বিজন,
খুব জানতে ইচ্ছে করছে,
তুমি কেমন আছো?
আমি জানি আমার এ লেখা,
হয়ত বা কোন দিন দেখবে না।
তবু আমার এই অবুঝ মনকে
বুঝিয়ে রাখতে পারিনা।

বিজন,
আমার রক্তে মাংসে
নিঃশ্বাসে বিশ্বাসে শুধু তুমি আর তুমি,
কি কিরে তোমায় ভুলব, বল?
আমার মধ্যে আমি বলতে
কিছুই অবশিষ্ট নেই, সবই শুধু তুমি,
শুধু তুমি আর তুমি।

বিজন,
আমার খুব করে মনে পড়ছে,
তুমি (MRT) মেট্রো রেলে কাজ করতে,
প্রতিদিন অফিসে যাবার সময় দেখা হত
তুমি আমার দিকে অপলক নেত্রে তাকিয়ে থাকতে,
আর আমি তুমাকে পাত্তাই দিতাম না!
তবু কেমন করে, কখন যেন
আমার রক্তের সাথে মিশে গেছ
বুঝতেই পারিনি!


বিজন,
সেই স্মৃতি মনে পড়ে,
চোখে আনান্দ অশ্রু ঝরে,
যে দিন হারিয়ে গিয়েছলাম
দুজন দুজনাতে, এক অজানাতে,
মনের অজান্তেই হয়েছিল দুজনার মিলন।


বিজন,
এক সাইক্লনের কথা মনে পড়ছে
যে সাইক্লোন শুরু হয়েছে কিন্তু
শেষ কোন দিন হবে কি না আমার জানা নেই।
যে দিন তোমাকে বলেছিলাম


বিজন,
আমি তোমার অস্তিত্ব আমার
দেহে বহন করে চলছি।
আমি তোমাকে বলেছিলাম,
তুমি তোমার বসকে,  
আমাদের বিষয়টি খুলে বল।
এর পরের দিন থেকে বেশ কিছু দিন
তোমার খবর ছিলনা।
একদিন হঠাৎ একটি ফোন নম্বর থেকে  
আমার নাম্বারে ফোন আসে,
আমি ফোন রিসিভ করি
তুমি শুধু এটুকুই বললে


লিলি,
আমার কোম্পানি আমাকে  
বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে, আমাকে
ক্ষমা করে দিয়ো, জীবনে আর কখনো
তোমার সাথে দেখা হবে না।


বিজন,
এই সাইক্লোন এখনো আমাকে
ক্ষত-বিক্ষত করে চলছে_____
রক্তাক্ত করে চলছে আমার হৃদয়কে______
এ সাইক্লোন কি থামার মত বিজন?


বিজন,
আমি অনেক চেষ্টা করেছি
ঐ নাম্বারে, কিন্তু নাম্বারটি ছিল
একটি টেলিকম শপের,
তারা তোমার কোন ঠিকানা দিতে পারেনি।
আমি গিয়েছি তোমার কোম্পানির কাছে,
তারা বলেছে, সিঙ্গাপুরের আইনে
কোন (ভিসা)WP ধারীকে
কোন সিঙ্গাপুরিয়ান বিয়ে করতে পারে না।
বাধ্য হয়েই তারা তোমাকে
দেশে ফেরত পাঠিয়েছে।


বিজন,
আমি তোমার জন্য সিঙ্গাপুর সরকারের কাছে,
তোমার নাগরিকত্বের জন্য
আবেদন করে রেখেছি।
তুমি চলে এসো আমার কাছে।
আমি এখনো তোমার অপেক্ষায়,
তোমার জন্য আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত
অপেক্ষা করব।
মৃত্যুর আগেও যদি একনজর তোমায়
দেখে যেতে পারি তবু আমি শান্তি পাব।  


বিজন,
তুমি ছাড়া আমার বেঁচে থাকা
আর না থাকা সমান কথা,
তবু বেঁচে আছি, কেন জান?
তুমি আমাকে যে অস্তিত্বের জানান
দিয়ে গিয়েছিলে, ও এখন
পাঁচ বছরের ছেলে।
অন্তত ওর জন্য হলেও
আমাকে বাঁচতে হবে।


কিন্তু বিজন,
ও যখন আমাকে জিজ্ঞেস করে
ওর বাবা কোথায়, তখন
আমি তাকে চোখের অশ্রু ছাড়া
আর কিছুই দিতে পারিনি।


ইতি
তোমার
লিলি বিজন



(সিঙ্গাপুরের একটি মাসিক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত, বাংলাদেশী ছেলে এবং চাইনিজ মেয়ের বাস্তব প্রেমের কাহিনী অবলম্বনে, আজকে আমার এ গদ্য কবিতার আয়োজন। উল্লেখ্য এখানে আমি ওদের ছদ্ম নাম ব্যবহার করেছি।)