গাঙ পাড়ের ঐ বট গাছের চাইতে বেশী বয়স গনি মিয়ার-
এই চোখের সামনে কতজনা আইল আর গেল
তবু আমার ডাক আইলনা
বট গাছের নীচে বুড়া ঝিমায়;
দুই চোখে ঘোলা ঘোলা দেহে সব
দিনভর কি সব ভাবে , মাঝে মাঝে আপন মনে বিড়বিড় করে
হিজলের বনের দিকে তাকায় ;
ভাসে হালিমার মুখ, বৈশাখী মেঘের মত
সারাসময় উইড়া বেড়াইত তার মন
সোহাগী বউ আমার কই যে পলাইল;
আইজ বড় একলা জীবন
আর অই হানে আছিল জমিদারের বাড়ি,
আংরেজ শাসন চলছিল, তহন জবর দাপট আছিল জমিদারের
আংরেজের সাথে জমিদারের কি গলায় গলায় মিল
কুঠি বাড়ি যেন মতিঝিল।


হায়রে কতকিছু দেখছে এই পোড়া চোখ
এই আংরেজরা বড় কস্ট দিছে ,গোটা গেরামের মানুষগুলারে ,
তহন নেতাজী দিল ডাক, রক্ত দেও স্বাধীনতা আইনা দিমু
এই ডাকে গাঙপাড়ের সব জুয়ান ডেকরা পোলাপাইন
পাহাড়ের লাহান আংরেজের লগে লড়াই করছে
এই লড়াইয়ে যে ছেলে একবার ঘর থাইকা
বের হইছে সে তো নয়, তার রক্ত মাখা পিরান আইছে
সেই সময় আমার হালিমারে রাইতের আইন্ধারে
ওরা ধইরা লইয়া গেল, সে আর ফিরলোনা ;
লোকে কয় বুইরা পাগল, কিন্তু আমার মন কেও জানতে পারল না
হেরপর অইল ভাষা আন্দোলন
ঢাহার শহরে রফিক-জব্বর জান দিয়া লড়ে, মরে কাতারে কাতারে !
চারদিকে তহন বাতাসে বারুদের গন্ধ
অইল যুক্তফ্রন্ট তাও ভাইংগা গেল
ভাসানি ,হক, আরো কত নেতা আইল ,
অইল মুজিবের ৬ দফা আন্দোলন , ৬৯ এর গন অভ্যুত্থান
অইল ৭০ এর ইলেকশন, এই চোখ শেষপর্যন্ত দেখল
৯ মাসের যুদ্ধ, হায়রে যুদ্ধ, কত রক্তের খেলা
এই স্বাধীনতার জন্য দেশের দামাল ছাওয়ালরা
তাগো লাল রক্তে ভাসাইয়া আনল এই দেশের
পতাকা, ৭১ এ অইল দেশ স্বাধীন।
তাতে কি অইব,একদিকে আনন্দ আর দিকে কান্দে মানুষ
চাইরদিকে হাহাকার, গাঙে ভাসে যুবকের লাশ
হানাহানি মারামারি , কাড়াকাড়ি -বারাবারি
ঘরের মধ্যে সাধু হয় ব্যভিচারি  
এই চোখে দেখলাম, ৭৪ এর আকাল
এই দেশে ই দেখলাম, মিলিটারি আইল, স্বৈরাচারী শাসন অইল,
নুর হোসেন আর মিলনের রক্তে আবার আইল গনতন্ত্র।


অহন ও আগুন জ্বলা বন্ধ হয় নাই, নামে গনতন্ত্র খালি।
কিন্তু হাছা হাছা কি গাঙ পাড়ের মানুষ স্বাধীন অইছে ?
যে গাঙ এর ভরা যৌবনে পাল তুইলা যাইত সওদাগরী নাও
ঐ খানে আছিল নইহাটের ঘাট,
আইজ গাঙ নাহি মইরা গেছে কেও কেও কয়
আরে গাঙ কি আর মরে- কও ?
ওই মরা গাঙের দক্ষিণ পাড়ে কত জনের বসতি
ও গাঙ তুই মইরা গেলি কেন্‌?
উজানে দিলে বান , কেমনে বাঁচে ভাটি গাঙের পরাণ ।
জানি তুই অভিমান করছস্‌ , দেশ স্বাধীন অইয়াও অয় নাই
অহন আংরেজ নাই তবুও আগুন জ্বলে
এখন ও ভাইগো রুজি রোজগারের কোন বন্দোবস্ত নাই
এই স্বাধীন দেশে, এখন ও মায়ের আদরের ছেলে নিখুঁজ হয়
হায়রে এখন ও আগুন জ্বলতাছে চারদিকে
তবুও আমার মন কয় তুই আবার ছলাত ছলাত কইয়া বইবি
আবারও আমার হালিমা খিল খিল কইরা হাইসা উঠব
আবার ও তোর বুকে রঙ্গিন পালতোলা নৌকার দাঁড় টানবো মাঝি
গলায় তার রইবো ভাটিয়ালি গান, মাঝি গাইবো জীবনের গান।