পদক, পুরস্কার ও সম্মননা সম্পর্কে ধারণা ছিলো খুবই উচ্চমানের। রাষ্ট্র কর্তৃক ক্রেষ্ট, উত্তরীয়, সনদপত্র ও নগদ অর্থ প্রদান করে সম্মান দেয় স্ব-স্ব ক্ষেত্রে অবদানের জন্য। পদক, পুরস্কার ও সম্মননা নিয়ে কত তামাশা চলছে সাহিত্য ক্ষেত্রে। কাউকে কিছু বলাই মুশকিল। পদকের সাথে বর্তমানে জুড়ে গেছে আর্থিক বাণিজ্য। পদক, পুরস্কার ও সম্মননা বাণিজ্যে কে কাকে দিচ্ছে, কে নিচ্ছে, কেনো নিচ্ছে বুঝাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কোন্ বিষয় কী অবদান রাখার জন্য দিচ্ছে সেটাই প্রশ্ন বিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। সাহিত্য জগতে অনেক গুলো ব্লক আছে। কেউ স্বীকার করুক না করুক। এ সমস্ত ব্লক থেকে বিচার করলে দেখা যায় দু’এক জন ব্যতীত সকলেই আদর্শ বিসর্জন দিয়ে ভিন্ন ব্লক থেকেও পুরস্কার গ্রহণ করছেন। কিন্তু প্রশ্ন জাগে এসব পদক, পুরস্কার বা সম্মাননা দিয়ে কি হয় ? প্রকৃত পক্ষে; লেখালেখির ক্ষেত্রে কতটা অনুপ্রেরণা জোগায় ? হুমায়ুন আজাদ বলেছেন- ‘পুরস্কার একটা দুটা পাওয়া ভালো, কিন্তু বেশী পাওয়া লাম্পট্য’। কবি, সাহিত্যিক বা লেখক ও সম্মানীয় ব্যক্তিদের পুরস্কার দিবে রাষ্ট্র বা রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান। অথবা ব্যক্তি পর্যায়ে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার বা সম্মাননার আদলে যদি সেরকম সম্মান দিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান দেয় তো ভালো সেটা গ্রহণ করা যায়। কিন্তু উল্টো পয়সা দিয়ে পদক, পুরস্কার, সম্মাননা ক্রয় করা কতোটা যৌক্তিক ? ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়েও ব্যবসা শুরু করেছে কিছু কিছু সংগঠন নামধারী আগাছা সংগঠন। এসব সংগঠনের জন্মদাতারা সুবিধামত সময়ে সুবিধামত নাম দিয়ে সংগঠন জন্ম দিয়ে সাহিত্য ব্যবসা করে। বলা বাহুল্য যে, এগুলোতে আবার রাষ্ট্রীয় মান্য ব্যক্তিগণ এবং ব্যক্তি পর্যায়ে অনেকেই এদের পৃষ্টপোষকতা ও আশ্রয় প্রশয় দিয়ে এগিয়ে দেন। তখন যারা সত্যিকার অর্থে সাহিত্য বা কাব্য চর্চা করে সে সকল ব্যক্তি, সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান প্রশ্নবিদ্ধ হয়। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পুরস্কার, সম্মাননা দিবে রাষ্ট্র। কেনো ব্যক্তিকেন্দ্রিক পয়সার বিনিময়ে পদক, পুরস্কার, সম্মাননা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর নাম বিক্রয় করা হবে? আর যারা বিক্রয় করে তাদের সাহিত্য চর্চার ইতিহাস কী ? পূর্বে তাদের সাহিত্য চর্চার ধারায় তারাতো বঙ্গবন্ধু কেন্দ্রিক কোনো সাহিত্য চর্চার সাথে জড়িত ছিলো না কখনো। এসব সাহিত্য ব্যবসায়ীদের কিন্তু আওয়ামী রাজনীতির সাথে যুক্ত কেউ কেউ সহযোগিতা করেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যারা লেখালেখি করে তাদের অনেকেরই মনে এ প্রশ্ন জাগে। গত পাঁচ বছরে এত সংগঠন সৃষ্টি হয়েছে এরা কারা ? এত রাতারাতি আওয়ামী সাহিত্য চর্চায় এত সংগঠন কীভাবে তৈরী হয়ে গেলো ? এদের চেহারাতো দেশের দুর্দিনে দেখা যায়নি।
