আবার কবে আমাদের দেখা হবে রাঙ্গাদি?
আবার কবে আমাদের দেখা হবে?
এ জনমে?
তোমার ঠাকুরের কাছে জ্বালানু প্রদীপের
তেল যে প্রায় শেষ হতে চলল।
তুলসী তলার তুলসী গাছটাও প্রায় মরি মরি।
তবুও কী সময় হলো না আমাদের দেখা করার?


একবার নয় দু বার নয় বার বার
চিঠি পাঠিয়েছি ঈশ্বরের কাছে,প্রার্থনার ডাকে।
কই তোমার ঈশ্বর তো কোন সাড়াই দিল না রাঙ্গাদি,,,
ঈশ্বরকে লিখেছিলাম
আমার জানতে খুব ইচ্ছে করে
কেমন আছে আমার শৈশব, কৈশোর ভবানীপুর,
কেমন আছে আমার খেলার মাঠ, সুজাতপুরের হাট,
কেমন আছে আমার পথ ঘাট, ইঞ্জিনের নৌকা
লক্ষ্মী পুজোর চুরির রাত্?
কই কোন উত্তর আসে নি রাঙ্গাদি,
কোন জবাবই আসে না তার কাছ থেকে।


তুমি জান রাঙ্গাদি আমি প্রতিদিন
তোমার শেখানু মন্ত্রটাই বলি ঠাকুরের কাছে।
অখন্ড মন্ডলা কারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম।
তদপদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ।।
কিন্তু আমি বুঝছি না
ঠাকুর কী এই ভাষাটা আর বুঝেন?
নাকি আমার মতই কখনো ইংরেজি কখনো ফরাসি ভাষায় চালাচ্ছে আজ তার জীবন।
আর কুয়াশার মত স্মৃতির স্মরনে ফিরে পেতে চাচ্ছে সংস্কৃত জ্ঞান খানি।
যেমনি ভাবে আমিও ফিরতে চাই তোমার কাছে।
যেমনি ভাবে আমি আবার উঠতে চাই তোমার কোলে।
আবার তোমার পিছু পিছু হেটে যেতে চাই ভিন্ন গ্রামে।
তোমার শাসন বারনের বেড়াজালে
আবদ্ধ হতে চাই সানন্দে।
তোমার হাতের ইলিশ সরিষা
খেতে চাই একসাথে।
                  পারবো কী রাঙ্গাদি?


আমি পারবো কী কথা রাখতে
আমার হবিগঞ্জ শহরের সাথে?
বৃন্দাবন কলেজের চত্বরের সাথে
যে কথা দিয়েছিলাম পঠন পাঠনে,
চৌধুরী বাজারের চৌরাস্তায় দাড়িয়ে
যে শপথ নিয়েছিলাম মিছিলে মিছিলে,
খোয়াইয়ের পাড়ে বসে
যে কথা দিয়েছিলাম খোয়াই কে কবিতা লিখে লিখে,
চিড়াকান্দির বড় পুকুরের পাড়ে দাড়িয়ে
যে বিকাল কে কথা দিয়েছিলাম কী জানি ভেবে!
কথা দিয়েছিলাম
আমার জন্মভুমি সুনারুর মাটিকে ছুঁয়ে  ছুঁয়ে।
সে সব কথা কী রাখতে পারবো রাঙাদি এ জীবনে?
কথাকি রাখতে পারব আমি তোমার সাথে?
যে কথা দিয়েছিলাম আমি তোমাকে,,
কখনো দুষ্টের শিরোমনি হয়ে,,
কখনো অবাধ্য নাতি হয়ে
দিয়েছিলাম পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়ে
তোমার ভয়ংকর শাসনে।
যে কথা দিয়েছিলাম তোমার  কিনে দেওয়া
বিস্কিট,  চকলেট, আইসক্রিমের সাথে গোপনে গোপনে।


নাকি সে সব কথা রবে আটক,
নক্ষত্র থেকে নক্ষত্রের ব্যবধানে?
রবে পরে যা তা হয়ে মরি মরি তুলসী গাছটার আড়ালে?
তেল হীন প্রদীপ টার সলিতা হয়ে
পুড়ে ছাই হয়ে যাবে ঈশ্বরের অসহযোগে?
আবার কী হবে না দেখা রাঙ্গাদি তোমার,
আমার দেওয়া কথা গুলোর সাথে?


নাকি আজকের কথাগুলোও থাকবে জমা
ভবিষ্যতের আরেক কোন কবির তরে?
কথা গুলো অনন্ত কাল শুধু দেওয়াই হবে
এ ঘাট থেকে ও ঘাটে?
ফুল থেকে ফলে
আবার ফল থেকে ফুলে?
আবার কোন দিদিমাকে রাঙ্গাদি ডাকা হবে
আবার কোন কারনে?
দূরত্ব ব্যবধানে ছটপট করবে আরেক কোন রুদ্র
আরেক কোন স্মৃতির পুরুনো পাতা খোলে!!
এভাবেই কী দেখা হবে আমাদের
এ জনমে কিবা ও জনমে?
-----------------------------------------------------


রুবেল চন্দ্র দাস
প্যারিস