জুম(09-06-21)
রণজিৎ মাইতি
--------------------
ফটোগ্রাফির শখ আমার আজন্ম;
রাতপেঁচা এবং বহুরূপী দেখলেই স্বতস্ফুর্ত ঝিলিক মারতো স্বয়ং ঈশ্বরের দেওয়া নিজস্ব ফ্ল্যাশলাইট।
কারণ তখনও বাজারে সুলভ নয় মেগাপিক্সেল ক্যামেরা
তাছাড়া কোডাক ব্যবহারের উপযোগী ফাগুনও আসেনি এই অনন্তে।


তবে গ্যলারিটি ছিলো গ্যালাক্সির মতো টু দ্য ইনফিনিটিভ;
সেই ভরসায় হাত পাকাতাম ঘাসের উপর বসা অকিঞ্চিৎকর গঙ্গাফড়িং থেকে আকাশের বুকে বিলিয়মান হাতি দেখলেই।
একবার একটা ঝিঁঝিঁ পোকার পেছনে ছুটতে ছুটতে হাত ঝিন্ ঝিন্ করছিলো।
দাওয়াই,চিমটিতে সে যাত্রায় উপশম হলেও হাল ছাড়িনি;
গোঁফের রেখা স্পষ্ট হওয়ার আগেই একবার উৎসাহের আতিশয্যে স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরাটি তাক করেছিলাম পড়শি অনির্বাণ কাকুর বাগানে
টিনেজ সুজাতা নাম্মী গোলাপটি তখন টগবগ করে ফুটছে।
সবে মেলছে তার এক একটা পাঁপড়ি ভোরের আলোয়
আর পাঁপড়ির উপর জমা এক একটা শিশির বিন্দু রবিকরোজ্জ্বলে করছে চকচক
আমার শৈল্পিকমন তড়িৎ গতিতে ক্যামেরার সাটার সরিয়ে খচ্ খচ্ খচ্
অবশ্য সুজাতা নিতে পারেনি ফ্ল্যাশলাইটের চড়া আলো ও দু-দুটি লেন্সের মুগ্ধতা
তাই কখনও পায়েসের বাটি হাতে দাঁড়ায়নি এই বুদ্ধুর মুখোমুখি
বলেনি আমিই তোমার সেই হৃদয়েশ্বরী,'বনলতা সেন'।
বরং ওর বাবার রক্তচক্ষু দেখে বুঝেছিলাম ফুটন্ত টাটকা তাজা গোলাপটি ওপেন ফোরামে কতোটা দক্ষ


অবশ্য বিষয়টি আমার বিচক্ষণ বাবা মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে উড়িয়ে দিয়েছিলেন;
পূর্বের মতোই ছিলেন শান্ত ও নির্লিপ্ত।
জানতেন জাত শিল্পীদের চোখ থাকে সুন্দরে;
মৌসুমীমন গোলাপ পাঁপড়িতে জমে ওঠা শিশিরবিন্দুকে সিন্ধু জ্ঞান করেন
এবং তার ভেতর দেখতে পান বিম্বিতসূর্য;
যেমন দেখেন শিকরের ভেতর আলোর বিচ্ছুরণ


তাই মাধ্যমিক পাশের পর পরই উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন হাই মেগাপিক্সেল ও হাই রেজল্যুশন স্মার্টফোন।
স্মার্টলি আমিও ডুবে গেলাম উদাসপুরে;
লাইট-সাউণ্ড-ক্যামেরা-অ্যকসানের মায়বী জগতে।
জানতাম শীতঘুম কখনও চিরকালীন নয়;
আবহমানের হাত ধরে আসে চক্রবৎ ঋতু।
চক্রবর্তী ব্রাহ্মণ হিসেবে মেগাপিক্সেলের পুরোহিত ইচ্ছেঘোড়ার লাগাম নিজের হাতে নিয়ে টগবগাবগ দে-দৌড়।
পাহাড়-জল-জঙ্গল যেখানে যাই ফোনটি হলো অন্তরঙ্গ সাথী
কখনও নায়াগ্রা,কখনও আফ্রিকার ভয়াল গভীর গহীন অরণ্যে
কিংবা উষর সাহারার তপ্ত বালুকণায়।
তৃষিত শৈল্পীকপ্রাণ দিনদিন হয়ে ওঠে চাতক;
হু হু বয়ে যাওয়া বাতাসের প্রতিকূলে গা ভাসিয়ে হতে চায় আধুনিক একলব্য;ভীমসেন যোশী থেকে গড়পারের স্বনামধন্য হীরে-মানিক।
শিখেরর চুম্বকীয় টান এতোটাই অমোঘ একাত্মবোধ করেন;
হারিয়ে যান তুষার বিচ্ছুরিত আলোক রশ্মিতে।
আপাত রঙিন জগতের ছবি কতোটা বিবর্ণ তা ধরা পড়ে এই আনকোরা ফটোগ্রাফারের স্বচ্ছ স্বাধীন লেন্সে।
যে মানুষটি অধস্তনদের কাছে শের ই সুন্দরবন,সেই মানুষটি তাঁর উর্দ্ধতনের কাছে মহিলতা !
মহীরূহ হওয়ার বাসনায় শেরপা তেনজিং নোরগের মতো আচারনিষ্ঠ যজমান।
যদিও পদানত তেল চকচকে ইন্দ্রলুপ্ত জুড়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম,শিরদাঁড়াটি ঠিক ভূলুন্ঠিত স্বর্ণলতা !


অবাক হওয়ার আগে ঝলসে ওঠে আবারও সেই ফ্ল্যাশলাইট;
জুম করতেই স্পষ্ট হয় নীললোহিত অঙ্কিত নীলরাত্রির ভোর ও বিষণ্ন শ্রাবনসন্ধ্যা !
আশির শিল্পী তখনও আঠারোর মতো স্বচ্ছ, তরতাজা ও হরিৎ।
যার দুই মুগ্ধ কণিনীকা জুড়ে অনাবিল উদাসীন স্পার্ক !