মাঝে মাঝে ফোন পেতাম আপনাকে পদক দেয়া হবে। অনেকে সরাসরিও পদক, পুরস্কার ও সম্মাননা দেয়ার প্রস্তাব করে। তখন বলি আমার লেখা পড়েছেন? বলে হ্যাঁ আপনার লেখাতো খুবই ভাল, সবাই আপনার কত প্রশংসা করে। আমি নির্বিকার চেয়ে থাকি এসব লোভী মুখরা মুখের দিকে। আহলাদে গদ গদ হয়ে সম্বোধনের লেভেলটা আপনি থেকে তুমিতে নামিয়ে এনে সম্পর্কটা খুব কাছের করার ঋদ্ধ কৌশল প্রদর্শন করে। আমি জানি এসব লোক পড়া লেখার সাথে যুক্ত থেকে সাহিত্য চর্চা করে না। কবি, সাহিত্যিক বা লেখকের বই না পড়ে, লেখা না পড়ে দিব্যি প্রশংসা শুরু করে দেয় পদক, পুরস্কার ও সম্মাননা বিক্রির জন্য। যারা এসব ক্রয়কৃত পদক, পুরস্কার গ্রহণ করেন তাদের পদক, পুরস্কারের তালিকা দেখলে আর মানসম্মত লেখা খুঁজলে পিলে আৎকে উঠবে। পদক, পুরস্কার ও সম্মাননা নিতে রাজী হলে ন্যূনতম দুইশত থেকে ২০ বা ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত এসব দাম ওঠে। কবি, সাহিত্যিক ও সম্মানীয় ব্যক্তি টাকা দিয়ে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন। এরা কিন্তু সকলেই কম বেশী শিক্ষিত। পুরস্কার হিসাবে দেখা যায় একটা সনদপত্র, একটা ক্রেস্ট কখনো কখনো একটা উত্তরীয় পান। নগদ অর্থ পাওয়া দূরের কথা; দিয়েই কূল পায় না। কিন্তু হাতে গোণা দু’একটি সংগঠন আছে যেখানে এসব পুরস্কারের সাথে রাইটারকে উল্টো নগদ অর্থ প্রদান করে। এই ধরণের সংগঠন কিন্তু রাইটারের কাছ থেকে কোনো অর্থ গ্রহণ করে না।
আমি এ যাবৎ যখন যেখানে সাহিত্য ক্ষেত্রে পুরস্কারের জন্য আবেদন প্রকাশ করেছে; তাতে অনেক জায়গায় বই পত্র পাঠিয়েছি। যেমন - আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন সাহিত্য পুরস্কার, প্রথম আলো সাহিত্য পুরস্কার, আইএফআইসি ব্যাংক পুরস্কার ইত্যাদি।  না এসব জায়গা থেকে কোনো উত্তর পাইনি। হয়ত আমার চেয়ে সমৃদ্ধ লেখা ছিল মনে করি। তবে বিস্মিত হয়েছি। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯২তম জম্মবার্ষিকী উপলক্ষে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় যশোর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়িতে ২২ জানুয়ারি,২০১৬ সপ্তাহব্যাপী মধুমেলা সমাপনী অনুষ্ঠানে দু'জন গবেষককে প্রধান অতিথি বাংলা একাডেমির চেয়ারম্যান ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান ও খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের সভাপতিত্বে  কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মনজুর রহমান প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা কাব্য : শব্দের বিবর্তন-বৈচিত্র' গবেষণা গ্রন্থের জন্য এবং ঢাকা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক কাবেদুল ইসলামের 'রবীন্দ্র ছোট গল্পে জমিদারি প্রসঙ্গ :অনুষঙ্গ' গ্রন্থের জন্য ২০১৬ সালের মহাকবি মধুসূদন পুরস্কার পান। মাইকেল মধুসূদন কাব্য সাহিত্যের মান্নোয়ন করেছেন। তিনি আধুনিক যুগের শুরুর ভাগের কবি। তাই আমরা কয়েকজন কবিতায় বিজ্ঞান সমন্বয় করে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করছি নিশ্চয়ই বিচারক মন্ডলী এই বিষয়টি বিবেচনায় নিবেন মনে করেছিলাম। মাইকেলের সাহিত্য ঘিরে কোনো গ্রন্থ থাকলে পুরস্কারের জন্য অগ্রগন্য হবে এটি পুরস্কারের একটা শর্ত