মেয়েটি বলছে ছেলেটিকে
গোধুলী আলোর মাঝে কোন এক নির্জন স্থানে।
কিছুক্ষণ পরই বিদায় নিবে সূর্য
আরো অন্ধকার করে দিবে চারদিক।
আর বীভৎস  ঘুটঘুটে  
কালো হয়ে যাবে চোখের দূরত্ব খানি।
তার মাঝেই দাঁড়িয়ে মেয়েটি বলল
আমাকে ভালবাস?
ছেলেটি মাথা নাড়িয়া বলিল হ্যা।
মেয়েটি কথাটাশুনে কিছুক্ষণ চুপ হয়ে রইল।
নিস্তব্দ দুনিয়ার গর্জন যে শুরু হয় এভাবেই।
তারপর একটু মুচকি হাসি দিয়ে মেয়েটি বলল
দেখ হ্যা যুবক তোমরা তেতুল খেতে ইচ্ছে হচ্ছে
বাজারে যাও,শুনেছি পাশেই কোন পাড়া আছে
সেখানেও চেষ্টা কর।জিব শান্ত হবে।
তবু ভালবাসার কথা আমাকে বল না।


তুমি জানোই না আমি কে?
চলতি পথে বদন দেখেছ একপলক,
আর এমনি পড়ে গেলে প্রেমে?
কি কপাল গো তোমাদের!
জন্ম মাত্রই সব অধিকারের সাথে
প্রেমের অধিকাটার সিল মেরে নাও।
কিন্তু এই আমি,,,
এই আমি হাসনাভানু, তার কোন অধিকার নেই।
রক্ত মাংস, হাত, পা, মাথা নিয়ে জন্মেছি কেবল।
এ ছাড়া আর কিছুই যে নেই আমার।
শুনেছি মানুষের হৃদয় থাকে
সেই হৃদয়ের ভাষায় কেউ কাদে আবার কেউ হাসে।
কিন্তু কোনদিন এই দেহ টা তার দেখা পেল না বাবু।
চারদিকে এত সব হৃদয়হীনের মাঝে
হৃদয়ের স্পন্দন শুনা যে
মজ্ঞল গ্রহে মানুষের সন্ধান ।
ভাবছ কী আবোল তাবোল বলছি?
জীবন যাদের উৎসহীন
তাদের সত্য টাই যে এক মিথ্যা ।


আমি তোমার মতই
ছোট্ট একটা দেহ নিয়ে জন্মেছিলাম,,
আমারও একটা নাভি-বন্দন ছিল কারো সাথে।
কিন্তু কে দিল এই নাভি-বন্দন?  
তা কেউ জানলো না।
না তোমাদের ঈশ্বর, না তোমাদের আল্লাহ।


আমার জন্মটায়
ওদের আপত্তি ছিলো কিনা জানি না?
জানলে জিজ্ঞাস করতাম
কী অকর্মার ঢেকি গো ঈশ্বর তুমি,,,?
আমাকেই জানতে দিলে না, আমার নামটা কী নিব?
হাসনাভানু না শ্রীমতি শতরূপা মনু?
ভদ্দর সমাজে থাকি,গা ঢেকেই থাকি
তাই সবার মত করে, স্রোতে গা ভাসিয়ে
একটা নাম নিয়ে নিয়েছি।


মা বলেছেন যে আমার বাবা মোহাম্মদও হতে পারে আবার শ্রীমানও হতে পারে।
মায়ের কথাটা আমার বেশ ভাল লেগেছে রোমিও
এত সব ভেদ বিভেদের মাঝে কত সুন্দর ভাবে
আমার মায়ের স্থানের কাছে সব এক হয়ে গেল।


রোমিও,আমার মা যেখানে থাকতেন
সেখানে তোমার মত পুরুষরাই পুণ্য করতে যেত।
সেই কোন এক পূন্যের ফসল আমি,,,
আর তাই আমার এস এস সি তে গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়া রেজাল্টের মিষ্টি টা কাকেও খেল না।
সবাই আমার নানীকে বলল
মেয়ের কাছ থেকে নাতিন কে আলাদা করলেই কি
ওর গায়ের গন্ধটা আলাদা করতে পারবে?
আমি সবার কথা শুনে গায়ের গন্ধ শুকতাম
সবার চোখে নিজেকে দেখতাম,,,
দেখতাম সত্যি আমার গায়ে এক বিশ্রি গন্ধ
যে গন্ধ এ সমাজে কারো যুবক সন্তানের,
কারো ভাইয়ের, কারো স্বামীর কারো বৃদ্ধ দাদুর।
আমি হতবাক হতাম আর ভাবতাম
ওদের গন্ধ ওরাই চিনলো না?
বরং বলল
আমার মায়ের মতই আমাকে দেহের মাংস কেটে কেটে ভোগ লাগাতে হবে তাদের স্বামী সন্তানের তরে গোপনে।
আমাকে জন্ম দিতে হবে আরেকটি
হাসনাভানু কিবা শ্রীমতির।


কেন  রোমিও?
আমার রক্তের মাঝে কি শুধু পতিতালয়ের রক্ত
এই সমাজের কারো রক্ত নেই?
নাকি সমাজটাই এক গোপন পতিতালয়?
যেখানে পতিতাদের আয়ের উৎসের
জন্ম দেওয়া হয় পবিত্রতার নাম দিয়ে!
আর তাই আমার স্থান হয় না স্কুলে,কলেজে,মন্দিরে,মসজিদে
স্থান হয় কারো চোখের জিহবার রসে
স্থান হয় ডাস্টবিন পাশে কিবা অস্থানে।
আমাকে দেখলে অমজ্ঞলের  শুরু হয় সবার মনে
আমাকে দেখলে শিক্ষক তার বিদ্যা যান ভোলে ।
ডাক্তার ভোলে যান তার চিকিৎসা,
আমাকে দেখলেই গাড়ির ড্রাইবার চাকা দেন থামিয়ে,,
সুশীল সমাজে হয়ে যান বোবা
আমাকে দেখলেই টিভির পর্দায় শুধু বিয়ে বিয়ে খেলা
আর দ্রৌপদীর বস্ত্র হরনের  লাগাতার সিরিয়াল।
আমি মানুষ নই হে পুরুষ,  আমি মানুষ দেহের এক পতিতার পতিত সন্তান
আমাকে ভালবেসে করো না ভালবাসার অসম্মান!
আমার গায়ের গন্ধ যে বড়ই দেহ লোভী
ঘরে ঘরে আছে তার স্বাক্ষ প্রমাণ।
আমি হয়তো তোমারই বোন, তোমাতেই রক্তের বন্ধন
তাই আমাকে শুনাইও না আর ভালবাসার গান।


নিস্তব্দ বাতাস,
দম বন্ধ করা শ্বাসে ছেলেটি তাকালো উপর শুন্যে
কোন আলাদা আকাশ কী আছে  
সেথায় মেয়েটির জন্যে?


----------------------------------------------------------+--
রুবেল চন্দ্র দাস
প্যারিস
০৪/০৭/১৭