উৎসর্গ : কবি বন্ধু ও সঙ্গীতশিল্পী  Putul Chakrabarti এর চরণে।



অন্নের সাথে কখনো তাদের ভালো ভাবে দেখা হয় না।
না হয় না দেখা,সত্যি-ই বলছি হয় না দেখা প্রতিদিন!!


এ দুনিয়া এত ভাল হল কবে থেকে?
যে দেখা হবেই প্রতিদিন!!!
কবে থেকে এই দুনিয়া এত উদার হল তাদের তরে?
কবে থেকে ঐ বাবু শিখে গেছে
এক প্যাকেট গরম গরম ভাতের সাথে
কাচা লংকাও ফেলে দিতে ডাস্টবিনে?
কবে থেকে ম্যাম সাহেব বুঝে গেছে
মাছের কাটার গায়ে একটু মাছ
রেখে দিতে তাদের জন্যে ?
আর ছেলেমেয়ে গুলি,যেগুলি অসভ্য অসভ্যা মনে মনে;
স্নেহ মায়া মমতার ভিখারী ভেতরে ভেতরে।
চির ফকির চোখের কান্নার জলের কাছে,
সেগুলো কবে মানুষ হলো?
যে ফেলে দেওয়া খাবারটায়ও
এক গ্লাস পানি না ঢেলেই রেখে দিবে
ডাস্টবিনের পাশে?
বরং তারা শিখছে খাবার যখন ফেলবে,,,
এমন করে ফেলবে যাতে তা আর খেতে না পারে
কোন কীটে!!!
এক দলা ঘৃনা না হয় থু থু মিশিয়েও দিতে  তাতে।


কবে? কবে থেকে এ দুনিয়াকে
তোমরা সভ্যতার স্বর্ণশিখড়ে বসাও?
যখন থেকে তোমাদের সূউচ্চ প্রাসাদের
পাশের রাস্তার উপরে খোলা আকাশের নিচে
ওরা বৃষ্টির সাথে শুয়; তখন থেকে?
কখন তোমরা তোমাদের ভদ্র বলা শিখলে?
পেটের দায়ে যখন কোন মেয়েকে বেশ্যা পাড়ায় দেখ,
তখন থেকে?
নাকি রিক্সায় চড়ে আজ অবধি যখন
জানো না তোমার বৃদ্ধ রিক্সাচালক লোকটির,,,
তোমার মতই প্রাণ আছে,তোমার মতই গায়ে রক্ত আছে,
আছে সন্তান,স্ত্রী কন্যা আর চোখ ভরা স্বপ্ন,
আছে তার কাছেই তাকে জানার,,,
আর তোমাকে দেখে এই দুনিয়াটা দেখার।

কী আর দেখাবে তোমরা?
কী আর দেখাবে এই প্রাণ গুলোকে?
বরং তারাই তোমাদের দেখাচ্ছে জীবন কাকে বলে?


গালিভরা কান নিয়েও কাতর চোখে, কাতর মুখে ;
দাঁড়ায়  ওরা দাঁড়ায় তোমাদের সম্মুখে।
সত্যি দাঁড়ায় কি?
নাকি দাঁড়াতে তোমরা বাধ্য করছ তাদের?
টেনে হিঁছড়ে নিয়ে এসেছে হেথায়!!
নিয়ে এসেছ রাস্তার উপরে!
ডাস্টবিনের হাড়টার গায়ে আরেকটু মাংস রাখলে
কে আসত তোমাদের সম্মুখে?
রাতে রাতেই গায়েব হয়ে যেত তোমাদের পাশ থেকে।
এক ডাস্টবিন থেকে আরেক ডাস্টবিনে ওদের জন্য থাকত ঈদ আর ঈদ;পূজা আর পূজা।
আনন্দ আর আনন্দ,শান্তি আর শান্তি।
লাফিয়ে লাফিয়ে যেত তারা,,,,
এক গাছ তলা থেকে আরেক গাছ তলা,
এক আকাশ থেকে আরেক আকাশে,,,
স্বাধীন দেশে পেত স্বাধীন বাতাসটা!
ক্ষতি কী ছিল?
যদি ফেলে দেওয়া ভাতটুকুতে জল ঢালতে না?


না ঢেলে কী আর তোমরা পার বাবু সাহেব?
এই ঢালাঢালিতেই মগ্ন তোমাদের জীবন।
আগুনের উপর ঘি আর পানির উপর বাতাস
ঢেলেই তো চলছে এ সভ্যতা।
ভাঙ্গছে নদী,পুড়ছে ঘর,
বাড়ছে বোমা,বাড়ছে অস্ত্র,বাড়ছে ইস্ট ইন্ডিয়া।
ভালো চেহারা আর ভালো পোশাকটাকে জিজ্ঞেস কর?
সাহস থাকলে সে বলে দিবে তা।
অথচ তোমরা বল না,তোমরা জানো না কোথা থেকে আসে কেমন করে আসে এই পথ শিশুগুলি
রাস্তার উপরে?
যে রাস্তায় কুকুরও থাকতে পারে না জীবন নিয়ে
সে রাস্তায় মানব সন্তান আসে কোন সুখে?
কোন সুখে তারা হয় সর্বহারা?
কোন সভ্যতায় পাচার শব্দে
তারা শিখে নেয় বেশ্যালয় কিবা রাস্তা?
কোন সমাজের নীতি রীতির দুয়ারে
তারা খায় ঘাড়ধাক্কা?
না কি জান সবই?
জানো?  জানো? জানো তোমারা?


কেবলি মুখ লুকাও নিজের থেকে?
যেভাবে লুকাতে চাও ব্যথা কষ্ট যন্ত্রনা
ওদের গায়ে পচা অংগপ্রতঙ্গ থেকে?
তোমাদের অভিনয় ভরা জীবনের কাছে
ওই পচে যাওয়া পা,পচে যাওয়া  হাত,
আর পচে যাওয়া জীবন,,,
সবই এক অভিনয়
সবই এক গল্প,,,!!


হ্যা,হ্যা,হ্যা গল্প
তাদের কাছেও তা এক গল্প,
রাজধানীর গল্প,দালানের ভেতর ভুতের গল্প,
,পার্কের ভেতর স্ট্যাচুর গল্প,শহর জুরে মূর্তির গল্প।
তাদের কাছে তা গল্প আর গল্প,,,,


শুধু গল্পের ব্যথাটা নেই তোমাদের কাছে।


অজুহাতের তরীতে বসে
কারন খুজে বেড়াও
কারণ হয়ে।
----------------------------------------------------------------
রুবেল চন্দ্র দাস
প্যারিস
২৫ জুলাই ২০১৭