নিজের ব্যথাটা যে কোথায়
আজো হয়তো ঠিক ভাবে বুঝা গেলনা,
একটু যতনকরে কাছে ডেকে  
হয়তো বোঝা হয়নি কোনদিন ।
তবুও সময় মাঝে মাঝে--
কেন যেন ভীষণ মন্দে যায় ,
কখন যে ভোর হয় আলো ছড়ায়
চোখ চেয়ে দেখা হয়না কতদিন !


অবশ্য সেদিন-সেই প্রথম রাতে
সারাটা রাত ঘুম হল না-
তার ঘরের খোলা জানালায়
দেখলাম বাইরে দিঘির পাড়,
তাল মাথায় সূয জেগে সবে
জাম পাতায় মেতেছে লুকোচুরি খেলায়।
কিন্তু হল না আর খেলা দেখা
চোখ জ্বালা ধরছে তখন-
একটু তন্দ্রায় হয়তো গিয়েছিল চোখ।
তারপর কাকনহীন একটা খালি হাত
আমায় টেনেছিল কিনা জানি না !
চোখ চেয়ে তার চোখে
সেই প্রথম দেখলাম-
কত অব্যক্ত বিস্ময় চেয়ে
বললে থাকলেন যে
উচিত ছিল কী ?
আঙুল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আর যতসব
অস্তির করে তোলা কথা ।
অথচ ঠিকসময়ে ঠিক কাজটা
  কবেই বা হয় ঠিক কখন !
হাতখানা চেপে বললাম
তোমার ঘরে চাঁদের আলো আসতে
সংকোচ করেনা একটুও;
আর সুর্যের সেতো অনায়াসেই আসে ।
কিন্তু এঘর-ওঘর মাঝে একটুওপথ
মুঠো ফোনের বার্তা গুলোর বুঝি
তাড়া ছিলনা একটুওপথেই কাটলো রাত ।
মৃদু হেসে বললে;
রাতের ভেজা কুয়াশা শিশির মিশে
ছুয়ে আছে ঘাসের ডোগায়,
উষার দৃষ্টিতে ভীষন স্পষ্ট দেখায়
তাই না -----
কৌতূহলী চোখ চেয়ে আমার দিকে,
শিশির ভেজা সেই মেঠ পথ বেয়ে
আমি হেটে যাই অনেক দূর -
সেই বিয়ে বাড়ি-বাসযাত্রা,
ভ্যান গড়ানো ভাঙ্গা রাস্তা এলোমেলো কথায় ।
মধ্য রাতে চা আড্ডায় চলা
দুষ্টুমির ছলে অনেকের অনেক কথা বলা,
সেই ফাঁকে চা কাফে ঠোট চেপে
চোখে তার আবছা অতৃপ্ত তৃষা ।


তারপর কেটে গেছে অনেক দিন
বাসরের সেই রক্ত জবা গোলাপ পাপড়ি
শুকে গেছে কবেই !
অথচ পথে ছড়ানো অগোছালো কথা
এত কাল গুছিয়েছে ভাষা ।
আজ বেলা গড়িয়ে অনেক
চোখ তার স্পষ্ট গভীর তৃষা নিয়ে ।
যে তৃষা আদিকালের প্রথম ঊষা লগ্ন হয়ে
চলেছে অনাদিকালের প্রবাহ ধারায় ।
মাঝের সময়টুকু শুধু চোখ ঠাউরানো অস্পষ্ট কথা,
যেন একে অপরের মাঝে আদি-অনন্তরে মিল ধারা ।


ফেরার পথে বললে করুণ সুরে
আজ রাতটা থেকে গেলে হয়না !
দুজনে পাশাপাশি বসে দুটো কথা বলবার মতন
তারপর চোখ ফিরিয়ে  অন্য দিকে—
বললাম, গতরাতের যা সৃষ্টি
মুছে যাবে আজরাতের আঁধারে;
ধরে রাখতে চাইনা কিছুই
শুধু সময়ের নির্যাস টুকু নিতে চাই ।
ক্ষয়ে যাওয়া সময়ের ক্ষয়েছে অনেক কিছু
হয়তো অনাগত কালের নেই খোয়ানোর ভয়,
সামনেই আমার পথে
যেতে হবে বহু দূর—
আজ তবে আসি ।

