঠের জন্য এই স্থানটি তখন অনুপ্রাস চত্ত্বর নাম প্রকাশিত হয় চারিদিকে। এখানে সে সময় আসতো ভাষা সৈনিক গাজীউল হক, আবদুল মান্নান চৌধুরী, আবদুল আহাদ চৌধুরী সহ অনেকেই এসে উৎসাহ দিতেন। এসব খবর প্রতিদিন দৈনিক পত্রিকায় যারা কবিতা পাঠ করতো সব কবিদের নাম প্রকাশ করতো। ২৬ শে মার্চ, ১৯৯২ সালে কর্মসূচী ঘোষিত হলো। প্রতিদিনই জিরো পয়েন্ট থেকে মিছিল বিকাল ৫টা-রাত ৮টা পর্যন্ত প্রেস ক্লাবে আসতো আবার প্রেস ক্লাব থেকে জিরো পয়েন্ট যেতো। শ্লোগান দিতো, মিটিং হতো এবং কবিতা পাঠ হতো। আমি আহবায়ক ছিলাম অনুপ্রাস ইউনিটের।এ সময়ে আমরা শ্লোগান দিতাম- ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই- গোলাম আজমের ফাঁসী চাই। আবার ৭১ এর ঘাতক দালাল- নিপাত যাক নিপাত যাক। গণআদালতে প্রতীকী বিচার করা হলো। জাহানারা ইমাম দেখে যায় নাই কিন্তু সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির এবং মুনতাসীর মামুনের অক্লান্ত পরিশ্রমে গোলাম আজমকে আদালত বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। সেই সাথে যুদ্ধপরাধীদের বিচার হচ্ছে বা হইতেছে। বৃথা যায়নি জাহানারা ইমামের সেই পরিশ্রম।