তিনি সুন্দর মিথ্যে বলেন
একবার নয় বার বার
ছাত্র ইউনিয়ন মেনন গ্রপ শহর কমিটির সভাপতি
১৯৬৯ সালে অসহযোগ আন্দোলনে ফরিদুপুর শহরে
ইংরেজী ও উর্দু সাইনবোর্ড, ব্যানার, বিলবোর্ড ভাংগা ও উচ্ছেদ
অভিযানের সময়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ায়
সদর থানার টিএসআই মি. মোমেন কর্তৃক গ্রেফতার হলেন


তিনি বলেন কবিতা লেখার জন্য
নাপাকী মিলিটারীর হাতে
৩ রা ডিসেম্বর একাত্তরে গ্রেফতার হলেন
দু’হাত পিছমোড়া বেঁধে
মেজর বেগ বলেছিলো-
‘তুম তো শের হ্যায়’
পাকিস্তান নিয়া কি কি কবিতা লিখছো বলো ?
পাকিস্তানী কবি আলতাফ হোসেন হালি’র কবিতার সাথে
কবি ইকবালের‘পাকিস্তান হ্যামারা হ্যায় হিন্দুস্তান হ্যামারা হ্যায়,
লক্ষ মানুষ ভূখা হ্যায়, ইয়া আজাদী জুটা হ্যায়’শোনালেন
মেজর বেগ আবার বললো- বলো পাকিস্তান জিন্দাবাদ
তিনি নিশ্চুপ ছিলেন
তারপর আদেশ এলো ‘ওসকো ফ্যান ফর ঝুলা দ্যাও’
একবার পালাতে যেয়ে রাজাকারের হাতে ধৃত
অমানবিক নির্যাতনে ভেঙ্গে গেছে বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি
এগুলো সবই ডাহা মিথ্যা ইতিহাস


তিনি আরো বললেন ফরিদপুর জাদুঘর এবং
সাহিত্য ও সংস্কৃতি উন্নয়ন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতাদের একজন
এগুলোও খুব পুরনো মিথ্যা মনে হলো আমার কাছে


সত্যি সত্যিই তিনি মিথ্যেবাদী
ষাটের দশকে লেখা সত্তরে চারবন্ধুর
‘শব্দের আকাঙ্খায় সূর্য’ মিলিত কাব্যগ্রন্থ
যখন তার এই বন্ধুদের
স্মৃতি কথা লেখার অনুরোধ জানানো হলো
একজন দায়সারা লিখলেও
অন্যরা প্রথমে উচ্ছসিত তারপর নীরব
বুঝলাম মিথ্যেবাদীর বন্ধুরাও একদল নিখুঁত মিথ্যুক


তিনি বলেন বাংলা সাহিত্যে ষাটের দশক থেকে
চলমান সময়ে যারা প্রধান কবি
তিনি তাদের স্নেহভাজন ও বন্ধু
আরো বলেন- বেশী সম্মানী দেবার জন্য
অনেকেরই স্বনামে বেনামে
লেখা ছাপতেন নিজের সম্পাদিত পত্রিকায়
দেখেছি আমি এরা সামনে পড়লেও
ইদানিং এড়িয়ে যায়


চমৎকার লিখেছেন কাব্যগ্রন্থ ‘চমৎকার সাহস’
আর মিথ্যে বলাটাও তার ভারী চমৎকার
তিনি বলেছেন একাত্তরে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির
অনুপ্রাস ইউনিটের আহবায়ক ছিলেন
এটাও সুনিপুণ মিথ্যের মধ্যে একটি


ষাট থেকে চলমান ছয়দশকে কাব্য উন্নয়নে
তিনি সযতনে মিথ্যের চাষবাস করেছেন
এই মিথ্যেবাদীর ছাত্ররা একেকজন চরম মিথ্যেবাদী
আর সত্যবাদী হবার জন্যে দূরে গেলেন যারা
তারা এখন মহান সাহিত্য গাদ্দার বীর দর্পে সাহিত্যের মঞ্চে হাঁটে


বিচিত্র এই বদ্বীপ দেশ
ঘোর সত্যকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সেনাবাহিনীর মেজরকে
‘সাপ্তাহিক বিচিত্রা’য় ঘোষক বানালো যারা
তারা পুরস্কৃত দেশের সর্বোচ্চ কবি সংগঠনে
সমাজ, সংগঠন, রাষ্ট্র পুরস্কৃত ক’রে
তাদের রাষ্ট্রদ্রোহী গাদ্দারীকে হালাল করে
একটি মিথ্যে বার বার বললেই সত্য হয়ে যায়


তৈরী থাকুন একদিন
এইভাবেই মোশতাকী আদর্শের গাদ্দারী হালাল হতে হতে
মুক্তিযোদ্ধা স্বদেশপ্রেমীদের হাতে  
পুরস্কার পেতে পেতে গণেশ উল্টিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের মত
একাত্তরে পাকিস্তানী সৈনিকদের উপর গেরিলা আক্রমণের দায়ে
মুক্তিযোদ্ধারা ফাঁসির মঞ্চে ঝুলবেন
বিশ্ব খ্যাত ক্রিকেটার ইমরান খানের আওয়াজ
মাঝে মধ্যে সেই হুঙ্কারই ছাড়ে


আর সত্যের সংজ্ঞা বদলে যাবে এভাবেই
এ দেশের জন্য ত্রিশ লাখ লোক জীবন দেয়নি
বাঙালী নারী সম্ভ্রম হারায়নি
ওরা ছিলো একাত্তরে গন্ডগোল করা লোক
আর ঐ নারীরা পাকিস্তানী মহৎ যোদ্ধাদের সেবা করেছে মাত্র
একাত্তরের সত্য যা জেনেছি তা নয়
মৌলিক সত্য যা দেখেছি তা নয়
সত্য হচ্ছে তা যা যা দেখবো


তিনি একজন কবি একই সাথে মিথ্যুক
তিনি একজন সাংবাদিক একই সাথে মিথ্যুক
তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা একই সাথে মিথ্যুক
শেখ সামসুল হক একজন শ্রেষ্ঠ মিথ্যুকের নাম
তিনি যা যা বলেছেন কিছুই প্রমান পাওয়া যায়নি
সত্য বললে বাংলা সাহিত্যে তার মূল্যায়ন হতো


ধ্রুব সত্য হচ্ছে এই
রূপালী জলের করাত কাব্যগ্রন্থের
উৎসর্গে তিনি বলেছেন -বন্ধুহীন ভূ-মন্ডল


‘জ্ঞানীরা যেখানে নীরব নিশ্চুপ-
মুর্খ বখিল সেখানে মুখ খোলেন’
সতত সত্য হচ্ছে এই-ই।