ছিলো। যদিও এইরকম কোনো বই পুরস্কৃত হয়নি। আমার কবিতার বইর সাথে আরো ৩/৪ জনের কবিতার বইও সেখানে পাঠানো হয়েছে। আলাওল পুরস্কারটি শুনেছি কোনো একটা আর্থিক জটিলতায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আইএফআইসি ব্যাংক পুরস্কার পেয়েছে ২০১৫ সালে পাঁচজন গবেষক, কবি খুঁজে পায়নি। আমরা কয়েকজনও কবিতার বই জমা দিয়েছিলাম। অন্য গুলোর সম্পর্কে আর ভাল জানিনা। আমি লেখালেখির জন্য দুটো সম্মাননা পেয়েছি একটি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল স্মৃতি ফাউন্ডেশন অন্যটি সাপ্তাহিক শারদীয়া কাব্যলোক বিশেষ সম্মননা -২০১৪। একটাতে ক্রেস্ট ও সনদ, অন্যটিতে শুধুই সনদপত্র। এর কোনোটি পাওয়ার আগে আমি জানতে পারিনি। আমাকে কোনো অর্থ দেয়া হয়নি আর এর জন্য আমি নিজেও কোনো অর্থ দেইনি বা লবিং করিনি। পাবার আগের দিন আমাকে ফোনে জানানো হয়েছে। কলকাতা থেকে একেক দল বাংলাদেশে আসে, বাংলাদেশ থেকেও এরকম দল কলকাতায় যাতায়াত করে পদক, পুরস্কার ও সম্মাননার জন্য। অনেকেই বেশ অর্থের বিনিময়ে এদের নিয়ে যায় এবং নিয়ে আসে। সাহিত্য নিয়ে কী সুন্দর পুঁজিহীন ব্যবসা! দেখার কেউ নেই ! সাহিত্য সন্ত্রাসীরা গোটা সাহিত্য জগতকে কলুষিত করছে। ভালদের সাহিত্য চর্চায় এরা প্রতিযোগিতায় সমৃদ্ধ সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে অন্তরায় তৈরী করছে।
কখনো কখনো প্রতিবাদ করে পদক নিতে হয় বা প্রতিবাদ যথার্থ হয়ে দেখা দেয়। এই রকম কবি নির্মললেন্দু গুণের ক্ষেত্রেও হয়েছে। স্বাধীনতা পদক না দেয়ায় প্রতিবাদ করে আদায় করে নিতে হয়েছে। ২০১৪ সালে গণভবনে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে আর্থিক সহায়তার চেক নেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। কবি নির্মলেন্দু গুণের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অনেক কবিতাই মানুষের মুখে মুখে ঘুরে চর্চিত। বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলন যখন তুঙ্গে, সে সময় তার লেখা ‘হুলিয়া’ দারুণ জনপ্রিয় হয়। ওই কবিতায় ‘আইয়ুব খান এখন কোথায়? শেখ মুজিব কি ভুল করছেন?’ প্রশ্নের মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্খাকেই ফুটিয়ে তোলেন কবি। পরে ‘শেখ মুজিব ১৯৭১’, ‘সেই রাত্রির কল্পকাহিনী’, ‘স্বাধীনতা- এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’, ‘আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি’ প্রভৃতি শিরোনামে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ককে নিয়ে কবিতা লিখেছেন গুণ।  সত্তরের উত্তাল সময়ে যার কবিতা ছড়িয়েছিল মুক্তির আকাঙক্ষা সেই কবি নির্মলেন্দু গুণ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন স্বাধীনতা পদক না পাওয়ায়। ‘আমাকে স্বাধীনতা পদক দিন?’ শিরোনামে এক পোস্টে কবি লিখেছেন, ‘আমার একদা সহপাঠিনী, বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার দৃষ্টে আমি প্রথম কিছুকাল অবাক হয়েছিলামÑ কিন্তু আজকাল খুবই বিরক্ত বোধ করছি। অসম্মানিত বোধ করছি। ক্ষুব্ধ বোধ করছি।’ ২০১৫ সালে আর্টস ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নির্মলেন্দু গুণ ‘ছাত্রজীবনের বন্ধু’ শেখ হাসিনার সঙ্গে মান-অভিমানের প্রসঙ্গেও বলেছিলেন। একই মাসে আবিষ্কার সাহিত্য পুরস্কার নিতে গিয়ে কবি বলেন -‘পুরস্কার সব সময়েই  আমাদের জীবনে বার্তা নিয়ে আসে। জাতীয় প্রেসক্লাবে সেদিনের অনুষ্ঠানে গিয়ে বলেছেন- কৃষক ফসলের চারা রোপণ করে শস্য ঘরে তোলার স্বপ্ন ও আশা নিয়ে। আমরাও যারা সত্তরোর্ধ্ব বয়স তাদের ঠিক সেই কৃষকের মতো অবস্থা। আমরা যা করেছি, তারই ফল হয়তো এই পুরস্কার।’ তিনি লন্ডনের বাংলা কবিতা উৎসব ২০১২-তে যোগ দিতে যাবার আগে যে লর্ড ক্লাইভের দেশ ভ্রমণ করতে যাচ্ছি বলে যে মন্তব্য করেছেন তাতে অনেকেই মতামত ব্যক্ত করেছেন গুণ স্বাধীনতা পদকের যোগ্য নয়। ভারতে ক্লাইভের ব্রিটিশ উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা আর মার্ক্সের শোষনমুক্ত পৃথিবী প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন - এই দুয়ের প্রতিই দরদে তরল হৃদয় বাঙালী এই কবির। এক যুগ আগে রবার্ট  ক্লাইভের দেশ ভ্রমণ করে বেশ ভালো লেগেছিলো এবং আবারও তাঁর দেশে যাচ্ছেন ভেবে ভালো লাগছে বলে নির্ধিদ্বায় ঘোষণা করেন স্বাধীন বাংলাদেশের কবি নির্মলেন্দু গুণ। অথচ তিনি বাংলার ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ধারীদের অন্যতম কবি! বিশ্বজোড়া কবি-সাহিত্যগণ ইংল্যান্ডের প্রতি যে-কারণে আকর্ষণ বোধ করেন, তা হচ্ছে কাব্যে ও সাহিত্যে দেশটির ঐতিহ্যের জন্যে। ইংল্যান্ডের  বেনিয়াবৃত্তির ঐতিহ্যের জন্য নয়। তাই এটিই স্বাভাবিক যে, কোনো দেশের কোনো  কবি যদি ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য কোনো কবিতা উৎসবে যোগ দেবার নিমন্ত্রিত হন, তাতে তিনি প্রধানতঃ আকর্ষণ বোধ করবেন শেকসপীয়ার, বায়রন, শেলী, কীটস, ওয়ার্ডওয়ার্থের জন্য- কোনো দস্যুবৃত্তির চরিত্র সম্পন্ন সৈনিকের জন্য নয়। বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ পাকিস্তানের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নির্যতন ভোগ করেছিলেন। কিন্তু বাঙালীর উপর পাকিস্তানী গণহত্যার প্রতিবাদ করে তিনি মানুষ ও কবি হিসেবে  বিশ্ববিখ্যাত হয়ে আছেন।


কবি গুণ না হয় কুমির মার্কা স্বতন্ত্র প্রতীকে একটা নির্বাচন করেছে। আর এতে ৫২টি ভোট পেয়েছে। তাই বলেতো স্বাধীনতা পদকের তালিকা থেকে নাম বাদ পড়তে পারে না। গুণের স্বাধীনতা পদক প্রাপ্তি ছিল স্বাধীনতার কবিতার জন্য যথার্থ। উদার মানসিকতা থেকে কবি গুণকে স্বাধীনতা পদক দেয়ার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ। স্বাধীনতার বিষয়ে কবি গুণ সবচেয়ে বেশী ও মানসম্মত কবিতা লিখেছেন। রাষ্ট্রীয় পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা জীবদ্দশায় না পেলে মৃত্যুর পর যারা গ্রহণ করে; তারা যথার্থ ব্যক্তির যে পরিতৃপ্তি সেটি কখনো উপলব্ধি করতে পারে না। আর ব্যক্তি নিজে জীবদ্দশায় পেলে তার আত্মতৃপ্তিটা অবশ্যই অন্যরকম। যা অর্থের মূল্যে মূল্যায়ণ সম্ভব নয়। অনেককেই রাষ্ট্রও দেয় আবার বেসরকারী প্রতিষ্ঠানও দেয় নিজেদের প্রচার প্রসারের জন্য। কিন্তু এমন অনেক ব্যক্তি আছেন যাদের দেয়া উচিত বা পাওয়া উচিত। এমন অনেকেই আছেন যারা কাজ করে যাচ্ছেন কোনো নাম বা