যখন আমি কোন জলাধারের দিকে চাই,
শুধু একটি প্রতিচ্ছবিই দেখতে পাই।
পিছনের গাছপালা, আকাশ কোথায় হারিয়ে যায়,
আমার প্রতিমুর্তিটা শুধু আমার দিকে চায়।


কিন্তু এযেন মোটেও আমি নই
সচেতন মনে খুঁজি আমি কই?
খুঁজে পাই শুধু বাদামি বাবরী, কুর্তা ছিল গায়ে,
তাকিয়ে দেখি-
কোটি তার পরে, বড়সড় বুট জুতা ছিল পায়ে।
ঠকঠক রবে পায়চারি করি বড় জাহাজের পর,
আগের জন্ম, নতুন জন্মের স্মৃতি বিস্মৃতি মিলে এক জাতিস্মর।


আজানুলম্বিত ধুঁতি, চটি জোড়া পরে উত্তরীও ফেলে ঘাড়ে,
আধপেটা পান্তা খেয়ে চললাম মাছবাজারের মোড়ে।
পথের দুপাশে বাড়ি, দেখছি দুরের ডোবাটি,
হঠাৎ দেখি সিঁড়ির ধারে রাখা এক মস্ত ঘটি।


কিছুদুর এগিয়ে দেখি, খালের ধারে ডিঙি আছে বাঁধা,
হঠাৎ দেখি মস্ত নদী, বিরাট জাহাজ ঘাটে রাখা।
ছিল ওটা নুনের জাহাজ, বস্তা বস্তা নুন,
বস্তা বহনে অক্ষম মুটের পিঠে খুন।
তাকিয়ে দেখি-
দক্ষিণে বিশাল নদী, বামে নতুন জাগা শহর,
নিজের মুখ নিজেই দেখে মনে হল নিজেকে জাতিস্মর।


নুনের আড়তে বসে, শুয়ে খাতায় কিসব লিখে যাই,
চাকর যত, দাসের দল চারপাশে করছে আই চাই।
দেশি বিণার তানে মুখর রয় সারাটা দিন,
দিবা স্বপ্নে ঘুরে বেড়াই আরব, কাবুল, চীন।


সন্ধ্যা নামে, মাছ হাতে ফিরছি আমি ঘরে,
হাটুরে সব বাড়ি যাচ্ছি গরুর গাড়ি চড়ে।
সাঁঝের আঁধার চতুর্দিকে, গাড়ি দুলে চলে,
তাকিয়ে দেখি-
কাঠের কেবিন, ছোট বাতি মিটমিটিয়ে জ্বলে।
টগবগিয়ে চলছে ঘোড়া, রাত প্রায় দুই প্রহর,
ক্লান্ত প্রকৃতি, ক্ষুরের রোদনে ঘুমিয়ে পড়েছে জাতিস্মর।