স্বয়ং বিশ্বকর্মা নাকি প্রমোটার ছিলেন!
দাম দর সবই স্কোয়ার ফিটে ঠিক হয়েছিল,
সমাজ সেবক পাঁচু, বিশ্বকর্মাকে বলেছিল সিঁড়ি বেয়ে
স্বর্গে যাবার ইচ্ছের কথা!
তাই বিশ্বকর্মা রাজি হয়েছিলো!
স্বর্গের সিঁড়ি বানানোর ভার নিয়েছিল।
কাজ চলছিল বেশ ভালোই,
খরচপাতিও ভালো
প্রথমে সব জমানো অর্থ পাঁচুর খরচ হলো,
তারপর চলল জমি জমা বিক্রির পালা।
আর কিইবা হবে যদি স্বর্গেই চলে যায় পাঁচু!
ঘরেতো কেউই নেই সম্পত্তি দেখাশোনা করার।
তাছাড়া সিঁড়ি বানাতে বেশ খরচা,
বিশ্বকর্মা বেটা আগেই বলেছিল,
এক পয়সা কম হবেনা।
হ্যাঁ যেখানে যত সম্পত্তি ছিল, বিক্রি হতে লাগলো
অনেক দূর কাজও  এগিয়ে চললো।
এভাবে চলতে চলতে তার হাত প্রায় খালি হয়ে গেল।


এবার বসত বাড়ি…
মহা দুশ্চিন্তায় পরলো পাঁচু,  কি করবে,
বিশ্বকর্মাকে ডাকলো, তার অবস্থা জানালো।
বিশ্বকর্মা নাছোড় বান্দা এক পয়সাও কম নেবেনা।
এতো দিন যে পাঁচু রাজার মতো ছিলো,
তার আজ পেটের জন্য বাইরে বেড়াতে হলো।
আবার সিঁড়িটাও অর্ধেক ফেলে রাখা যায়না,
কি করবে, এক মন্দিরের দরজায় এসে বসলো।
চিন্তা রাশি বর্ষার ঘোলা জলের মতো
মনের নদীতে পাক খেতে লাগলো।
মন্দিরের দরজায় পরে থাকতে দেখে
একজন কিছু প্রসাদ এনে দিল।
পেটের জ্বালায় তাই খেলো।
পুরোহিত এসে বলে আরে পাঁচু না?
তা তোর কি হলো?
সব চলে গেছে শুনে পুরোহিত,
মন্দিরে একটা কাজ দিল,
কি করবে আর কোনো উপাই নেই!


বিশ্বকর্মা বেটা বড় গোঁয়ার,
এক পয়সা কম নেবেনা।
একথা কাউকে জানানো চলবেনা,
এটাও শর্ত করিয়েছিল,
পাঁচু মন্দিরের কাজ করে।
উপস্থিত জনতার সেবা করে।
যা পায় ঋণ মেটাতে থাকে।
এভাবে বহুদিন চলার পর
তার শরীর ভেঙে পরতে থাকে।  
কাজ করতে অক্ষম হয়ে পরে।
বাকি পয়সা কি করে শোধ হবে চিন্তা ঘনায়,
দিন রাত সে একমনে ওই মন্দিরের দেবতাকে
মনে মনে ডাকতে থাকে,
তবে মানুষের সেবার কাজ ছাড়েনা,
সবাই মন্দিরের ঘরে বাইরে তাকে খুব ভালোবাসে।


একদিন রাতে কে যেন  ডাকলো,
বললো আমি স্বর্গের দূত!
আয় পাঁচু আমার হাত ধর...
বিশ্বকর্মা জানিয়েছে তোর  ঋণ শোধ হয়ে গেছে,
পাঁচু তোর সিঁড়ির কাজ শেষ।
আয় সিঁড়ি বেয়ে স্বর্গে যাবি আয়!
সিঁড়ির কাজ শেষ হয়েছে শুনে
পাঁচু খুশিতে বিহ্বল।
বললো আজ আমি সার্থক।
দূত বললো,
তোর অর্থ ব্যায় করা এ স্বর্গ সিঁড়ি নয়রে,
এ সিঁড়ির প্রতি ধাপ তৈরী তোর জমানো প্রেম দিয়ে!
যা সমাজের প্রতিটি কোণে তুই ছড়িয়েছিস...
তোর সেবা দিয়ে ধোয়া এ স্বর্গ সিঁড়ির প্রতিটি ধাপ!
যা মানুষকে দিয়ে এসেছিস এতকাল!
পাঁচু চোখের জল মুছে বললো,
কিন্তু আমি আজ এই মানুষের মাঝেই থাকতে চাই।
আজ স্বর্গ মর্ত সব সমান হয়ে গেছে আমার মনে।
আমি মানুষের মাঝে থেকে তাদের সেবা করতে চাই।
একার মুক্তি চাইবো এমন স্বার্থপর আমি নই।
দূত বললেন, তোর ডাক এসেছে ওপারের,
যেতে হবেই তোকে
পাঁচু তার হাত ধরে চলতে লাগলো সিঁড়ি বেয়ে...
শরীর অবসন্ন,চোখে কিছুই দেখতে পেলোনা।
যখন সে পৌঁছুলো  রাতের শেষ, সকাল,
চারিদিকে পুষ্পবৃষ্টি,আলোয় আলো…


কিন্তু সবাই  মন্দিরে কাকে যেন ঘিড়ে রয়েছে
ভিড় সরিয়ে দেখা গেলো  পাঁচু আর নেই
সে ইহলোক ত্যাগ করেছে।