প্রচার প্রসারে রাজনীতিকে ব্যবহার করেন না। তাদেরকে অনেকেই চোখে দেখে না। এ ধরণের ব্যক্তিদের রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি নেই। এরা দেশ, মা, মাটিকে ভালবেসে সাহিত্য সেবা করে যাচ্ছেন নীরবে। সাহিত্য ক্ষেত্রে জাতীয় কবিতা পরিষদ সরকারের আর্শীবাদ পুষ্ট হিসাবে কিছু সুবিধা পায়। কিন্তু বেসরকারী পর্যায়ে সাহিত্যকে নিরলস সেবা দিয়ে যাচ্ছে ব্যক্তিগত উদ্যোগ থেকে এদের মধ্যে অনুপ্রাস জাতীয় কবি সংগঠন ৪ঠা সেপ্টেম্বর, ১৯৮৬ সাল থেকে ৩১ বছরে চলমান। এই প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা সারাদেশ সহ বিদেশে নিয়মিত সাহিত্য চর্চা করছে এবং অনেকেই জাতীয় কবিতা পরিষদের কাজের সাথে সম্পৃক্ত। অনুপ্রাসের নির্বাহী সভাপতি কবি ও সাংবাদিক শেখ সামসুল হক। যিনি ১৯৭১ সালে কবিতা লেখার দায়ে পাকিস্তান আর্মির হাতে গ্রেফতার হয়ে নির্যাতিত হন। আবার এরশাদের কবিতার আড্ডায় যোগদান না করায় নানামুখী চাপে পড়ে বাধ্য হয়ে ১৩ আগস্ট, ১৯৮৯ সালে চাকুরী থেকে অব্যাহতি নেন। আবার রফিক আজাদের ‘ভাত দে হারামজাদা’ কবিতার সমালোচনা লিখেও গ্রেফতারী পরোয়ানা মাথায় নিয়ে ৩ বছর ফেরারী জীবন যাপন করেন। দেশের সংকটময় মুহূর্তে আন্দোলনে এগিয়ে গেছেন সব সময়। ১৯৯২ সালে ঘাতক দালল নির্মূল কমিটিকে প্রথম যে সংগঠন সমর্থন দিয়ে মিছিলে নেমেছে সে সংগঠন অনুপ্রাস জাতীয় কবি সংগঠন। অসংখ্য ছবি ও পত্রিকার নিউজ আছে সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের কাছে। বাংলা একাডেমীর পূর্ব পার্শ্বে রমনা পার্কের অংশে তৎকালীন ‘অনুপ্রাস চত্তর’ নামে একটি স্থান চিহ্নিত হয়েছিল; যেখানে প্রতিদিনই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে কবিতা পাঠ হতো। যখন হাতে গোণা দু’একটি সংগঠনই কেবল নিয়মিত সাহিত্য চর্চায় নিয়োজিত ছিল। অন্যদিকে ম্যাজিক লন্ঠন ১৬ বছরে চলমান। এটি পরিচালনা করেন কবি রতন মাহমুদ। দুটি প্রতিষ্ঠানের মূল কেন্দ্র বিন্দু হিসাবে দুজন ব্যক্তি তৃণমূল কবি/ সাহিত্যিকদের জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সাহিত্য সংস্কৃতির মূলভিত্তি কিন্তু তৃণমূলেই একথা অনস্বীকার্য। রাষ্ট্রীয় কোনো রকম পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই সদস্যদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। না এরা কোনো রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পাবার আশায় বাংলা সাহিত্যের সেবা করে না। আবার সরকারের অতিরিক্ত সুবিধাভোগী অনেকেই নিজেদের ভাগে কম পড়ে কি-না সেজন্য এসব সংগঠন সম্পর্কে নানামত পোষণ করেন। আবার অনেককেই দেখা গেছে ১৯৬৯,৭০ ও ৭১ সালে পাকিস্তান সরকারের পক্ষে কাজ করেছে। তারা পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকেও পদক বা সম্মাননা পেয়ে সম্মানিত হয়েছেন। আবার বাংলাদেশ সরকার গঠিত হবার পর সময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকেও পদক, সম্মাননা, মাসোয়ারা বা সুবিধা পেয়েছেন। পাকিস্তান সরকারের পক্ষাবলম্বন করা অনেক কবির পরিবার এখনো আর্থিক সুবিধা পেয়ে যাচ্ছেন। সনেটিয়ার কবি সূফী মোতাহার হোসেনের পুরস্কার নিয়েও অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন মহলে। কবি সূফী মোতাহার হোসেন সনেট রচনা করে আদমজী পুরস্কার-১৯৬৭ সালে, বাংলা একাডেমী পুরস্কার-১৯৭৪ সালে এবং ১৯৭১ সালের ১৪ আগস্ট, পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে প্রেসিডেন্ট পুরস্কার পেয়েছেন এবং তার পরিবার এখনো আর্থিক সহায়তা পান। সেই সাথে প্রতিবছর তার স্মরণে অনুষ্ঠানের জন্য নির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে বা হচ্ছে।  তৎকালীন জোট সরকার আমলে ২০০৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্রের বেসামরিক সর্বোচ্চ সম্মান মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়া হয়। সরকারের ওই পদক্ষেপ জিয়াকে ওপরে তোলার চেষ্টা হিসেবে দেখে জাতির জনককে অবমাননার তীব্র সমালোচনা তখন করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও ওই সময় পদক প্রত্যাখ্যান করা হয়। এমনকি বঙ্গবন্ধু পরিবার বা দলের পক্ষ থেকে কেউ পদক গ্রহণ করেননি। পরে ওই বছর স্বাধীনতা পদক দুই পরিবারের কোনও উত্তরাধিকারের হাতে হস্তান্তর না করে সংরক্ষণের জন্য জাতীয় জাদুঘরের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর থেকেই পদক দু’টি জাদুঘরে রয়েছে। ২০০৩ সালে দেয়া এ পদক জাদুঘরের গ্যালারিতে প্রদর্শন করা হলেও পরে তা গ্যালারি থেকে সরিয়ে স্টোর রুমে রাখা হয়। পদক সংক্রান্ত কমিটির সিদ্ধান্তে মিউজিয়ামে কর্নারটি থাকবে না। ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ তারিখে স্বাধীনতা পদক বাতিল করা হলো। বাতিলের তালিকায় অনেকেই আছে। শর্শিনার পীরকেও স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়া হয়েছে। মাঝে মধ্যে এই পুরস্কার বাতিলের কথা ওঠলেও তা এখনো হয়ে ওঠেনি। সেগুলোও দেখা দরকার। আবার অনেকেই বাংলা একাডেমী পুরস্কার পেলে একুশে পদকের জন্য উঠে পড়ে লেগে যাচ্ছেন, অনেকে বাংলাএকাডেমী, একুশে পদক পেলে আবার স্বাধীনতা পদকের জন্য উঠে পড়ে লেগে যান। আর কেউ কেউ এর একটিরও যোগ্য হয়ে উঠে না। বিষয়টি দেখা দরকার সংশ্লিষ্ট বিচার বিশ্লেষকদের। অনেকেই বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় অভিযোগ তুলেছেন খান টিউটোরিয়ালের প্রধান মনসুর আলম খানের একুশে পদক নিয়ে। বলছেন বাংলা ভাষা এবং এর শিক্ষা বিস্তারে খান তার কোচিং সেন্টারটির মাধ্যমে কি সেই মহৎ কর্মগুলো করেছেন। বাঙালি গরীব এবং মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা খান টিউটোরিয়াল থেকে বিনামুল্যে বা নামমাত্র টিউশন ফি দিয়ে পড়াশুনা করার সুযোগ কখনো পেয়েছেন কি? একজন টিউটোরিয়ালের মালিক একুশে পদকের মতো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদকটি পেলেন? ২০১২-তে শিক্ষার জন্য পদক পেলেন নিউইয়র্কের খান টিউটোরিয়ালের প্রধান মনসুর আলম খান। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি স্মরণে ১৯৭৬ সালে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদক চালু হয়। বাংলা ভাষা, বাংলা সাহিত্য, বাংলা সংস্কৃতি, শিক্ষার প্রসার এবং উন্নয়নে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এই সম্মাননা। এর মান কি প্রশ্ন বিদ্ধ হতে থাকবে ?
