বিচার বসেছে গ্রাম্য সালিশে, বিচার হবে তাই
গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত আঙিনায়
ধর্ষণ হয়েছে, গর্হিত কাজ এ যে
মেনে নেয়া নাহি যায়।
মাতবর আর আমজনতা,
আজি একাট্টা হয়েছে সবাই।
কঠিন বিচার হবে
অপরাধী যেন পার পেয়ে না যায়।
মাতবর হাকিলেন, কোথায় ধর্ষিতা
সামনে নিয়ে আস তাকে
জনতার সামনে বর্ণনা করুক
ধর্ষিত হয়েছে কেমন করে।
ঘোমটা মাথায় অবোধ বালিকা
চরণ চলিতে নারে,
জমিনের মাটি দুই ভাগ করে
লুকায় ধরনী মাঝে।
জড়োসড়ো হয়ে, উঠে কোনমতে
দাড়ায় সামনে এসে।
হাকিল মাতবর, ঘোমটা কেন?
চেহারা দেখাতে হবে।
না জানি আবার ঘোমটার আড়ালে
অন্য কেউ কথা বলে।
মুখ দেখাবার ইচ্ছা তাহার
মিশেছে মাটির সনে,
সুযোগ পেলে নিশ্চয় নিজেকে
শেষ করিত বিষ পানে।
সমাজপতিদের সামনে আসিয়া
নিরুপায় বালিকা অগত্যা ঘোমটা খোলে।
হু, এবার বল ঘটনা কী ঘটেছে তাই,
কিছু লুকাবেনা
আদ্যপান্ত বর্ণণা শুনতে চাই।
ধর্ষিত হয়েছো প্রমান কী আছে,
শরীরের কোথায় চিহ্ন রয়েছে
দেখাও খুলে সকলের মাঝে।
অসহায় বালিকা কী বলিবে তাহা
বুঝিয়া উঠিতে না পারে।
একজন পুরুষে ধর্ষন করেছে
রাতের অন্ধকারে।
এখনতো দেখি মাতবর বেটা
জনসমক্ষে গণধর্ষণ করিতে চাহে।
ক্ষোভে, দুঃখে বুক ফেটে যায়,
কী বলিবে সে মুখে।
কন্ঠ তাহার বাষ্পরুদ্ধ, বন্যা চোখের জলে
অবোধ বালিকা কিছুই বলিতে না পারে।
মাতবর বলে, নাতিউচ্চস্বরে
দেখুক জনতা, কন্যা কিছুই বলিতে চাহে না
অর্থ দাঁড়ায় নিশ্চয়ই তারও কিছু দোষ আছে।
মৌলভীসাহেব কী বলে।
গলা খাঁকারি দিয়ে মৌলভী কহিলেন উচ্চস্বরে,
মিয়ারা শোন, জ্বিনা ব্যভিচার, দেশটা এবার
ছেয়ে গেছে সর্বত্র।
জ্বিনা ব্যভিচারের মামলা যেহেতু উঠেছে আদালতে।
শাস্তি নিশ্চয় দিতেই হবে
জনসাধারণ লাই পাবে তা না হলে।
শাস্ত্রে আছে জ্বিনা ব্যভিচারে
উভয়কেই দোররা মারতে হবে।
মাতবর কহে, তাহলে বিচারতো হয়েই গেল,
উভয়কে একশো একশো জলদি দোররা মারো।
হায়রে সমাজ, হায়রে সমাজপতি,
তোমাদের বিচারে আজি ধর্ষক ঘুরে বেড়ায়
আর ধর্ষিতা অপরাধী।