ব্যস্ত শহরে রাত্রি নেমে এলো
নিশীথের ঘনকালো তিমির অবনীকে গ্রাস করিল,
নিঃপ্রভ হয়ে এলো দিবসের প্রভাটুকু,
নিস্তব্ধ চারিপাশ ।
জোনাকির প্রদীপ নিভে এলো,
কলরব মুখর বিহগগুলো ক্লান্তির অবসাদ,
স্তব্ধ হয়ে গেল ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক,
ব্যস্ত শহরে নিদ্রা নেমে এলো,
শুধু একটি পাখির চোখে নিদ্রা নেই, ক্লান্তি নেই,
নেই অবসাদ।
বিনিদ্র অক্ষিতে নিদ্রাগ্রাসিলেও, তিমিরাছন্ন রজনীর হিমেল হাওয়ায়,
শুধুই ডানাঝাঁপটায় বারবার।


ক্লান্তিহীন নিশীথ প্রহরী আর বুভূক্ষু নিশাচর প্রাণির মত,
নিশীথ বিরহী ডাহুকের মত,
নিশাচর বিরহীদের সাথে কথা কয়,
আর মনেপড়ে,
সেই অজস্র স্মৃতিভরা হলুদ পাখিটির হলুদিয়া গ্রামটি।
কোথায় সেই বৃদ্ধামাতার অশ্রুসিক্ত আঁচলের সুশীতল ছাঁয়া ?
কোথায় সেই স্মৃতিভরা মায়াবী ক্ষণগুলো।
কোথায় সেই ছোট্টবোনের আধো আধো বুলি ?
মনেপড়ে,
গ্রামের পথে প্রান্তরে চৈত্রের প্রচন্ড রোদ্দুরে,
অবাধে থেই থেই করে চঞ্চল মনে ঘুরে বেড়ানো,
আর প্রলয়ের দিনে আম কুঁড়ানো ।


কোথায় সেই স্বপ্নের ছড়াছড়ি,
প্রিয়ার উষ্ণ আদরভরা স্পর্শকাতর জড়াজড়ি।
কোথায় সেই বন্ধুদের আড্ডায় মুক্তউল্লাস,
কোথায় সেই মুক্ত বিহঙ্গের মত অবাধ বসবাস ?


আজ দূর প্রবাসে কারারুদ্ধ  বেশে এ জীবন,
এখানে সেই মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়তে পারেনা মনটা।


বিষাক্ত এ শহরের বিষাক্ত পবনে শ্বাসরুদ্ধ হই বারেবারে,
অবিরাম ব্যস্ততায়, কোলাহল পূর্ণতায়,
বেঁচেও যেন রয়েছি মরে ।
স্বার্থের এ অচেনা শহরে নিস্বার্থ খুঁজে পাওয়া দায়
তাই বুঝি নিয়তির শিকল আঁটা,
এ মুক্ত পাখিটির পায় ।
আজ এ দূর প্রবাসে, ইষ্ট লৌহ আর কংক্রিটের রাজ্যে,
অর্থলোলুপ স্বার্থ আর জুলুমের আবেশে,
মস্ত ইমারতে যেন মুক্ত থেকেও বদ্ধ,
লক্ষ শিকলের বেষ্টনীতে,
মুক্ত স্বাধীন বিদ্রোহী পাখিটি যেন অবরুদ্ধ  ।


গ্রামের যানজটহীন মুক্ত পথ ঘাট,
উন্মুক্ত খেলার মাঠ,
অবারিত শস্যে টইটম্বুর শ্যামল দিগন্ত,
সবুজের সমারোহ কতই যে বিস্তীর্ণ, খুঁজে পাইনে তার  অন্ত ।
প্রচন্ড রোদ্দুরে গ্রামের পথে প্রান্তরে,
বটবৃক্ষের সুশীতল ছায়া,
ভুলতে পারিনে গ্রাম্য কিশোরীর অকৃত্রিম মায়া ।


পড়ন্ত বিকেলে নদীর ধারে বসে,
রাখাল ছেলের উদাসী বাঁশির সুর,
ভুলতে পারিনে ভরা পুকুরে
কিশোরীদের সনে সাঁতার কাটা আর উষ্ণ ছোঁয়া সুমধুর ।


এ প্রবাসে সবচে বেশি মাকেই মনেপড়ে,
দিবস যামিনী তার তরে,
হৃদয় শুধুই পুঁড়ে।
মনেপড়ে আমায় নিয়ে কতনা তার আশা,
মনেপড়ে গ্রামবাসীর অকৃত্রিম  ভালবাসা ।


অর্থের টানে গ্রামকে ছেড়ে নিঠুর এ শহরে,
ক্ষণে ক্ষণে মনেপড়ে,
সকল স্বার্থ তুচ্ছ করে,
সকল শিকল টেঁনে  ছিঁড়ে,
স্বার্থের মেকি শহর ছেড়ে উড়ে যাই গ্রামে ফিরে।


                   যবণিকা


রচনাকালঃ০৪/০৯/২০১৩  ইং