স্বরাহত পাখিনীর মতো
বলেল আদুরে চোখে
অতশত বুঝিনে আমি পল্লী মেয়ে,
আসতে হবে আরেকটি বার
রইলো আগাম নিমন্ত্রণ;
একদিনের নিমন্ত্রণে আপনাকে আসতে হবে ।
তারপর একটু থেমে বলেল,
কেমন মশাই দিলেম তো পথে কাঁটা !
দুষ্টমি হেসে বললেম,জানি না কী মনে করবে
আজকের এই যান্ত্রিক যুগে অভ্যাস্ত যানে চরে
যদি সময় মেলে সময়ের ফাঁকে,
  আসবো তবে এই পথে
কাঁটায় ক্ষত হলে জানি নিশ্চয়ই যন্ত্র নেবে ।


পল্লী মেযে জানিনে সেদিন
কী বুঝতে-কী বুঝেছিলে,
বৈশাখি মেলা হলো-জ্যৈ্ষ্ঠ মধুমায় গেল
আম কাঁঠাল আর দুধে ভাতে
নিত্য অতিথি আসে পল্লী ঘরে ।
জানি না সে মেয়ে,ছিল কী না
কতদিন কার পথ পানে চেয়ে ।

আজ আমার পায়ে টান পরেছে
থেমে গেছে পথ চলার পথে,
নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি কবেই
এখন সময় ব্ড্ড অসল বয়ে যায়;
খবরের কাগজে মুখ খুঁটে
কখনো বা কবিতার পাতায় ।
মাঝে মাঝে কার সাথে কথা বলতে ভীষন ইচ্ছে হয় ।
আমার একরোখা সরলতা ভুলে,
শুধু শুধু ঝগরা মিছে অভিমানে
কোন একদিন কোন এক পথে ।


আজ হঠাৎ-ই এ পথে
অফিসের কাজে আসতে হয়েছে,
সামনের বাসাটা বুকিং দিয়ে
ফেরার পথে অপ্রত্যাশিত দেখা !
টির্শাট-প্যান্ট খোলা চুলে
কাজলহীন চোখ রোদ চশমা পড়ে,
বললে আমায় চিনতে পারলেন ?
আমি পল্লী মেয়ে;
এখন থাকা হয় আপনার বাসার কিছু উত্তরে
আমার উনি কলেজে মেয়েদের পড়ান,
বড্ড সৌখিন মানুষ,
সখ করে দেখুন না বাসাটা করেছে কেমন ।
চশমা খুলে আমার দিকে চেয়ে
বললে নিমন্ত্রণ রইলো আসবেন কিন্তু !
(সন্ধ্যা আকাশে মেঘ জুমেছে
থেমে থেমে দমকা হাওয়া বইছে,
সময়ে সময়ে কেন যে শান্ত বুকে ঝড় ওঠে
নিশ্চুপ আধারে বিজলী রেখাজ্বলে ।)
আমি বললাম অনেক দিন পরে,
তোমায় দেখলাম খুব কাছ থেকে
নিমন্ত্রণ রুপ বদলে আজ এসেছে এই পথে
যদি কিছু মানে না কর;
আজ না হয় দেখলাম ভুল করে ।
তা সব মিলে আছো তো ভাল ?
নির্বাক উত্তর দিলে
চোখে চোখ চেয়ে হয়তো কিছু বললে
এতদিন পরে কুশল------
আছেন তো সেই আগের মতন
কথা বলার একই ধরন ।
তারদিকে চেয়ে বললাম,
আমার যেতে হবে ।
ঠোঁট দুটো আলতো দুলে,
হয়তো কিছু বলতে গেলে—
থামিয়ে দিলাম থাক;
নিমন্ত্রণ!না হয় রইলো পড়ে ।
আমায় এখানে কিছু দিন খাকতে হবে
আসা-যাওয়া একই পথ;
দুরত্ব ও খুব বেশি নয়
শুধু ব্যবধান ঘটেছে অনেক ।
তবুও কালের নিয়মে,
হয়তো এভাবেই দেখা হয়;
কথা হয় অনিমন্ত্রণে ।।