পদক নিয়ে ফেসবুক -এ একটি পোস্ট ছিল এইরকম- সরকারই স্বর্ণ পদক নির্ভেজাল দিতে পারে নাই। ব্যক্তি উদ্যোগে যারা দিচ্ছে তারাতো শত ভাগই জাল জালিয়াত। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা কে নেবে ? কেনোইবা নেবে ? গ্রহীতারাওতো বজ্জাত’। এই পোষ্টে মন্তব্য করেছেন অনেকেই কয়েকটি এই রকম- মারজান  নামে একজন বলেছেন-পদক দেয়ার দায়িত্ব পেলে আমি ভেজালের পরিমাণ কমাতে পারবো। হুমায়ুন কবীর বাপ্পী -যেখানে সর্ষের মধ্যে ভূত সেখানে ভূতের বিচার কে করবে ? বিনয় কর্মকার - কবি, ব্যক্তি উদ্যোগে সংগঠন করে আজকাল জাতীয় সনদ, পদক দিচ্ছে। নিচ্ছেও কেউ কেউ। কয়েকজন মিলে চাঁদা দিয়ে কি জাতীয় শব্দটি ব্যবহার করা যায় ? হাসনাইন সাজ্জাদী আবার মন্তব্য করেছেন- এরা শিল্প সাহিত্যের শত্রু। আজকাল দু’একটি কবিতা লিখে সবাই কবির খাতায় নাম লিখেই পদক ক্রয়ের জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে যায়। তাদেরকে কিছু বলাই যায় না, তাদের তখন খুব উদার মন্তব্য বের হয়। বলে যে, যারা সংকীর্ণ তারাই এসব নিয়ে জেলাসি করে। অর্থাৎ কেনা পদক নিয়েও কিছু বলা যাবে না। তাহলে আপনি সংকীর্ণ মনের উপাধি পেয়ে যাবেন। আবার কলকাতা থেকে আনলে তো কথাই নেই। বাহবা দিয়ে বলে ভারতের পদক। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ সেখানে সাহিত্য চর্চা আর কলকাতা ভারতের প্রদেশ হলেও সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্র কিন্তু এক নয়। তারা এখনো ভারতের হিন্দী ভাষার সঙ্গে বাংলার লড়াই করছে। অর্থাৎ যা বাংলাদেশ ১৯৫২ সালে অর্জন করেছে। আর এখন বাংলাদেশের সাহিত্যে বিজ্ঞান সমন্বয়ের জোয়ার বইছে। ফেসবুক মিডিয়ার সেখানে যে চিত্র দেখা যায় বা জানা যায় তাতে আমার মনে হয় কলকাতায় বাংলা ভাষাভাষীরা হিন্দী ভাষা অধ্যুষিত অঞ্চল থেকে পিছিয়ে আছে। বাংলা ভাষা বাংলা অঞ্চলে চর্চা হচ্ছে যেটা খুব স্বাভাবিক। সেখানে বাংলা সুন্দর চর্চা হচ্ছে বা এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ছড়িয়ে যাচ্ছে না অন্যান্য ভাষা ভাষী অঞ্চলে। সেখানে ধর্মীয় গোড়ামী নিয়ে রেষারেষি বিরাজমান। বাংলা কবিতার মান্নোয়নে বিজ্ঞান সমন্বয় করে কবিতা চর্চায় অনুপ্রাস জাতীয় কবি সংগঠনের ভূমিকা উজ্জ্বল। অনুপ্রাস নিয়মিত সাহিত্য আড্ডায় ছন্দ, ব্যকরণিক কলা কৌশল সহ কবিতার গাঠনিক দিক চর্চা করে থাকে। আর এই ধারাবাহিকতায় কবিতায় বিজ্ঞান সমন্বয় করে কাব্যসাহিত্য ও প্রবন্ধ সাহিত্যে নতুনত্ব এনেছে। ফলত: এখন কবিরা কবিতা নিয়ে বিজ্ঞান প্রবন্ধ ও বিজ্ঞান কবিতা লিখছে।


পদক, পুরস্কার ও সম্মাননা বাবদ ক্রেষ্ট, সনদপত্র ও কখনো কখনো উত্তরীয় দেয়া হয়। কিন্তু ক্রেষ্ট ডিজাইন সিম্বল অনেক সময় খুব অদ্ভূত রকমের দেখা যায়। লিখিয়েদের ক্রেষ্ট সাধারণত বই, কলম এজাতীয় সিম্বল ব্যবহার হবে এটাই স্বাভাবিক। সেখানে যাকে দেয়া হবে তার নাম, কোন বিষয়ে অবদানের জন্য দেয়া হলো তা উল্লেখ থাকবে আর যে প্রতিষ্ঠান দিচ্ছে সে প্রতিষ্ঠানের নাম বা লোগো থাকতে পারে। এর কিছুই উল্লেখ থাকে না। শুধু দেখা যাকে দিচ্ছে তার নামটাই হয়তো থাকে। কিন্তু কোনো কোনো ক্রেষ্টের ডিজাইন এমন অদ্ভূত ধরণের নাট্য ও অভিয়ের ক্ষেত্রে নাচের মুদ্রা সিম্বল, অনেকে ঈগল পাখি, অনেকে ক্যাঙ্গারু খচিত নানা রকম সিম্বল। এখনো কোনো দেশের মনোগ্রাম হলে অন্য কথা। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃত যে সকল পদক, পুরস্কার ও সম্মাননা দেয়া হয় যেমন- একুশে পদক, স্বাধীনতা পদক, বাংলা একাডেমী পুরস্কার, আলাউল সাহিত্য পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পুরস্কার, বেগম রোকেয়া পদক, জাতির পিতা নামে রাষ্ট্রীয় পদক, এই সকল পুরস্কার যারা পেয়েছেন সে সকল ব্যক্তিদের নামে কোনো পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা, বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবি / সাহিত্যিকদের নামে কোনো পদক, পুরস্কার, সম্মাননা বেসরকারী ভাবে দেয়া বন্ধ করা দরকার। যারা বিখ্যাত হয়ে আছেন বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ, সুকান্ত, মাইকেল মধুসূদন, বেগম রোকেয়া সহ বর্তমান সময় পর্যন্ত এদের নামে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পুরস্কার দিবে। কেননা এরা বিখ্যাত হয়েই আছেন। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এদের আর কি পরিচিত করাবে। এদের নিয়ে বেসরকারী পর্যায়ে ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা ও দেয়া বন্ধ করা উচিত। কেউ দিলে সেটি রাষ্ট্রীয় অনুমোদন সাপেক্ষে দিতে পারে। অথবা একটা সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। অনেক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান সাহিত্য ব্যবসা করে সাহিত্যকে কলুষিত করছে। সাহিত্য সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে এসব পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা অন্তরায়। এতে করে মেধাবীরা সাহিত্য চর্চায় খাপ খাওয়াতে পারে না। সাহিত্য ব্যবসায়ীদের অস্বাভাবিক আচরণ, পদক, পুরস্কার, সম্মাননা নিয়ে দরদাম করা এবং তাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতায় তারা সাহিত্য জগতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।


১৯৬৪ সালে ফরাসি সাহিত্যিক এবং দার্শনিক জাঁ পল সার্ত্রে সাহিত্যের সর্বোচ্চ খেতাব নোবেল পুরস্কার বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কিন্তু তাতে দার্শনিক এবং সাহিত্যিক সার্ত্রের কিছুই যায় আসেনি। একটি পদকই একজন শ্রেষ্ঠ মানুষের স্বীকৃতির শেষ সীমানা হতে পারে না। মানুষের মহৎ কাজ আজীবন স্মরণীয় করে রাখার জন্য উপযুক্ত স্বীকৃতি, কৃতজ্ঞতা এবং সম্মাননা জানানোর জন্য দরকার উপযুক্ত আয়োজন। কবি বদরুউদ্দীন উমর ভাল কবিতা লিখতেন কিন্তু তাকে কবিতায় পুরস্কার না দিয়ে ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার দেয়া হয় তিনি তা সাথে সাথেই প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি ইতিহাস পরিষদ পুরস্কার পান এবং সেটাও প্রত্যাখ্যান করেন। তাতে কিন্তু সম্মান কমে যায়নি বরং তিনি ইতিহাস হয়ে থাকলেন। সাহিত্য ব্যবসায়ীদের পদক বাণিজ্যের কবল থেকে বাংলা সাহিত্যের মুক্তি ঘটুক। পদক, পুরস্কার ও সম্মাননা স্বচ্ছ হোক। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি গুলো সঠিক গুণীরা পাক। সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।